প্রকাশিত : সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০ইং ।। ৫ই শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মুন্সীগঞ্জের চারটি উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
রোববার (১৯ জুলাই) সকাল থেকে শ্রীনগরের ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার এবং মাওয়া পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
আরও একাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি থাকার তথ্য থাকলেও বাস্তবে এই সংখ্যা ১৫ হাজার পরিবার ছাড়িয়ে যাবে। আগামী দুই দিন গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া।
অন্যদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মায় তীব্র ঘূর্ণায়মান স্রোতের তোড়ে ভাঙন চলছেই। ইতিমধ্যে লৌহজংয়ের হলদিয়া গ্রামের জামে মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে পদ্মায়। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত থাকায় রোববার (১৯ জুলাই) নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে লৌহজং ইউএনও মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মু. রাসেদুজ্জামান,দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে পরিদর্শনকালে বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানসমূহে বাঁধ নির্মাণে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান লৌহজং ইউএনও মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁন।
জেলার লৌহজং উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারের জন্য ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি এক হাজার পরিবারে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ ও গবাদি পশু রাখতে তেউটিয়া চরে ১০ বান্ডিল টিন দিয়ে ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি লৌহজংয়র বেজগাঁও ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড, গাঁওদিয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড, কনকসার ইউনিয়নের দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ড এবং হলদিয়ার ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন লৌহজং ইউএনও মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁন।
অপরদিকে, পদ্মা নদী সংলগ্ন জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল-বানারী ও পাচঁগাও ইউনিয়নসহ ৪টি ইউনিয়নের ১৫০০ পরিবার পনিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কামারখাড়া মুন্সীবাড়ী পয়েন্টে দুই সেতুর সংযোগ সড়কের একাংশ বিলীন হয়ে গেছে।
ফলে কামারখাড়া-আদাবাড়ী এবং দিঘিরপাড়-কামারখাড়া-ভাঙ্গুনিয়া সড়ক দুটি বন্ধ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার জানান, শনিবার থেকে শুরু করে রোববার বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার ১২৫০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়।
এছাড়া পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকূল, রাঢ়ীখাল ও বাঘড়া ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শ্রীনগরে ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
শ্রীনগর ইউএনও মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার জানান, ৩টি ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী উত্তর ভুকৈলাস, দক্ষিন ভূকৈলাস, পূর্ব বাঘেরচর, আশুলিরচর, বানিয়াল মহেশপুর এবং শিলই ইউনিয়নের কাইজ্জারচর ও বেহেরচর গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রাম পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় বন্যা কবলিত হয়ে শত শত পরিবার এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন পীর।
মুন্সীগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বুলবুল জানান, তিন উপজেলার বন্যা কবলিত পরিবারে জন্য এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার বন্যা কবলিত পরিবারের জন্য বরাদ্ধের প্রক্রিয়া চলছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, জেলার বানভাসি পরিবারের জন্য ৬৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লৌহজং, শ্রীনগর ও টঙ্গিবাড়ি উপজেলার ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনও কোন বানভাসি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেনি।
জেলায় ৬৫ মেট্রিক টন চাল, ৭০০ জনের শুকনো খাবার, শিশু এবং গো-খাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..