বিক্রমপুরের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্যের ভান্ডার বিক্রমপুর জাদুঘর

0
0
বিক্রমপুরের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্যের ভান্ডার বিক্রমপুর জাদুঘর

প্রকাশিত : মঙ্গলবার ১৮মার্চ, ২০২৫খ্রিষ্টাব্দ।। ৪ঠা চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্ত কাল)।। ১৭ রমজান, ১৪৪৬ হিজরী।

বিক্রমপুর খবর : নিউজ ডেস্ক : প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। বিক্রমপুরের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এ ছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য সামাজিক সংগঠন ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাসুর গ্রামের ভাগ্যকূলের জমিদার যদুনাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করে। সাবেক জমিদার যদুনাথ রায় দেশত্যাগ করে সপরিবারে ভারত চলে যাওয়ার পরে এখানে ভাগ্যকুল শিশুসদন প্রতিষ্ঠা করা করা হয়। ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অনুপোযোগী হলে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় এবং শিশুদের ১৯৯০ সালে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলে এটি অব্যবহৃত ও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছিল। এর মধ্যেই দুস্কৃতকারীরা বহু মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়ে গেছে। বিক্রমপুরের প্রতিটি জমিদার বাড়িই বেহাত হয়েছে। এটি রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন। সরকারকে বছরে দুই লাখ টাকা লিজের অর্থ পরিশোধ করে এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বিদ্যুত বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলে প্রতিমাসে আরো প্রায় এক লক্ষ টাকার উপরে পরিশোধ করে জাদুঘরটি ১২ বছর যাবত পরিচালনা করে আসছে।

ঢাকার কাছাকাছি পূর্বপুরুষের কৃষ্টি ও কীর্তিময় সময়কে জানতে চলে আসুন “বিক্রমপুর জাদুঘর”-এ
প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এই প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর, গেস্ট হাউস- “পান্হশালা ‘থাইল্যান্ডের মতো বাংলাদেশে একমাত্র ‘’নৌ-জাদুঘর বা বোট মিউজিয়াম” ( Boat Museum), শহীদ মুনীর-আজাদ স্মৃতি পাঠাগার, অগ্রসর বিক্রমপুর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন শ্রীনগর শাখা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
‘আমরা আলোর পথযাত্রী!’ আলোকিত এবং দেশহিতব্রতে উজ্জীবিত মানুষ গড়ে তোলার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্রশক্তি নিয়ে ২৭ বছর পার করেছে। চলার পথে আমরা আপনাদের পরামর্শ, মতামত ও সহযোগিতা কামনা করছি। ‘আপনিও আমাদের সহযাত্রী হোন’ বলে আহ্বান করা হয় অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
ঘুরে আসুন বিক্রমপুর জাদুঘর:-
শত ব্যস্ততার শহরে একটু খোলামেলা জায়গায় দম ফেলার যেন ফুসরত নেই। কাজের ফাঁকে একটু ছুটি পেলেই তাই অনেকেই ছোটেন একটু বিনোদনের জন্য কিংবা ছুটির দিনে নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে রাজধানীর খুব কাছেই বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়েতে (ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে) মাত্র ৫০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ি “বিক্রমপুর জাদুঘর”। বালাসুর চৌরাস্তা থেকে ডানে ঢুকে যাবেন বিলের ধারে প্যারিস শহর জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছে তিন তলা বিশিষ্ট এই “বিক্রমপুর জাদুঘর” এবং একই প্রাঙ্গণে তিন তলা বিশিষ্ট একটি ‘গেস্ট হাউস’।
তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতেই একটি ঢেঁকিশালা এবং দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল বা মটকা দেখতে পাবেন।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় অতিরিক্ত সচিব রেখা রানী বালো বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন
মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন।
নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে।
নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি ইত্যাদি এছাড়া বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।
দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল।
তৃতীয় তলায় তালপাতায় লেখা পুঁথি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী,কাঠের সিন্দুক, আদি আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া ১০০০ বছর আগের বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস
বিক্রমপুরের হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এতদিন। তা এখন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের বৌদ্ধনগরী সহ বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সন্ধান পায় মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার প্রমান করে মাটির নিচে প্রাচীন নগরসভ্যতার আবিষ্কার। ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। এর নির্মাণশৈলী শুধু বাংলাদেশের নয়, মানবজাতির ইতিহাসে বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ হবে। এক সময় ইউনেস্কো এই প্রাচীন নিদর্শনকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবে। এটা প্রত্নতাত্ত্বিক পার্কে রূপ নিবে। গতবছর বাংলাদেশ সকারের সাথে এবং চীন সরকারের সাথে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়েছে।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্যর নিদর্শন নিয়ে একটি গ্যালারীতে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে। রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত কিছু মহামূল্যবান নির্দশন/ছবি এই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। এসব নির্দশন বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে।
নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল
কিউরেটর
গ্রাম-বালাশুর, উপজেলা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..           

‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন