প্রকাশিত: সোমবার,১৯ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ৩রা কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ০১ রবিউল আউয়াল,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : এদেশের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে, নারী জাগরণের প্রচার ও প্রসারে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ অনন্য কীর্তি ও অবদান রেখে গেছেন। তার সময়ে এই ভূ-খণ্ডে মেয়েদের লেখাপড়া শেখা বা স্কুলে যাওয়াই ছিল নিষিদ্ধ। রক্ষণশীল সমাজের শাসনে মেয়েদের পর্দার অন্তরালে এক রকম বন্দী জীবন যাপন করতে হতো।
এমনি অবস্থায় বেগম শামসুন নাহার সমাজের রীতি উপেক্ষা করে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন এবং নিজ সমাজের অসহায় ও দুর্গত নারীদের জাগরণের ব্রত নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি নিজ সমাজের অসহায় ও দুর্গত নারীদের জাগরণের ব্রত নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
‘আমি আশা করি সেদিন দূরে নয় যেদিন আমাদের সমাজের মেয়েরা শুধু বিএ পাশ করে সংবর্ধনা পাবেন না, সংবর্ধনা পেতে হলে তাঁদের আরো বড় কাজ করতে হবে।’ বিএ পাস উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ১৯৩২ সালে কথাগুলো বলেছিলেন।
সেবছর কলকাতার সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুলে বেগম শামসুন নাহারের বিএ পাশ উপলক্ষে এই বিরাট সংবর্ধনা সভাটির আয়োজন করা হয়। বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ নারী শিক্ষা এবং নারীদের ভোটাধিকারের আন্দোলনসহ মৌলিক কিছু কাজের জন্যে এদেশের নারী সমাজের কাছে খুবই আপন ও প্রিয়জন।
নারী জাগরণের অন্যতম কাণ্ডারী বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবিকা ৷ মুসলমান সমাজে নারী শিক্ষা প্রসার ও অবরোধপ্রথা রহিত করার জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদেরই একজন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ।
আজ ১৯ অক্টোবর মহীয়সী এই বাঙালি নারীর জন্মদিন। ১৯০৮ সালের ফেনী মহকুমার গুতুমা গ্রামের মুন্সীবাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ। বাবা মৌলভী মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মুন্সেফ এবং মা আছিয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। দুই ভাই বোনের মধ্যে বেগম শামসুর নাহার ছোট। বড় ভাই হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ছিলেন সাহিত্যমনা ব্যক্তিত্ব। শিক্ষা ছিল তার পারিবারিক ঐতিহ্য।
আর তাই, তিনি সেই সমাজের অবরোধের প্রাচীর ভেঙে নিজে শিক্ষিত হয়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করেছিলেন। বেগম শামসুন নাহারের বয়স যখন ৬ মাস তখন তার বাবা হঠাৎ ইন্তেকাল করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার মা শিশুকন্যা নাহার ও ৩ বছরের পুত্র বাহারকে নিয়ে পিত্রালয় চট্টগ্রামে চলে যান। নাহারের মাতা আছিয়া খাতুন ছিলেন যথার্থ শিক্ষিতা। তিনি বেশ ভালো বাংলা জানতেন। এছাড়া উর্দু, আরবি ও ইংরেজিও তার যথেষ্ট দখল ছিল। ছেলেমেয়ের চরিত্র গঠনে, লেখাপড়া, আদব কায়দা, ধর্ম শিক্ষার প্রতি তার বিশেষ খেয়াল ছিল।
বেগম শামসুন নাহার যখন নানার বাড়িতে যান তখন তার নানা আবদুল আজিজ চট্টগ্রামে ডিভিশন্যাল ইন্সপেক্টর অব স্কুল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি শুধু উচ্চশিক্ষিতই ছিলেন না- ছিলেন উদারমনা শিক্ষাবিদ। তার নিজের লাইব্রেরিতে তখনকার দিনের প্রকাশিত বই পুস্তকের অভাব ছিল না। এমনি পরিবেশে নাহার ও বাহার নানা-নানী মা-খালাদের আদরযত্নে বড় হতে থাকেন। নানা নিজের ভাবাদর্শে তাদের গড়ে তোলেন।
নাহারকে ভর্তি করা হলো চট্টগ্রাম ডক্টর খাস্তগীর গার্লস হাই স্কুলে আর বাহারকে মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে। তারা দু’জনেই মেধাবী ছিলেন তার মধ্যে বেগম শামসুন নাহার ছিলেন পড়াশুনায় অতি আগ্রহী ও নিষ্ঠাবান। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর বাধা এল স্কুলে পড়ার ক্ষেত্রে।
কারণ তখনকার দিনে মেয়েরা একটু বড় হলেই পর্দা বা অবরোধের জন্য বাইরে বা কোন পুরুষের সামনে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। তাই তখনকার দিনের উচ্চশিক্ষিত অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেগম শামসুন নাহার স্কুলের পড়া সম্পূর্ণ করতে পারলেন না। সমাজের তাড়নায় আর আত্মীয়-স্বজনের নিন্দার ভয়ে তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী জানতে চাইলেন, ‘তুমি স্কুল ছাড়ছ কেন? তুমি তো পড়াশুনায় খুব ভালো।’
বেগম শামসুন নাহার জবাব দিলেন, ‘বড় হয়ে গেছি যে।’ শিক্ষয়িত্রী ছিলেন অমুসলমান, তার সমাজে এই বাধা ছিল না তাই তিনি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলেন না অতটুকু মেয়ে বড় হয়ে গেছে শুনে। মনমরা বেগম শামসুন নাহার ঘরে বন্দী। ঘরে বসেই তিনি খবর পান তার স্কুলের বান্ধবীরা পড়াশুনায় এগিয়ে যাচ্ছে।
তাদের প্রতিবেশী এক বৌদ্ধ পরিবারের মেয়ে জ্যোতিময়ী চৌধুরী যিনি স্কুলে তার চেয়ে নীচ ক্লাসে পড়তেন তিনি ইউনিভারসিটি শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলাত পাড়ি দিলেন। বেগম শামসুন নাহার উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অভিভাবকরা তার মনের ইচ্ছা বুঝতে পেরেছিলেন তাই তার নানা একজন বৃদ্ধ হিন্দু শিক্ষককে নিযুক্ত করলেন নাতনিকে পড়াবার জন্য। শিক্ষক হলেও তিনি তো পুরুষ, বাইরের পুরুষের সামনে যাওয়া নিষেধ।
তখন এক অভিনব ব্যবস্থা হল। পড়ার টেবিলে লম্বালম্বি পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল। পর্দার এ পাশে ছাত্রী অপর পাশে শিক্ষক। শিক্ষক পড়া বুঝিয়ে দেন ছাত্রী অপর পার থেকে মনোযোগ দিয়ে শোনে। শিক্ষক লেখার কাজ দেন, ছাত্রী সেটা শেষ করে পর্দার নীচ দিয়ে খাতাটা ঠেলে দেয়। এভাবে লেখাপড়া চলল এবং তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিলেন। ফল বের হলে দেখা গেল চারটি লেটারসহ প্রথম বিভাগে শতকরা আশির কাছাকাছি নম্বর পেয়ে পাস করেছেন।
কিন্তু পাস করার পর কলেজে পড়ার আর সুযোগ হল না। ১৯২৭ সালে বিয়ের পর বেগম শামসুর নাহারকে চলে যেতে হলো কলকাতায়। পরীক্ষা পাসের পর প্রায় ৪/৫ মাস পর ভর্তি হলেন কলকাতার প্রথম শ্রেণীর ডায়োসেশান কলেজে। সেখানে কলকাতার অভিজাত, ধনী ও শিক্ষিত হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মেয়েরা পড়াশুনা করতো। তারা সবাই আধুনিক বেশভূষা ও চালচলনে অভ্যস্ত। তাদের মধ্যে বেগম শামসুন নাহার একমাত্র মেয়ে যে বোরকা পরে। সহপাঠিনীরা তাকে উপহাস করে নানা কথা বলে। কিন্তু বেগম শামসুন নাহার এ সব ব্যবহারে বা কথায় বিরক্ত হননি, কর্ণপাত করেননি, বিচলিত হননি। নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন।
এমনিভাবে ১৯২৮ সালে ইন্টার মিডিয়েটে বিংশতিতম স্থান অধিকার করেন। এতে সবাই অবাক হলেন, তারা আবিষ্কার করলেন এক নতুন শামসুন নাহারকে। কিন্তু কিছুদিনের জন্য পড়াশুনায় ছেদ পড়লো। কারণ এ সময় তার প্রথম সন্তান মামুনের জন্ম হয়। কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব হলো না। তাই বলে তিনি হতাশ হলেন না। বাড়িতে অবসর সময়ে লেখাপড়ার চর্চা চালিয়ে যেতে লাগলেন। এই সময় তিনি কিছু কিছু লেখার চর্চাও শুরু করেন।
এদিকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে তার চেষ্টার বিরাম ছিল না। সংসারের দায়িত্ব অনেক। কিন্তু পরীক্ষা দিলেন। এবারও ডিস্টিংশন নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে ডিগ্রি লাভ করলেন। জয়যুক্ত হল তার কল্পনা ও সাধনা। এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি সমাজসেবা, সাহিত্য সাধনা ও শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর ১৯৪২ সালে তিনি এমএ. পাস করেন। বেগম শামসুন নাহারের দিনরাতের চিন্তা, মনের স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষা লাভ করা।
বেগম শামসুন নাহার ছিলেন দুই পুত্রের জননী। তার আদর্শে গড়া বড় ছেলে মামুন মাহমুদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। বেগম রোকেয়ার সঙ্গে বেগম শামসুন নাহারের পরিচয় হয় লেখার মধ্য দিয়ে। অল্প বয়সে বেগম শামসুন নাহারের প্রথম লেখা একটি কবিতা প্রকাশিত হয় তৎকালীন কিশোরদের পত্রিকা ‘আঙ্গুর’ নামক মাসিক পত্রিকায়। এরপর ‘নওরাজ’ এবং ‘সওগাত’সহ অন্যান্য পত্রিকায় বেগম শামসুন নাহারের কিছু কিছু লেখা ছাপা হয়।
এই সব লেখা পড়ে বেগম রোকেয়া তাকে একখানা পত্র লেখেন। ঐ পত্রে লেখা ছিল, ‘তোমাকে চিঠি লিখতে বসিয়া আজ অনেকদিন আগের একটা কথা মনে পড়িয়া গেল। একবার রাত্রি বেলায় আমরা বিহারের এক নদী পথে নৌকাযোগে যাইতেছিলাম। বাইরের অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। শুধু নদীতীরের অন্ধকার বনভূমি হইতে কেয়া ফুলের মৃদু সুরভি ভাসিয়া আসিতেছিল। ঠিক তেমনি তোমাকে কখনও দেখি নাই, কিন্তু তোমার সৌরভটুকু জানি।’
১৯৩৯ সালে বাংলার মুসলিম নারী সমাজের দাবিতে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের গবর্নরের পত্নীর নামানুসারে কলেজের নাম হল ‘লেডী ব্রাবোর্ন কলেজ’। ফজলুল হক সাহেব বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে উক্ত কলেজে অধ্যাপনার জন্য আহ্বান জানান। প্রথমে বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ এমএ. পাস না করায় রাজি হননি।
কিন্তু পরে তাদের অনুরোধে রাজি হন এবং লেডী ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা পদে যোগ দেন। কলেজটি অল্পদিনের মধ্যেই একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজরূপে পরিচিতি লাভ করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করল। এই প্রতিষ্ঠা ও সুনামের ব্যাপারে বেগম শামসুন নাহারের যথেষ্ট অবদান ছিল। সে সময় কবি নজরুলের লেখা পড়ে বেগম শামসুন নাহার বেশ মুগ্ধ ও সম্মোহিত হয়েছিলেন। কবি নজরুলের প্রেরণা তার জীবনে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
১৯২৬ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামে গেলে তাদের তামাকুমুণ্ডির বাড়ি আজিজ মঞ্জিলে যান। কবি এক মাস তাদের বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। এই সময়েই বেগম শামসুন নাহার প্রথম কবির দর্শন লাভ করেন। কবি তার বহু বিখ্যাত কবিতা তাদের চট্টগ্রামের বাড়িতে বসেই লিখেছেন। ১৯৪১ সালে কলকাতাস্থ ভবানীপুরে বেগম শামসুন নাহারের বাসগৃহে ঈদ রিইউনিয়নের ব্যবস্থা করা হয়। এই সভায় সেদিন কলকাতার শিল্পী সাহিত্যিক ও বহু গুণীজনের সমাবেশ ঘটেছিল।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ লাভ করে ধন্য হয়েছিলেন তিনি বহু পূর্বেই এবং কবির আশিসবাণী মুদ্রিত হয়েছিল তার লিখিত পুস্তকে। শান্তিনিকেতনে প্রতি বৎসর একটি বাৎসরিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে মহিলা শাখায় সভানেত্রীত্ব দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেলেন বেগম শামসুন নাহার। এই উপলক্ষে ১৯৪১ সালের প্রথম দিকে তিনি শান্তিনিকেতনে যান এবং সেখানে তিন দিনের জন্য উত্তরায়ণ গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেন।
বেগম শামসুন নাহার অল্প বয়স থেকেই সমাজ সেবার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বেগম রোকেয়ার নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অংশীদার হন। বেগম রোকেয়া বহু আগেই ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ বা ‘নিখিল বঙ্গ’ মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শামসুন নাহার এই সমিতির সম্পাদিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শুধু ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ নয়। ভারত বিখ্যাত মহিলা প্রতিষ্ঠান ‘নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলন’ এর কলকাতা শাখায় তিনি যোগদান করেন। ফলে তিনি বহু উচ্চশিক্ষিত ও অভিজাত হিন্দু মহিলার সান্নিধ্য পান।
১৯৩৫ সালে বৃটিশ সরকার ভারত শাসন সংস্কার আইন পাস করেন। তখন পর্যন্ত ভারতীয় নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। এই সময় বেগম শামসুন নাহার নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলনের কলকাতা শাখার তরফ থেকে এদেশের মেয়েদের ভোটাধিকার নিয়ে আন্দোলন চালাতে থাকেন। ভারতীয় নারীদের ভোটাধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আইন পাস হয়। যার ফলে এদেশের মেয়েরা ভোট দেয়ার অধিকার পেলেন।
এমনকি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার কয়েকটি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মেম্বার ছিলেন।
এছাড়াও তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার পরীক্ষক ছিলেন। বেঙ্গল বোর্ড অব সেন্সর-এর সদস্যাও ছিলেন বেশ কয়েক বছর। পূর্ব পাকিস্তানে এমন কোন সংঘ, কমিটি বা প্রতিষ্ঠান ছিল না সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক যার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন না।
১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি বাংলা একাডেমির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন’-এর সুবর্ণ জয়ন্তী সম্মেলনে ছয় সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তানী মহিলা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। পরে তিনি সমগ্র এশিয়ার জন্য এই আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংঘের আঞ্চলিক ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত হয়েছিলেন। দেশভাগের কয়েক বছর পর ঢাকায় মহিলাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বেগম ক্লাব’।
বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী। তিনি ১৯৬২ সালে লেডিস ক্লাবের সভানেত্রী ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান শিশু কল্যাণ পরিষদেরও সভানেত্রী ছিলেন। বেগম শামসুন নাহারের চেষ্টায় ১৯৬১ সালে ‘পঙ্গু শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র’ স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে তিনি আপওয়া পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে বহুবার পূর্ব পাকিস্তানের তরফ থেকে পাকিস্তান শুভেচ্ছা মিশনের সদস্য হিসেবে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় তার রচিত ‘পূণ্যময়ী’, ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘ফুল বাগিচা’, ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘বেগম মহল’, ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘রোকেয়া জীবনী’, ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘শিশুর শিক্ষা’, ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘আমার দেখা তুরস্ক’, ‘নজরুলকে যেমন দেখেছি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে।
লেখক জীবনে তিনি স্কুলের পাঠ্য পুস্তকও রচনা করেছিলেন। ১৯৪৪ সালে বৃটিশ সরকার তাকে শিক্ষাক্ষেত্র ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এমবিই উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে মরণোত্তর ‘বেগম রোকেয়া পদক, ১৯৯৫’ প্রদান করে। ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল মাত্র ৫৬ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সশরীরে না থাকলেও এই ভূ-খণ্ডে নারীশিক্ষায় তার অসামান্য অবদানের কথা প্রেরণা হয়ে কালে কালে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’