প্রয়াত শিল্পী বুলবুল মহলানবীশের প্রতি অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের শ্রদ্ধাঞ্জলি 

0
42
প্রয়াত শিল্পী বুলবুল মহলানবীশের প্রতি অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের শ্রদ্ধাঞ্জলি 

প্রকাশিত: সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩।। ২ শ্রাবণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)।। ২৮ জিলহজ, ১৪৪৪ হিজরি।। বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক : বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশের প্রতি অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

আজ ১৭ জুলাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, প্রখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী, লেখক, মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশকে বেলা ১১টার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর এক এক করে অনেক সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের পক্ষে অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালেক ভূইয়া, কথা সাহিত্যিক ঝর্না রহমান, আমি নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল, মোঃ কবির ভূঁইয়া কেনেডি, মোঃ আবু হানিফ, মুজিব রহমান ও ফেরদাউসী কুইন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী বলেন, ‘স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের দুজন চলে গেলেন একই দিনে। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আশফাকুর রহমান খান ও শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। তাদের দুজনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল।’

চলে যাওয়ার পর মরণোত্তর পদক দিয়ে লাভ নেই উল্লেখ করে তিমির নন্দী বলেন, মারা যাওয়ার পরে হয়তো সরকার মূল্যায়ন করে রাষ্ট্রীয় পদক দেবেন। কিন্তু আমার অনুরোধ, যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে অবদান রেখেছেন, এখনো যারা জীবিত আছেন, তাদের দিকে একটু তাকান। চলে যাওয়ার পর মরণোত্তর দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ সেই আনন্দটা যদি বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে না পারল, সেই পদক দিয়ে তো লাভ নেই। তাই সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় যারা আছেন, তাদের ভাবার বিষয় যে, জীবিত থাকতেই যেন গুণিজনদের মূল্যায়ন করা হয়।

বুলবুল মহলানবীশ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চা করতেন। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে আমাদের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি কেবল সংগীতশিল্পী ছিলেন না, অভিনেত্রীও ছিলেন। তিনি নাটকে অভিনয় করেছেন। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে কল্যাণ মিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’ নাটকে তিনি অভিনয় করতেন। এই নাটকটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। হঠাৎ করেই চলে গেলেন তিনি। তার চলে যাওয়াতে আমরা একজন সহযোদ্ধাকে হারালাম, তেমনি দেশ একজন রত্ন হারাল। আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল তার কাছ থেকে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশের মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয় এবং শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন উপস্থিত অনেকে। সবশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয়।

 

এ সময় বুলবুল মহলানবীশের স্বামী সরিত কুমার লালা বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা বুলবুল চেয়েছিল। একটা কথা আমার মনে হয়, বুলবুল প্রচণ্ড জীবনমুখী ছিল। একটা পূর্ণজীবন সে যাপন করতে চেয়েছিল। কোনো রকমে বেঁচে থাকা, এটা তার ধাঁচে ছিল না। গত দুই বছর কিন্তু সেই জীবন সে যাপন করতে পারেনি। সে বেঁচে ছিল, কিন্তু মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বুঝতে দিত না, কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম।’

গুণী এই শিল্পীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, কচি-কাঁচার মেলা, সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় নারী কমিটি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, থিয়েটার ৫২, মহিলা পরিষদ, ছায়ানট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, স্বনন, বাংলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নবান্ন উদযাপন পর্ষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে শ্রদ্ধা জানান। তাদের মধ্যে ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, আবুল বারক আলভী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আশরাফুল আলম, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শাহীন সামাদ, সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ।

 

শ্রদ্ধা নিবেদন করে সাংস্কৃতিক সংগঠক ও নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘যে চেতনা নিয়ে বুলবুল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সেই চেতনা কিন্তু সারা জীবন বহন করেছে। আমরা দেখেছি, অনেক বিরূপ পরিস্থিতিতেও বুলবুল মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছে। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গান গেয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। বুলবুল চলে গেছে অনন্তলোকে, কিন্তু তার কথা আমরা সবাই মনে রাখব। তার হাসিমুখ এখনো অমলিন রয়েছে গেছে, দেখলে মনে হয় যেন ঘুমিয়ে আছে। এখনই বোধহয় তার কণ্ঠে গান ধ্বনিত হয়ে উঠবে। বুলবুলের যে আদর্শ আমরা যেন সেটা সমুন্নত রাখতে পারি। বুলবুলকে গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাই।’

 

সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ‘বুলবুলকে চিনি সেই ছোটবেলা থেকে। সে মনেপ্রাণে ভালোবাসত বাংলাদেশকে, মনেপ্রাণে ভালোবাসত মুক্তিযুদ্ধকে। এত পারিবারিক একটা মানুষ, এত সামাজিক একটা মানুষ। কারো বিপদে-আপদে বুলবুল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আজকে বুলবুলের মরদেহের সামনে আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। অথচ আমাকে নিয়ে তার কথা বলার কথা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যত দিন থাকবে, তত দিন সে থাকবে আমাদের মাঝে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘যে কজন মানুষ আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জীবনযাপন করেছেন, বুলবুল তাদের একজন। অনেকের জন্য ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধটা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু বুলবুলের জন্য ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধটা শেষ হয়নি। আর শেষ হয়নি বলেই আমাদের সব আন্দোলনে, সব সংগ্রামে সে সামনে থেকেছে। রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে উপাদানগুলো অনুপস্থিত বা খামতি ছিল, সেগুলোকে যেন বিকশিত হয়, সে লক্ষ্যে বুলবুল সংগ্রাম করে গেছে। আমৃত্যু লড়াকু শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ।’ বুলবুল মহলানবীশের পরিবার থেকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালী মন্দিরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়া কথা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..

‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

নিউজ ট্যাগ:

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন