নিহত ৩২ জনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ
প্রকাশিত :বুধবার,১জুলাই ২০২০ইং ।। ১৭ই আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : কাজী সাব্বির আহমেদ দিপু, মুন্সীগঞ্জ : বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জন যাত্রীই মুন্সীগঞ্জের। সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় তাদের বাড়ি। এ ছাড়া এখনও বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনরা জানিয়েছে।
এদিকে ঝড়-বৃষ্টি নেই, পরিচ্ছন্ন আবহাওয়ায় দিনের বেলায় মাত্র ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে লঞ্চডুবিতে এত মানুষের প্রাণ হারানোর ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো জেলাবাসী। নিহতদের পরিবারগুলোয় চলছে শোকের মাতম।
মিরকাদিমে দাফন ১১ মরদেহ : লঞ্চডুবিতে মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সোমবার সকালে লঞ্চডুবির ঘটনায় লাশ উদ্ধারের পর রাত ৯টা পর্যন্ত ১১ জনের মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। পরে রাতেই তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
হতভাগ্যরা হলেন- মিরকাদিমের ভুবনগড়া এলাকার মো. আফসার উদ্দিন মৃধার ছেলে মো. সায়েম (১৭), গোপপাড়া এলাকার মজিদ গাজীর ছেলে আবু সাঈদ (৩৯), উত্তর রামগোপালপুর এলাকার মৃত দেবেন্দ্র চন্দ্র বণিকের ছেলে সত্যরঞ্জন বণিক (৩২), নৈদিঘির পাথর এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে দিদার হোসেন (৪৬) ও মেয়ে আফসানা খাতুন রুমা (৩৮), একই এলাকার মো. সোহরাবের ছেলে মো. পাপ্পু, পশ্চিমপাড়া এলাকার মো, জান শরীফের ছেলে শিপলু (২৮), একই এলাকার পরশ মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৪৮), গোয়ালঘূর্ণি এলাকার আ. রহিম খানের ছেলে মো. শাহাদাত হোসেন খান (৩৭), একই এলাকার কালা চান তালুকদারের ছেলে মো. সুমন তালুকদার (৩৭) ও আলী হোসেন বেপারীর ছেলে আবু তালেব বেপারী (৪৮)।
স্বামী নিখোঁজ, স্ত্রীর বিলাপ ‘কারও কথাই শুনলা না’ :কত কইছি ফল বেচা ছাইর্যা দেও। বাড়ি আর ঢাকায় ছোটাছুটি করার কী দরকার। বয়স হয়েছে বাড়িতেই থাকো। কিন্তু কারও কথাই শুনলা না। বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ স্বামী মিন্টু মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম বুকফাটা কান্নারত অবস্থায় এসব কথা বলছিলেন। মো. মিন্টু মিয়া ঢাকা থেকে পাইকারি দরে ফল কিনে এনে বিক্রি করতেন। লঞ্চডুবিতে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
মায়ের শাড়িতে মোড়ানো ছেলের লাশ : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আইনজীবী আব্দুর রহমান, স্ত্রী হাসিনা বেগম ও ছেলে সিফাত বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন। ডুবুরিদল যখন স্ত্রী হাসিনা বেগমের লাশ উত্তোলন করে, তখন দেখতে পায়, মায়ের শাড়ির আঁচল দিয়ে মোড়ানো ছিল শিশুসন্তান সিফাতের লাশ।
অন্যদিকে একই গ্রামের হালিম মুন্সীর ছেলে মনিরুজ্জামানের (৪২) লাশ পাওয়া গেছে। তবে আইনজীবী আ. রহমান ও ফজল বেপারীর ছেলে সুমন বেপারীর (৩২) লাশ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া একই লঞ্চডুবিতে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বায়হাল গ্রামের চারজন, কামাড়খাড়া গ্রামের দু’জন ও হাটকান গ্রামের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
রেশমা বেগমের প্রলাপ- ‘আমারে ছাইর্যা কই গেলা’ :আমারে ছাইর্যা কই গেলা। আমার এখন কী অইব- এভাবে প্রলাপ বকছিলেন লঞ্চডুবিতে মারা যাওয়া মিরকাদিম পৌরসভার পশ্চিমপাড়া এলাকার দিদার হোসেনের স্ত্রী রেশমা বেগম। মাত্র সাত মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। সোমবার সকালে বোন আফসা খাতুন রুমাকে সঙ্গে নিয়ে অসুস্থ বোন জামাইকে দেখতে ঢাকার দয়াগঞ্জ রওনা হয়েছিলেন দিদার হোসেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..