প্রকাশিত : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।। ৬ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর – মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে।। দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বিস্তৃত মাঠজুড়ে আলু রোপণ শুরু হয়েছে। উপজেলাজুড়ে বিশাল এই কৃষি কর্মযজ্ঞে শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক মাঠে কাজ করছে। বাড়িতে নারীরা বীজ আলু কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। আগামী এক মাস ধরে চলবে আলুর রোপণ। তবে বীজ সংকটের পাশাপাশি চড়া মূল্যে বীজ ও সার ক্রয় এবং বেশি দামে জমি ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। গত মৌসুমে আলুর বাজার মূল্যে লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার চড়া দামে বীজ আলু ও জমি ভাড়া নিয়ে বেশ উৎসাহ ও হতাশা নিয়ে কৃষকরা আলু চাষ করছেন বলে জানান।
খাল দখল-ভরাটে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে বর্ষার পানি আটকে থাকায় এ বছর আগাম আলু চাষাবাদ ব্যাহত হয়।
চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গাঁওদিয়া, খিদিরপাড়া, বৌলতলী, কলমা ইউনিয়নের মাঠ
জুড়ে পুরোদমে আলু চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আলু উত্তোলন শুরু হবে আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে। আলু রোপনের পর তা পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে সময় লাগে তিন মাস। আলু আবাদে কৃষকদের সহায়তা করছেন বাড়ির নারীরাও। তারা বীজ আলু কেটে দিচ্ছেন। কাটার পর শ্রমিকরা তা জমিতে নিয়ে রোপন করছেন। বর্তমানে বাজারে বীজ আলুর চড়া দাম। বীজ আলু কাটার পর অবশিষ্ট কাটা আলু ব্যবসায়ীরা বাড়িতে গিয়েই ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
চাষিরা জানান, এ অঞ্চলে অনেক কৃষকের আর্থিক অনটন না থাকায় চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে জমি লগ্নি বা ঠিকা ও বর্গা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ টাকা লগ্নি খাটাচ্ছেন। জমি চাষাবাদের কাজের জন্য রংপুর,
গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা ছুটে আসছেন আলু জমিতে কাজ করতে। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলাতে উত্তরবঙ্গের ২ থেকে ৩ হাজার শ্রমিক আলুচাষে নিয়োজিত রয়েছেন। এর এখানকার কৃষকরা ওই শ্রমিকদের দিয়ে দিন চুক্তিতে চাষাবাদ করাচ্ছে।
আলু চাষকে ঘিরে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সব পুঁজিও যাচ্ছে মাটির নিচে অর্থাৎ ফসলি জমিতে। আলু চাষাবাদ মৌসুমে ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেয়। মার্চ মাসে আলুর উত্তোলনের পর ব্যবসা-বাণিজ্য, বিয়ে- সাদিসহ সবকিছুই আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
গাঁওদিয়া ইউনিয়নের হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক কার্তিক দাস জানান, গত বছর কৃষক আলুতে লাভবান হওয়ায় আলুর জমি ভাড়া-বর্গা চাষের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে দিগুণ- তিনগুণ মূল্যে জমি ভাড়া বীজ আলু ও সার ক্রয় করে এবার তিনি ১২ একর জমিতে আলুর আবাদ করছেন। উৎপাদন মূল্য বেশি থাকায় এ বছর পুঁজি উঠানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশাবাদী।
কালুরগাঁও গ্রামের কৃষক জসীম শেখ জানান, এবার বীজ আলু খুব সংকট ৪০ কেজির ১ বস্তা বীজ আলুর মূল্য ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং বাক্স আলুর বীজ ১ বক্সের মূল্য ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। ৪০ কেজি ১ বস্তা বীজ আলুতে ২০ থেকে ২২ মণ আলু উৎপাদন হয়। এবার এতো টাকা খরচ করে আলু রোপণ করছেন। কিভাবে পুঁজি উঠাবেন তা নিয়ে চিন্তিত আছেন। বাড়ির নারীরা জানালেন, তারা দিন-রাত আলু বীজ কাটছেন। ১ কানি জমির আলু বীজ কাটতে সময় লাগবে ৩-৪দিন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।