বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষ সত্যেন সেনের ৪৪ তম প্রয়াণ দিবস আজ

0
0
বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষ সত্যেন সেনের ৪৪ তম প্রয়াণ দিবস আজ

প্রকাশিত :রবিবার, ৫জানুয়ারি, ২০২৫, খ্রিষ্টাব্দ।। ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শীতকাল)।। ৪ রজব, ১৪৪৬ হিজরী।

বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, সংগঠক সত্যেন সেনের আজ ৪৪তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৮১ সালের এই দিনে (০৫ জানুয়ারি) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।সত্যেন সেনের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে উদীচী’র নেতা-কর্মীরা প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও এই দিন্ট মর্যাদা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় পালন করছেন বলে জানা যায়।সত্যেন সেনের সংক্ষিপ্ত জীবনী-আজীবন সংগ্রামী সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার) টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সত্যেন্দ্রমোহন সেন। ডাকনাম লংকর। বাবার নাম ধরণীমোহন সেন। মাতা মৃণালিনী সেন। চার সন্তানের মধ্যে সত্যেন সেন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

১৯২৪ সালে সোনারং হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন তিনি। কলেজজীবনে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নাম লেখান ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী দল ‘যুগান্তর’-এ।কলেজ থেকে এফএ ও বিএ পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস বিভাগে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
এমএ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ১৯৩১ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে। তিন মাস জেল খেটে তিনি মুক্ত হলেন বটে, কিন্তু পরের বছরই ব্যাপক পুলিশি নির্যাতনে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। খুলনায় যুগান্তর পার্টির সঙ্গে কাজ করার সময়ে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।ব্রিটিশ শাসনামলে সত্যেন সেন কারাবরণ করেছেন তিনবার: ১৯৩১, ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে। শেষবার পাঁচ বছর জেল খাটেন। ১৯৩৮ সালে মুক্ত হওয়ার পর ভাষাতত্ত্বে গবেষণার জন্য শান্তিনিকেতন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় ‘গবেষণা বৃত্তি’। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এক সমাবেশে শহীদ হন ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী কথাশিল্পী সোমেন চন্দ। এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সত্যেন সেন কার্যকর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ‘কৃষক সমিতি’র মাধ্যমে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৃষক সমিতির নেতা-কর্মীকে নিয়ে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় কাজ করেন তিনি। ১৯৪৬ সালে আইনসভার নির্বাচনে কমিউনিস্ট নেতা ব্রজেন দাস ঢাকা থেকে প্রার্থী হন। ব্রজেন দাসের পক্ষে সত্যেন সেন নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারত সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সত্যেন সেন।ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৪৯ সালে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য তাঁকে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী গ্রেপ্তার করে।
পাঁচ বছরের দীর্ঘ কারাভোগের শেষ মুক্তি পান। আবার গ্রেপ্তার হন ১৯৫৪ সালে ৯২(ক) ধারা জারির পর। পরের বছর ছাড়া পেয়ে যোগ দেন ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে। সে সময় তিনি ‘বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি’ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখতেন। আড়াই বছর পর ‘সংবাদ’-এর চাকরিতে সাময়িক বিরতি। কারণ, ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে আইয়ুবের সামরিক সামরিক শাসন জারি হলে জেলে যেতে হয় তাঁকে। পাঁচ বছর জেল খেটে ১৯৬৩ সালে মুক্তি পান।
আবার যোগ দেন ‘সংবাদ’ পত্রিকায়।১৯৬৫ সালে আবার গ্রেপ্তার হন সত্যেন সেন। তিন বছর পর মুক্তি পান ১৯৬৮ সালে। ওই সময় কারাগারে কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীদের প্রতি ভয়ানক মাত্রায় অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হতো। কমিউনিস্ট নেতা-কর্মী কাউকে পেলেই শাসকগোষ্ঠী অমানবিক অত্যাচার শুরু করে দিত। সত্যেন সেনকেও কারা প্রশাসন নানা অত্যাচার ও নির্যাতন করেছিল। যার ফলে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা ও চোখের পীড়া দেখা দেয়।
কারাবাসে অবস্থানকালে সত্যেন সেন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ মতাদর্শ ও দর্শনকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে আজীবন শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লড়াই-সংগ্রাম করেছেন।
১৯৬৯ সালে রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ নিয়ে উদীচী প্রতিষ্ঠা করেন সত্যেন সেন। মানুষের মুক্তির সংগ্রামে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের জন্য উদীচী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সত্যেন সেন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের আদর্শে পথ চলছে।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে উদীচীর নেতা-কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন সত্যেন সেনও। তবে সশস্ত্র যুদ্ধ তিনি করেননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেশের ভেতরে বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। যুদ্ধের নানা ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। সেগুলো পাওয়া যাবে তাঁর ‘প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ’ গ্রন্থে।আগস্ট ১৯৭১ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ২২টি অধ্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনিগুলো একে একে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একপর্যায়ে তাঁর চোখের পীড়া আরও গুরুতর রূপ নেয়। তিনি প্রায় অন্ধ হতে চলেন। এ সময় কমিউনিস্ট পার্টি তাঁকে চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য মস্কো পাঠায়। এখানে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন দেশের বিপ্লবীদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করেন। তাঁরাও নিজ নিজ দেশে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি জানান। মস্কো হাসপাতালে অবস্থানকালে তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সংবাদ পান। সেখানকার বাঙালিদের মুক্তির উল্লাস প্রত্যক্ষ করেন। তিনি নিজেও অশ্রুসিক্ত নয়নে ওই আনন্দ উপভোগ করেন।
মুক্ত, স্বাধীন স্বপ্নের স্বদেশ, বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালে।স্বাধীনতার পর তিনি উদীচী পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন।
সাহিত্যচর্চাও অব্যাহত রাখেন। সংগীতের মাধ্যমে মানুষকে জাগরিত করা সহজ, এই উপলব্ধি নিয়েই গণমানুষের জন্য মানুষের জীবনবাস্তবতার গান রচনা করেছেন তিনি। তাঁর গানের মূল বিষয়বস্তু হলো অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, শোষণমুক্তির জন্য আন্দোলন ও সাম্য-সুন্দর মানুষের পৃথিবী নির্মাণ। তিনি যে কেবল গান লিখেছেন, তা নয়, পাশাপাশি গানের সুর করা ও গান শেখানোর কাজও করেছেন।শ্রমিকদের নিয়ে তিনি গান ও পালা রচনা করতেন। গানের দল গঠন করে শ্রমিকদের কবিগান তিনি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ পরিবেশন করতেন।
তাঁর লেখা গানগুলোর মধ্যে ‘চাষি দে তোর লাল সেলাম/ তোর লাল নিশানারে’ গানটি তখন চাষিদের প্রাত্যহিক সংগীত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১৯৫৬ সালে বিক্রমপুরের ষোলঘরে কৃষক সমিতির সম্মেলনে প্রথম তাঁরই নেতৃত্বে গানটি গাওয়া হয়।
May be pop art of 1 person
See insights and ads

পোস্টের প্রচার করুন · Boost post
All reactions:

1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..           

‘‘আমাদের বিক্রমপুর- আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন- বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন