বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করলেন পরিবহন কমিশনার

0
7
বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করলেন পরিবহন কমিশনার

প্রকাশিত : শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ইংরেজি, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বাংলা (গ্রীষ্ম কাল), ৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরি ।

বিক্রমপুর খবর : নিউজ ডেস্ক : আজ (১৮ মে ২০২৪) মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করে গেলেন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ আব্দুল হাসনাত হুমায়ুন কবির এবং তাহার সহধর্মিণী। সাথে ছিলেন শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোশারফ হোসেন, এছাড়া রাড়িখাল ইউনিয়ন পরিষদের (অত্র এলাকার) সদস্য সুলতান মাহমুদ এবং মহিলা সদস্য নার্গিস বেগম। বিক্রমপুর জাদুঘরের সকল গ্যালারী এবং জাদুঘর প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং ভূয়সি প্রশংসা করেন। তিনি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। তিনি লিখেন, ‘প্রাচীন ঐতিহ্য এই নিদর্শন দেখে আমি অভিভূত। এগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী-আমাদের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে।——-’

বিক্রমপুর জাদুঘরের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ।

কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন কমিশনার মহোদয়ের পরিদর্শনের পূর্বের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে তাহার ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেননি। বিশেষ করে আজকের দিনে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করায় খুব বেশি আনন্দ প্রকাশ করছি কারণ আজ বিশ্ব জাদুঘর দিবস, এই বিশ্ব জাদুঘর দিবসের দিনে তাদের পেয়ে আমরা সত্যিকারেই আনন্দিত।

বিক্রমপুরের মাটি খুড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ঐতিহ্য ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাশুর গ্রামের জমিদার যদু নাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করে। সরকারকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা লীজের টাকা পরিশোধ করে (বাড়ির জমি, দিঘি, মন্দির সহ সমস্ত কিছুর জন্য) জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।

বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এম.পি।

২০১৩ সালের ২৮ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “বিক্রমপুর জাদুঘর” শুভ উদ্বোধন করেন।

২০১৪ সালের ২০ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি জাদুঘরটির দ্বারোদঘাটন করেন। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে অনুযায়ী বাংলাদেশে একমাত্র নৌকা জাদুঘর ( Boat Museum) উদ্ধোধন করেন জাদুঘর এর সামনের দিঘিতে।

জমিদার যদুনাথ রায়ের এ বাড়ির স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর, গেস্ট হাউজ, থিমপার্ক।

তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল বা মটকা দেখতে পাবেন।

মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন।

নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া পোড়া মাটির নল, মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে।

নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি, বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।

দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখার স্থান।

তৃতীয় তলায় তালপাতায় লেখা পুঁথি, কাঠের সিন্দুক, আদি আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।

মাটি খুঁড়ে পাওয়া ১০০০ বছর আগের বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে  প্রায় দেড় হাজার বছর আগের বৌদ্ধনগরী সহ বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সন্ধান পায় মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার প্রমান করে মাটির নিচে প্রাচীন নগরসভ্যতার আবিষ্কার। ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্য একটি গ্যালারীতে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে। রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত কিছু মহামূল্যবান নির্দশন এই গ্যালারীতে স্হান পেয়েছে। এসব নির্দশন বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যবহন করছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রায় ৩ মিটার গভীর পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়। বিক্রমপুরের হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এতদিন।

বছরের এই সময় দর্শনার্থীর ভিড় জমে এখানে। প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে।

বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।

কিউরেটর এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন বিক্রমপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং অগ্রসর বিক্রমপুর আন্দোলনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে চাই। আমরা আলোর পথযাত্রী। আলোকিত এবং দেশহিতব্রতে উজ্জীবিত মানুষ গড়ে তোলার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের ক্ষুদ্রশক্তি নিয়ে অংশগ্রহণ করতে চাই। চলার পথে আমরা আপনাদের পরামর্শ, মতামত ও সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি আরো বলেন ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেগুলো হয়তো আপনাদের কারো কারো বাড়িতে খুঁজে পাবেন, পূর্বপুরুষের ব্যবহার্য সামগ্রী এছাড়াও বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দেশ ও সাম্রাজ্যের কয়েন, নোট, যন্ত্রপাতি, ঘরের আসবাব, প্রাচীন তৈজসপত্র, পাথর বা অন্যান্য ধাতু/চীনা মাটি ও মাটির নির্মিত থালা, বাসন, ব্যবহার্য সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী, পুঁথি-পত্র, বই তালপাতায় বা হাতে বানানো কাগজে হাতে লেখা প্রাচীন গ্রন্থ এসব আপনার সংগ্রহে আছে বা পরে আছে আপনার বাড়িতে! এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বই-পত্র অন্যান্য সামগ্রী এবং নৌ জাদুঘরের জন্য নৌকা দান করলে জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হবে। আপনার দানকৃত বস্তূটিও অক্ষয় হয়ে থাকবে, সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় আঞ্চলিক জাদুঘর ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’ দেশের মধ্যে একটি উচ্চমানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের একান্ত কামনা।

আমরা চাই আপনিও আমাদের প্রচেষ্টার সহযাত্রী হোন – সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এ প্রত্ন ও সাংস্কৃতিক সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার।

 (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।       

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন