প্রকাশিত: সোমবার ০৩জুন ২০১৯। ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ২৮ রমজান ১৪৪০ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর: নিজস্ব ডেস্ক : ধন-সম্পদের যে নির্ধারিত অংশ শরীয়াতের বিধান মোতাবেক আল্লাহর পথে ব্যয় করা মানুষের উপর ফরজ করা হয়েছে তাকেই যাকাত বলে (ইসলামী বিশ্বকোষ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,২১ খন্ড ৪৭৫ পৃঃ) ।
প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের জন্য যাকাত হচ্ছে একান্ত কর্তব্য ও ফরজ । সমাজের ধনী ও সচ্ছল লোকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের মধ্যে যথাযথ বন্টন করাই কর্মসুচির প্রধান বৈশিষ্ট্য । এ যাকাতের কথা পবিত্র কুআনে কোন কোন মতে ৩২ বার এবং অধিকাংশের মতে ৮২ বার উল্লেখ রয়েছে ।
পবিত্র কুরআন বলে-তোমাদের বন্ধুতো একমাত্র আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং মুমিন বান্দা যারা নামায কায়েম করে,যাকাত দেয় এবং বিনম্র (সুরা মায়েদার আয়াত ৫৫)
যাকাত আদিকাল থেকেই প্রচলিত ছিল
কারূনের ধ্বংস এসেছিল যাকাত প্রদান না করে কার্পণ্য করার কারণে,
ইয়াহুদী বণী ইসরাঈল হতে গৃহিত প্রতিশ্রুতিতে মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দিবে (সুরা বাকারা আয়াত ১১০);
পবিত্র কুরআনে এসেছে ঈসা (আঃ) বলেন-তিনি আমাকে আজীবন সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন (সুরা মারইয়াম আয়াত ১৩);
ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে-তিনি তার পরিবার পরিজনদের সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন (সুরা মারইয়াম আয়াত ৫৫)
যাকাতের উদ্দেশ্য
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহন কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগূলোকে বারাকাতময় করতে পার এর মাধ্যমে (সুরা তাওবাহ আয়াত ১০৩);
যাকাত বাবদ যে আংশটা দেয়া হয় সেটা আল্লাহর নিকট পৌঁছে না । লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা লোকে মস্তবড় দাতা বলে প্রশংসা করুক বা পার্থিব কোন প্রয়োজনে দান করলে আল্লাহ পাক কবুল করবেন না । শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করলে আখেরাতে এর উত্তম বদলা পাবেন এবং ইহকালে ও তার ধন সম্পদ কখনো শেষ হবে না ।
শরী’আতের হুকুমের গোপন রহস্য ও হিকমাত পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না । সুতরাং শরী’আতের কোন হুকুমের রহস্য ও হিকমাত কারো বুঝে আসুক বা না আসুক তা যে মহান আল্লাহর হুকুম এজন্য বিনা দ্বিধায় অবশ্যই পালন করতে হবে ।
যাকাত একটি নৈতিক ব্যবস্থাও, কেননা ধনী লোকদের মানসিকভাবে লোভ, কার্পণ্য আত্মম্ভরিতার ময়লা ও আবর্জনা থেকে পবিত্র করা এবং বদান্যতা, দানশীলতা ও কল্যাণ প্রেমে তাদের পরিশুদ্ধতায় ভরপুর করে দেয় । অন্য লোকদের দুঃখ-দুর্দশায় সহানুভুতি ও দয়া মায়া সহকারে তাদের সাথে একাত্ম করে তোলে ।
বঞ্চিতদের অন্তরে যে হিংসার আগুন জ্বলে উঠে তা নিভিয়ে দিতে যাকাত বিরাট কাজ করে ও ধনীদের সুখ সম্পদ দেখে তাদের মনে যে কষ্ট অনুভব করে যাকাত তা প্রশমিত করে দেয় ।
জাকাতের বিধিবিধান
যেসব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ হয়
* সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর জাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়। আলবাহরুর রায়েক ২/২০৯
*ব্যাংক-ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, ট্রেজারি বিল, ব্যাংক গ্যারান্টি মানি ইত্যাদি নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপর জাকাত ফরজ হবে।
* সোনা-রুপার অলঙ্কার সবসময় বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক, সব অবস্থায় তার জাকাত দিতে হবে। সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫, নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮
* হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ, ছেলেমেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়, তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে এর ওপরও জাকাত ফরজ হবে। অবশ্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি খরচ হয়ে যায়, তাহলে তার জাকাত দিতে হবে না।—মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭০৩২;
যেসব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ নয়
* নিজের ও পোষ্য পরিজনের অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান ও বাহনের ওপর জাকাত ফরজ নয়। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/১৯;আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫
* গৃহের আসবাবপত্র,যেমন খাট-পালং,চেয়ার-টেবিল,ফ্রিজ,আলমারি ইত্যাদি এবং গৃহসামগ্রী,যেমন হাঁড়ি-পাতিল,থালা-বাটি,গ্লাস ইত্যাদির ওপর জাকাত ফরজ নয়,তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক,হাদিস : ৭০৯৩,৭০৯২;মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা,হাদিস : ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫
* পরিধেয় বস্ত্র,জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে,তবুও তাতে জাকাত ফরজ হবে না।—রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫
* ভাড়া দেয়ার উদ্দেশে নির্মিত ঘরবাড়ি বা অন্য কোনো সামগ্রী,তেমনি দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সেসব আসবাবপত্র—যা ব্যবসার পণ্য নয়,এগুলোর ওপর জাকাত ফরজ নয়।
যাকাতের নিসাব
* স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি বা ৮৫ গ্রাম।
* রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) তোলা/ভরি বা ৫৯৫ গ্রাম।
* টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৯৯৩৭
কখন কীভাবে জাকাত দিতে হবে
* যেদিন চন্দ্রবছর হিসেবে এক বছর পূর্ণ হবে, সেদিন সঞ্চিত সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়ে যায়। তাই জাকাত ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে আদায় করে দেয়া উত্তম। জাকাত আদায়ে অধিক বিলম্ব করা গুনাহ। মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ১০৫৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৭
* জাকাত চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী আদায় করা জরুরি। বাংলা বা ইংরেজি বর্ষের হিসাব এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। কারও যদি চন্দ্রবর্ষের হিসাব রাখতে অসুবিধা হয়, তবে প্রত্যেক ইংরেজি বর্ষের ১১ দিন আগেই চন্দ্রবর্ষ পূরণ হয়েছে বলে ধরে নেবে এবং সে অনুযায়ী জাকাত আদায় করবে এবং পরের বছরের হিসাব ওই ১১ দিন আগে থেকেই শুরু করবে। কারণ হিজরি সন ইংরেজি সন থেকে ১১ দিন কম হয়ে থাকে।—আলবাহরুর রায়েক ২/২০৩; আলমুহাল্লা ৪/৭৫; আততাওকিতুল হাওলি ফিয জাকাত ২৫
* যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ (২.৫%) জাকাত আদায় করা ফরজ। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭০৭৭
* ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে পাইকারি বাজারদর অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে জাকাত আদায় করবে।
যাদের জাকাত দেয়া যাবে
* কোরআন মজিদে জাকাতের খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। ইরশাদ হয়েছে— জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য—যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এটি আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।—সুরা তাওবা : ৬০
* যে ব্যক্তির কাছে কোনো সম্পত্তি নেই অথবা নিসাবের সমমূল্যের প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো সম্পত্তিও নেই, এমন লোক শরিয়তের দৃষ্টিতে মিসকিন বা গরিব। তাকে জাকাত দেয়া যাবে।
* যে ব্যক্তি এমন ঋণগ্রস্ত যে, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে জাকাতযোগ্য বা ফিতরাযোগ্য কোনো সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকে না, তাকে জাকাত দেয়া যাবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮
* যে ব্যক্তির নিজ বাড়িতে বা অন্য কোথাও নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কিন্তু সফরে এসে মালসামানা চুরি হয়ে গেছে কিংবা কোনো কারণে একেবারে রিক্তহস্ত হয়ে গেছে, বাড়ি থেকে মাল নিয়ে আসা বা ঋণ নেয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই, তাকেও জাকাত দেয়া যাবে। বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৫
* জাকাত শুধু মুসলমানদের দেয়া যাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭১৬৬, ৭১৬৭, ৭১৭০; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৬/৫১৬-৫১৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫১
* জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো কোনো ধরনের বিনিময় ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিকে জাকাতের পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেয়া। রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪
* বাড়ির কাজের ছেলে বা কাজের মেয়েকে জাকাত দেয়া জায়েজ—যদি তারা জাকাত নেয়ার উপযুক্ত হয়। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে জাকাতের অর্থ দিলে জাকাত আদায় হবে না। তাই তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দেয়ার পর জাকাতের অর্থ দেয়া যাবে।
* আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালন ও তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই জাকাত দিতে হবে। জনসমর্থন অর্জন, লোকদের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কিংবা অন্য কোনো জাগতিক উদ্দেশ্যে জাকাত দেয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।—সুরা বাকারা (২) : ২৬৪
যাদেরকে জাকাত দেয়া যাবে না
* যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে জাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নিসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে জাকাত দেয়া যাবে না।—বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮
* জাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে জাকাত আদায় হবে না। যেমন—রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুত্-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরিয়তে জাকাতের বিধান দেয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য; সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। জাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যয় করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেয়া, ওয়াজ-মাহফিলের জন্য ব্যয় করা বা এগুলোতে সহায়তা দেয়া, মিডিয়া তথা রেডিও, টিভি চ্যানেল করা জায়েজ নয়; বরং জাকাতের টাকা তার হকদারকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও জাকাত আদায় হবে না।—মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৬৯৪৭, ৬৯৪৮, ৭১৩৭, ৭১৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪
* নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি—যারা তার জন্মের উত্স তাদের নিজের জাকাত দেয়া জায়েজ নয়। এভাবে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের জাকাত দেয়া জায়েজ নয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দেয়া জায়েজ নয়।—রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮
কতটা সাহায্য প্রয়োজন
ফকির মিসকীনদের জন্য খানা, পোষাক, বাসস্থান এবং অন্যান্য জিনিস যা ছাড়া বাঁচা সম্ভবপর নয়, তবে কোন অতিরিক্ত খরচ করা চলবে না । এর পরিমান নির্ধারণ করা সহজ নয় । কারণ যা এক ব্যক্তির চলে অন্যত্র অন্য ব্যক্তির চলবে না । যা এক জনের ১০ দিনের খরচ তা অন্য কারো ১ দিনের খরচ । তবে সর্বোত্তম ব্যবস্থা হল-অসুস্থের চিকিৎসার জন্য পুর্ণ খরচ দেওয়া, অবিবাহিতের বিবাহ খরচ দেয়া এবং যাকে যাকাত দেয়া হয় ভবিষ্যতে যাতে আর যাকাত নিতে না হয় এরকম ব্যবস্থা করে দেওয়া । যেমন-কোন কর্মের ব্যবস্থা করে দেয়া । এমন কিছু দেয়া যা দ্বারা সে আয় করে জীবিকা অর্জন করতে পারে । যেমন-রিক্সা, ভ্যান, অটোগাড়ী, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগীর খামার ইত্যাদি যাকাত হিসেবে দেওয়া যাতে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে ।
সাহাবীরা এমন পরিমানে যাকাত দিতেন পরিবর্তীতে সে লোকের আর যাকাত নেওয়ার প্রয়োজন হয় নাই ।
খলীফা উমার (রাঃ) এর আমলে যাকাত বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এত সুন্দর ভবে রূপায়িত হয়েছিল যে,সারা দিন ঘুরেও যাকাত নেয়ার মত লোক খুজে পাওয়া যেত না । খলিফাহ উমার বিন আব্দুল আজিজ (রাঃ) এর সময়েও এরূপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল । তিনি যাকাত নেবার লোক না পেয়ে শেষে আফ্রিকা মহাদেশে গিয়ে যাকাত বন্টনের আদেশ দিয়েছিলেন । ইসলামের আবির্ভাবের পর হতে চার খলীফাহ ও পরবর্তী কোন কোন খলীফাহর খিলাফত কালে যেভাবে যাকাত আদায় ও বন্টন করা হতো, বর্তমানে দুন্ইয়ার মুসলিম সরকারগুলো সরকারী ভাবে তদ্রুপ ব্যবস্থার প্রচলন করলে দুনিয়ার সকল মুসলিমদের অবস্থাই পরিবর্তন হয়ে যেত । কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে আজকের মুসলিম সমাজ কুরআনের এই নির্দেশ বর্জন করে চলছে ।
আমাদের যাকাত কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে অনেকের মাঝে না বিলিয়ে আমাদের নিকটতম দরিদ্র আত্মীয় স্বজনকে বা সমাজের ফকির মিসকীনদের এমন ভাবে দিলে ভালো হবে যাতে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় প্রতি বছরই তাদের যাকাতের জন্য দ্বারে দ্বারে যেতে হয় এবং তাদের অভাব অন্টনের কোন পরিবর্তন হয় না ।
—সংগৃহীত