প্রকাশিত:মঙ্গলবার,০৭ মে ২০১৯।২৪বৈশাখ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর:অনলাইন ডেস্ক: দেশে প্রথম সফলভাবে ডিজিটাল করে ফেলা হয়েছে পাবনা সদরের একটি ক্লাস্টারের সার্বিক কার্যক্রম। ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ক্লাস্টারে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর (ক্লাস্টার)-এ চালু হওয়া এই ব্যবস্থাকে প্রথম ডিজিটাল শিক্ষা প্রশাসন হিসেবে মনে করছে পাবনার স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর।
একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আসলাম হোসাইনের হাত ধরেই শুরু হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই সুদূরপ্রসারী স্বপ্নযাত্রা। তার দায়িত্বে থাকা ক্লাস্টারের অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আনাগোনা রেকর্ড পর্যন্ত ডিজিটাইজড করে ফেলেছেন তিনি।
নিজ অফিসে বসে কাজ করছেন পাবনা সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আসলাম হোসাইনএ ব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আসলাম হোসাইনের অনেকগুলো ভালো ইনোভেশন রয়েছে। সারাদেশে তার মতো অফিসার প্রয়োজন। আমি জানি না এর চেয়েও ভালো কিছু কেউ করেছে কিনা। কিন্তু পাবনা জেলায় এই একটি ক্লাস্টারেই প্রথম অনলাইনভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আমার জানা মতে, এটিই প্রথম।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা সারাদেশেই ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাচ্ছি। এমন ভালো উদ্যোগ সারাদেশে বাস্তবায়ন করতে চাই। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররাই একেকটি ক্লাস্টারের প্রধান। প্রতিটি ক্লাস্টারকে যদি ডিজিটাল করতে পারি, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর যে চাওয়া তা পূরণ হবে। আজ যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে, তারাই ২০৪১ সালের বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে। এই উদ্যোগটি সবক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য করা গেলে আমরা সারাদেশেই বাস্তবায়ন করবো।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার জানা মতে, দেশের কোনও ক্লাস্টার অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে না। আমরা সারাদেশের শিক্ষা প্রশাসন মনিটরিং সিস্টেম চালু করেছি। অনলাইন হাজিরা চালু হয়েছে, যদিও সব প্রতিষ্ঠানে এখনও হয়নি। তবে তৃণমূলের শিক্ষা প্রশাসনের এই উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য হলে অধিদফতর তাকে সহায়তা করবে। আমরা সারাদেশে এমন উদ্যোগ চাই।’
অনলাইনেই ছুটি মঞ্জুর করছেন সহকারী শিক্ষা অফিসার ২সদর উপজেলার বালিয়াহালট ক্লাস্টার দেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের সব চেয়ে নিম্নতম স্তর হচ্ছে ক্লাস্টার। একটি ক্লাস্টার গঠন হয় কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে। এর দেখভালের দায়িত্বে থাকেন সহকারী থানা/উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এমনই একটি ক্লাস্টার পাবনা সদরের ‘বালিয়াহালট ক্লাস্টার‘। এই ক্লাস্টারের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা আফিসার মো. আসলাম হোসাইন।
এই ক্লাস্টারের ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি সরকারি শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২২টি বিদ্যালয় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অফিসে বা ঘরে বসেই শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ছুটি নেন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বা ই-মেইলের মাধ্যমে। শিক্ষককের বিভিন্ন কর্মসূচি, শিক্ষকদের দৈনিক উপস্থিতি, বিদ্যালয়ের যে কোনও তথ্য আদান-প্রদান ও উপবৃত্তির তথ্য লেনদেন হয় ম্যাসেঞ্জারে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের আদেশ নির্দেশনা, পরিপত্র, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ আদেশ-নির্দেশনার তথ্য লেনদেন করা হয় ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও ই-মেইলের মাধ্যমে। পাঠদানে দুর্বলতা থাকলে অন্য শিক্ষক বা শিক্ষা অফিসারের সহায়তা হয় ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে। অনলাইনে এর ঠিকানা হচ্ছে https://baliahalotcluster.com.cutestat.com
অনলাইনে ছুটি মঞ্জুরযেভাবে অনলাইন কার্যকম শুরু
২০১৮ সালের প্রথম দিক থেকেই বালিয়াহালট ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনলাইন সার্ভিস চালুর জন্য প্রস্তুতি নেন সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আসলাম হোসাইন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে তার ইনোভেশন প্রস্তাব জমা দেন। ইনোভেশন প্রস্তাব ছিল প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনলাইন সার্ভিস চালু করা। প্রস্তাব জমা দিয়ে জুন মাস থেকে শিক্ষকদের প্রস্তুত করতে শুরু করেন। শিক্ষকদের ইমেল অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। ই-মেইল পরিচালনা শেখানোর পর ফেসবুক একাউন্ট খুলে দেন শিক্ষকদের। যদিও অনেক শিক্ষককের এই বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল। এরপর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার টিমের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এই কর্মকর্তা। এরপর থেকে শিক্ষকদের ছুটি, সরকারি তথ্য আদান-প্রদানসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ চলে ম্যাসেঞ্জার ও ইমেইলের মাধ্যমে। অনলাইনেই চলতে থাকে শিক্ষকদের মনিটরিংসহ সব কার্যক্রম।
মো. আসলাম হোসাইন জানান, ইনোভেশন প্রস্তাব জমা দেন ২০১৮ সালের মাঝামাঝি। অনুমোদনও দেওয়া হয়। ইনোভেশন কার্যক্রমের কার্যক্রমের মেয়াদ রয়েছে ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যদিও নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশিরভাগ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
ওয়েবসাইটভিত্তিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইন সার্ভিস চালুর পর শিক্ষক মনিটরিং এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রদের মনিটরিংসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ অনলাইনভিত্তিক করার পরিকল্পনা নেন সহকারী শিক্ষা অফিসার। পাইলচ বালিয়াহালট ক্লাস্টারের ২২টি স্কুলে জন্য ‘মাল্টি স্কুল ম্যজেমেন্ট’ (ক্লাস্টার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শুরু করা হয়। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আসলাম হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সাব ডোমেইনে (school3.iitinstitute.com) ওয়েবসাইট তৈরি করে শিক্ষকদের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই। পাইলট হিসেবে কাজটি সফল হলে বালিয়াহালট ক্লাস্টারের নামে ওয়েবসাইট নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি স্কুলের শিক্ষকদের প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রস্তুত করা হবে।
মো. আসলাম হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাল্টি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষকদের মনিটরিংসহ অফিসিয়াল কাজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। শিক্ষকদের ছুটি দেওয়া থেকে অনলাইনেই সব সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই প্রযুক্তি সিঙ্গেল স্কুল ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে যুক্ত করে সব ধরনের সুবিধা নেওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র, প্রসংশাপত্র অনলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে। কোনও শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকের মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অভিভাকদের কাছে তার সন্তানের তথ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে এই পদ্ধতিতে। এটি শুরু করতে শিক্ষকদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মুভমেন্ট রেজিস্টার
অনলাইনে সব সার্ভিস চালু করা হলেও শিক্ষকদের মনিটরিংয়ে অন্য সব ব্যবস্থাও চালু রয়েছে ক্লাস্টারের সব বিদ্যালয়ে। কেবলমাত্র জরুরি না হলে শিক্ষকরা কোথাও যাবেন না বিদ্যালয় ছেড়ে। কারণ অনলাইনেই সব কাজ শেষ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠ ব্যাহত না হয় সে জন্য।
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মো. আসলাম হোসাইনের ইনোভেশন কার্যক্রম পুরো বাস্তবায়নের আগেই পাবনা সদর থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার বদলি করা হয়েছে।
সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মির্জ্জা গোলাম মহম্মদ বেগ বলেন, ‘প্রথম ডিজিটাল প্রশাসন সদর উপজেলার এই ক্লাস্টারে চালু করা হয়েছে। আমার জানামতে তৃণমূলে দেশের প্রথম ডিজিটাল শিক্ষা প্রশাসন এটি।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন