বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদ আর নেই

0
30
ছবি –সংগৃহীত।

প্রকাশিত:রবিবার ০২ জুন ২০১৯।১৯ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ২৭ রমজান ১৪৪০ হিজরি।

বিক্রমপুর খবর:অফিস ডেস্ক:বিশিষ্ট শিক্ষক, প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (রোববার,২ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মমতাজউদদীন আহমদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার দীর্ঘদিনের সহচর অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই মমতাজউদদীন আহমদ শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। মাঝে একাধিকবার তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। অবশেষে আজ বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’

এদিকে, গুণী এ ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। ভাষাসৈনিক মমতাজউদদীন আহমদ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের পথিকৃত যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

তিনি ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তার পরিবার তদানিন্তন পূর্ববঙ্গে চলে আসে। তার পিতার নাম কলিমুদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম সখিনা বেগম।

শিল্প ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৯৭), নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও আলাউল সাহিত্য পুরস্কার অন্যতম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি।

তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। ছাত্রাবস্থায়ও তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন।

রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪,১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে তিনি রাজনীতির কারণে কারাবরণ করেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি কলেজে ৩২ বছর বাংলা ভাষা সাহিত্য এবং বাংলা ও ইউরোপীয় নাট্য বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। তার লেখা নাটক কি চাহ শঙ্খ চিল এবং রাজা অনুস্বরের পালা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন। এছাড়ও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন।২০১১ সাল থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে অসুস্থ হয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন তিনি। তার শরীর অক্সিজেন পাচ্ছিল না ও কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে যাচ্ছিল। এ ছাড়া মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল।

জানা গেছে, আজ বাদ এশা মিরপুর-২ এর রূপনগরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে চাপাইনবয়াবগঞ্জের ভোলাহাটের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।

তাঁহার রচিত- গবেষণা ও প্রবন্ধঃ বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত,বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত,প্রসঙ্গ বাংলাদেশ, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু। নাটকঃ নাট্যত্রয়ী,হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার,স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১),কি চাহ শঙ্খ চিল (১৯৮৫),প্রেম বিবাহ সুটকেশ,জমিদার দর্পণ,রাজা অনুস্বরের পালা,ক্ষত বিক্ষত, রঙ্গপঞ্চাদশ, বকুল পুরের স্বাধীনতা,সাত ঘাটের কানাকড়ি,রাক্ষসী।গদ্য রচনাসমগ্রঃ চ্যাপেলিন-ভাঁড় নয় ভব ঘুরে নয়,আমার ভিতরে আমি,জগতের যত মহাকাব্য,হৃদয় ছু আছে,লাল সালু ও সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ।মহানামা কাব্যের গদ্যরূপঃ সাহসী অথচ সাহস্য,নেকাবী এবং অন্যগণ,জন্তুর ভিতর মানুষ,ভালবাসিলেই,সজল তোমর ঠিকানা (উপন্যাস), এক যে জোড়া, এক যে মধুমতি (উপনাস্য),অন্ধকার নয় আলোর দিকে, নীলদর্পণ’ (সম্পাদনা) ইতাদি।

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন