প্রকাশিত : শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ইংরেজি, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বাংলা (গ্রীষ্ম কাল), ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর : নিউজ ডেস্ক : আজ ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়াম (আইকম) ১৯৭৭ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ১২তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিবছর ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস হিসাবে পালন করার। ১৯৭৮ সালের ১৮ মে প্রথমবারের মতো জাদুঘর দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
জাদুঘর হলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক, এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন নমুনার সংগ্রহশালা। দেশের ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক, শিল্পকলা, প্রাকৃতিক ও প্রাণিবিষয়ক নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার উদ্দেশ্যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইংরেজি মিউজিয়াম, যার বাংলা আমরা জাদুঘর। এই জাদুঘর আসলে কী? এর উত্তরে বলা যায়, জাদুঘর হলো জ্ঞানের আধার। জাদুঘর হলো সমাজের দর্পণ। জাদুঘর হলো একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির সংগ্রহভান্ডার। এই সংগ্রহভান্ডারের এক একটি উপাদানের দিকে তাকালে জাতির শেকড় সন্ধান করা যায়। উপাদানের গায়ে ফুটে ওঠে ঐতিহ্যের আলো। যে আলো আলোকিত করে, উদ্বুদ্ধ করে, উদ্বেলিত করে উত্তর প্রজন্মের মানুষদের।
বিশ্বে প্রথম জাদুঘর স্থাপিত হয় মিসরের কায়রোয়। এশিয়া মহাদেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশদের মাধ্যমে উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণা তৈরি হয়। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা জাদুঘরের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জাদুঘর নির্মাণের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেন এবং ১৮০৮ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটিক মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৪ সালে।
প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। বিক্রমপুরের মাটি খুড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ঐতিহ্য ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাশুর গ্রামের জমিদার যদু নাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করে। সরকারকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা লীজের টাকা পরিশোধ করে (বাড়ির জমি, দিঘি, মন্দির সহ সমস্ত কিছুর জন্য) জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।
বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন,২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এম.পি।
২০১৩ সালের ২৮ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “বিক্রমপুর জাদুঘর” শুভ উদ্বোধন করেন।
২০১৪ সালের ২০ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি জাদুঘরটির দ্বারোদঘাটন করেন। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে অনুযায়ী বাংলাদেশে একমাত্র নৌকা জাদুঘর ( Boat Museum) উদ্ধোধন করেন জাদুঘর এর সামনের দিঘিতে।
জমিদার যদুনাথ রায়ের এ বাড়ির স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর, গেস্ট হাউজ, থিমপার্ক।
তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল বা মটকা দেখতে পাবেন।
মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন।
নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া পোড়া মাটির নল, মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে।
নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি, বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।
দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখার স্থান।
তৃতীয় তলায় তালপাতায় লেখা পুঁথি, কাঠের সিন্দুক, আদি আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া ১০০০ বছর আগের বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের বৌদ্ধনগরী সহ বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সন্ধান পায় মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার প্রমান করে মাটির নিচে প্রাচীন নগরসভ্যতার আবিষ্কার। ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্য একটি গ্যালারীতে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে। রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত কিছু মহামূল্যবান নির্দশন এই গ্যালারীতে স্হান পেয়েছে। এসব নির্দশন বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যবহন করছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রায় ৩ মিটার গভীর পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়। বিক্রমপুরের হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এতদিন।
বছরের এই সময় দর্শনার্থীর ভিড় জমে এখানে। প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।
কিউরেটর এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন বিক্রমপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং অগ্রসর বিক্রমপুর আন্দোলনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে চাই। আমরা আলোর পথযাত্রী। আলোকিত এবং দেশহিতব্রতে উজ্জীবিত মানুষ গড়ে তোলার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের ক্ষুদ্রশক্তি নিয়ে অংশগ্রহণ করতে চাই। চলার পথে আমরা আপনাদের পরামর্শ, মতামত ও সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেগুলো হয়তো আপনাদের কারো কারো বাড়িতে খুঁজে পাবেন, পূর্বপুরুষের ব্যবহার্য সামগ্রী এছাড়াও বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দেশ ও সাম্রাজ্যের কয়েন, নোট, যন্ত্রপাতি, ঘরের আসবাব, প্রাচীন তৈজসপত্র, পাথর বা অন্যান্য ধাতু/চীনা মাটি ও মাটির নির্মিত থালা, বাসন, ব্যবহার্য সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী, পুঁথি-পত্র, বই তালপাতায় বা হাতে বানানো কাগজে হাতে লেখা প্রাচীন গ্রন্থ এসব আপনার সংগ্রহে আছে বা পরে আছে আপনার বাড়িতে! এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বই-পত্র অন্যান্য সামগ্রী এবং নৌ জাদুঘরের জন্য নৌকা দান করলে জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হবে। আপনার দানকৃত বস্তূটিও অক্ষয় হয়ে থাকবে, সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় আঞ্চলিক জাদুঘর ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’ দেশের মধ্যে একটি উচ্চমানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের একান্ত কামনা।
আমরা চাই আপনিও আমাদের প্রচেষ্টার সহযাত্রী হোন – সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এ প্রত্ন ও সাংস্কৃতিক সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার।
উল্লেখ্য যে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বস্তুর প্রাপ্তির পাকা রশিদ বা দান পত্রের কাগজ দিয়ে থাকে এবং প্রদর্শনীতে দাতার নাম, তাহার পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সংগ্রাহকের নাম ঠিকানাও থাকে। দর্শনার্থী দেখে যেন বুঝতে পারে। জাদুঘর কতৃপক্ষ যে কারো অংশগ্রহণ/ বস্তুদান অক্ষয় থাকুক তাই তাদের আহ্বান পুরাতন জিনিস অযন্তে অবহেলায় ফেলে না রেখে বিক্রমপুর জাদুঘরের কতৃপক্ষকে সংবাদ দিলে তাদের নিজ খরচে গিয়ে নিয়ে আসবে বা সংগ্রহ করবে।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com