বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ

0
0
বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ

প্রকাশিত : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।।২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।।১১ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।

বিক্রমপুর খবর : লৌহজং প্রতিনিধি :

বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবি

===========(এক)========

বিক্রমপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় (গেজেট প্রকাশ)মোট চার জনের ভেতর তিনজনের বাড়ি শ্রীনগর উপজেলায় আমরা হয়তো শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ ছাড়া বাকি ৩ জনের সম্পর্কে অনেকেই তেমন জানিনা, আমি চেষ্টা করেছি তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে কিছু তথ্য তুলে ধরার __
শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ
নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অকুতোভয় সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অংশ হিসাবে তিনি অপহৃত ও পরে শহীদ হন।
শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাড়ি বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার মাওয়া গ্রামে। বর্তমানে মাওয়া চৌরাস্তার পাশে। তিনি ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সিরাজুল ইসলাম এবং মা ফাতেমা বেগম।
১৯৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর পুরানো ঢাকার ১২ নম্বর রোকনপুরের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও আলবদর বাহিনী। আর সন্ধান মেলেনি তাঁর। নিজামুদ্দীন আহমদের স্ত্রী কোহিনুর আহমদ সেদিনের ঘটনার মর্মস্পর্শী দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছেন স্মৃতি:১৯৭১-এ। (রশীদ হায়দার সম্পাদিত, পুনর্বিন্যাসকৃত প্রথম খণ্ড, বাংলা একাডেমি)। তিনি লিখেছেন, ‘দেখেই আমার বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল। তারা যেন সাপের মতো হিসহিস করছে।…পালিয়ে যাওয়ার তো কোনো পথ নেই! ওরা সদর দরজায়। আমি ভাবছি কোন দিক দিয়ে গেলে নিজাম সাহেবকে আড়াল করা যায়, আর তিনি ভাবছেন ঘরের মেয়েদের যেন কিছু করতে না পারে। তাই ওরা যখন ডাক দিল, তখন আমি বাধা দেওয়ার আগেই তিনি বেরিয়ে এলেন।…ওরা আইডেনটিটি কার্ড দেখতে চায়। উনি দেখান।…তিনি নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে বুকে বন্দুক ধরে বলল হ্যান্ডস আপ। ইংরেজিতে তিনি বললেন, আমাকে হাত ধুয়ে আসতে দাও। কিন্তু দিল না। ততক্ষণে আমার ছেলেমেয়েদের কান্নার রোল শুরু হয়ে গেছে। আমার বড় মেয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছে। ওর বুকে বন্দুক ধরে বলল—“আল্লাহ মাৎ বালো”।’ এরপর ঘাতকেরা সামনে-পেছনে বন্দুক ধরে নিজামুদ্দীন আহমদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।
সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদ ১৯৪৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী লৌহজং উপজেলার কাজির পাগলা এটি ইনস্টিটিউট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন সরকারি হরগঙ্গা কলেজে। হরগঙ্গা কলেজে ছাত্রাবস্থায় তিনি সম্পৃক্ত হন রাজনীতিতে। ১৯৬২ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচন দিলেন। নাজিমুদ্দিন আহমদ সে নির্বাচনে অংশ নিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে। পশ্চিম বিক্রমপুর থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলেন।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা, ৬৯’র ছাত্রদের ১১ দফা ও গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় করাচি থেকে প্রকাশিত ‘সিভিল এন্ড মিলিটারি গেজেট’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক আজাদ, ঢাকা টাইমস, পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। বার্তা সংস্থা এপিপি, ইউপিআই, পিপিআই, রয়টার, এএফপি এবং বিবিসিতেও কাজ করেন নিজামুদ্দীন আহমদ। যুদ্ধ চলাকালীন ঢাকায় তখন বিদেশি গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি ছিলেন। নিজামুদ্দীন তাদের প্রতিদিনই জানাতেন গণহত্যার সবশেষ খবর। তিনি দেশের অভ্যন্তরের ঘটনা ও যুদ্ধের যাবতীয় বর্ণনা নিয়মিত বিবিসি-কে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশি গণমাধ্যমকে জানাতেন, যা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..           

‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

email – bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন