বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষ প্রখ্যাত গীতিকবি নয়ীম গহর এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

0
2
বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষ প্রখ্যাত গীতিকবি নয়ীম গহর এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত : সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল )।। ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি।

বিক্রমপুর খবর : নিউজ ডেস্ক : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা ও সাহস জাগানো গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ এবং ‘নোঙর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’ মুক্তিকামী বাঙালির মুখে মুখে ফিরত। কালজয়ী এমনি বহু গানের গীতিকবি নয়ীম গহর। যেসব গান আজো বাঙালির হৃদয়ে মুগ্ধতা ও প্রেরণায় লেপটে আছে।

বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা ছিল এ গীতিকবির। বরেণ্য এ গীতিকার মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপ্লব আর দেশপ্রেমের অনেক গান রচনা করে স্বাধীনতাপ্রেমী যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে মুক্তির মন্ত্রে ব্রত করেছিলেন।
বহু কালজয়ী দেশাত্মাবোধক গানের গীতিকার নয়ীম গহরের গীতিকার পরিচয়ের বাইরেও তার ছিল অনেক পরিচয়। গান লেখার পাশাপাশি একজন ঔপন্যাসিক, গায়ক, নায়ক, নাটক রচয়িতা, বিবিসির (লন্ডন) বাংলা ভাষ্যকার ও খবর পাঠক অনেক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। কিন্তু স্বভাবগতভাবেই তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ।
আজ ৭ অক্টোবর প্রখ্যাত এই গীতিকবির ৯তম প্রয়াণ দিবস। হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা অবস্থায় ২০১৫ সালের এই দিনে ৭৮ বছর বসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।
নয়ীম গহর ১৯৩৭ সালের ১৫ আগস্ট বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। কলেজ জীবনেই প্রথম শ্রেণির ইংরেজি পত্রিকা ‘অবজারভার’ এ ইংরেজি কবিতা দিয়ে তিনি নিজের প্রতিভা প্রকাশ করেন।
১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একটা সময় চাকরি নিয়ে তিনি দেশের বাইরে গেলেও ফিরে এসেছেন মাটির টানে। যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন যোদ্ধা হিসেবে। আর সৃষ্টি করেছেন বহু আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়স্পর্শী গান। একজন ভালোমানের চিত্রকরও ছিলেন তিনি।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিদগ্ধ এই শিল্পমানব আজন্ম সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। সর্বমহলে পরিচিতি পেয়েছিলেন আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণী গান রচনার মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালে অগ্নিঝরা দিনগুলোতে তার লেখা ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’, ‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি’, ‘পূবের ঐ আকাশে সূর্য উঠেছে’, ‘জয় জয় জয় জয় বাংলা’সহ অন্যান্য গান একটি মুক্ত-স্বাধীন দেশ গড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নয়ীম গহরের। স্বাধীনতার জন্য শুধু গান রচনা করেই মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেননি, জীবন বাজি রেখে ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর জরুরি বার্তা অতিগোপনে চট্টগ্রামে এম আর সিদ্দিকীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন নয়ীম গহর।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের আগেই নিজের লেখা দেশাত্মবোধক গানগুলো গোপনীয়তার সঙ্গে রেকর্ড করেছিলেন করাচী গিয়ে। তার সঙ্গে ছিলেন সুরস্রষ্টা আজাদ রহমানও। দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি তিনি দুই শতাধিক গানের কথা লিখেছেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি সংস্কৃতির অন্যান্য শাখাতেও নিজস্ব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন।
নয়ীম গহর বাংলাদেশে টেলিভিশনে প্রচারিত প্রথম নাটকের রচয়িতা। স্বাধীন বাংলাদেশে তার রচিত প্রথম নাটক ‘পাখি আমার জয়ন্ত’ বিটিভিতে প্রচারিত হয়। নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন নিজের ছেলের নামে। প্রসঙ্গত, জয়ন্ত তার ছেলের নাম। নাটকটির পরিচালক ছিলেন আবদুল্লাহ-আল-মামুন। প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলেন সুজাতা ও গোলাম মুস্তাফা।
এছাড়া দেশের প্রথম সর্বাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানও শুরু হয় তার হাত ধরে। ফজলে লোহানী ও নয়ীম গহর মিলে একটি নতুন ধারার টিভি অনুষ্ঠান করেন ‘যদি কিছু মনে না করেন’ শিরোনামে। ‘ইচ্ছে করেই যারা ভুল করেন, জেনেও না জানার ভান করেন, তাদের কিছু ভুল বুঝিয়ে দেব’ এ গানটিও তারই রচনা।
অনেক কবিতা ও ছোট গল্প রচনা করেছেন যা বিভিন্ন সময় অনেক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। তার প্রকাশিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে ‘শব ও স্বগতোক্তি’ এবং ‘নিষিদ্ধ বিছানা’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ‘রাহুগ্রাস’ নামে তার একটি গল্পগ্রন্থ রয়েছে। গুণী এই গীতিকারের অসংখ্য লেখা এখনো অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
সঙ্গীতশিল্পী তাজরীন গহর এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণী অভিনয়শিল্পী ইলোরা গহর তার কন্যা। স্ব স্ব অবস্থানে তারা খ্যাতিমান। নয়ীম গহরকে ২০১২ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ দেওয়া হয়। মৃত্যুর পর মেয়ে অভিনেত্রী ইলোরা গহরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। গুণী এই গীতিকবির প্রয়াণ দিনে তার বর্ণিল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

 

(বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।       

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন