প্রকাশিত: শনিবার,২১ নভেম্বর ২০২০ইং ।। ৬ই অগ্রাহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ৫ই রবিউস-সানি,১৪৪২ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ, মাওয়া থেকে : ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়। এই পদ্মাসেতুর কাঠামোটি পৃথিবীর অন্যতম একটি কাঠামো এবং স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড়কাঠামো এটি।
যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে স্থাপন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। পাল্টে দেবে শরীয়তপুর মাদারীপুরে এবং মুন্সিগঞ্জ, মাওয়া প্রকল্প এলাকার চেহারা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এলাকার পর্যটন খাতে যা যোগ করবে নতুন মাত্রা। বিশেষ করে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রকল্প এলাকায় নির্মিত সার্ভিস এরিয়াগুলোর কাজ শেষে সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হলে তার সুফল পাবেন দেশের পর্যটনপ্রেমীরা।
চলছে স্প্যান এরিয়া নির্মাণের কাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই স্প্যান ও এরিয়া নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এ যেন ধীরে ধীরে গড়ে উঠা এক নতুন শহর। অজস্র স্বপ্নকে বুকে নিয়ে যা জেগে উঠছে উত্তাল পদ্মা নদীর উভয় পাড়ে।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত যে স্বপ্ন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে দেশের অন্য জেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার হবে। দেশের অথর্নীতি আয় বাড়বে।
এদিকে পদ্মাসেতুর কাজের সুবিধার জন্য ২০১৪ সালের শুরুতেই মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং মাদারীপুরে গড়ে তোলা হয়েছিল তিনটি সার্ভিস এরিয়া। দেখতে সেগুলো কে দূর থেকে পর্যটন কেন্দ্র মনে ধরার মতো।
মূল সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, এর মধ্যে এক ও দুই নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় মূল সেতু, নদী শাসন প্রকল্প ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা থাকছেন। ৩ নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের। আপাতত এই ৩টি সার্ভিস এরিয়া দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞদের আবাসন এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হলেও এগুলোকে ঘিরেই পদ্মার দু’পাড়ে গড়ে উঠছে পর্যটন সম্ভাবনা। বিশেষ করে ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়াটিকে পুরোপুরি গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটনবান্ধব করে। ৩ টি সার্ভিস এরিয়া নির্মাণে সার্বিক তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
চলতি বছরের মধ্যেই নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা।
সেতুর কাজ শেষ হলে ৭৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে নির্মিত ২ নম্বর সার্ভিস এরিয়ায় পর্যটকদের জন্য থাকবে আবাসনের পাশাপাশি আধুনিক সব সুবিধাই। চলতি বছরের মধ্যেই নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করা হলে সার্ভিস এরিয়াগুলো সেতু বিভাগের হাতে হস্তান্তর করবে সেনাবাহিনী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী। আসছে প্রয়োজনীয় ভারী ভারী যন্ত্রপাতি। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার শ্রমিক আর কর্মকর্তার থাকার জন্য মাওয়া ও জাজিরা পাড়ের প্রান্তে বানানো আছে বড় বড় ঘর। এ গুলোকেও নির্মাণকাজ শেষে অনুষ্ঠানিক বাবে হস্তান্তর করবে সেনাবাহিনী-সেতু বিভাগের হাতে।
প্রথম শুরু হওয়া মূল পাইলিংয়ের কাজ শেষে ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে এখন বকি ৪টিমাত্র। সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে ৩৮তম স্প্যান ও ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে ৩৯তম স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। গত ১১ নভেম্বর বুধবার পদ্মা সেতুতে ৩৭তম স্প্যান বসানোর ফলে দৃশ্যমান হয়েছে ৫ হাজার ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। তারও পূর্বে মাওয়া প্রান্তের ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে ৩৬তম স্প্যানটি বসানো হয়েছে।
পদ্মার বোকে ৩ মিটার ব্যাসের ৪শ’ ফুট দীর্ঘ পাইলটির ৪০ ফুট ভেতরে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে নদীর মাঝে মাঝে চলছে ড্রেজিং-ও পিলার পাইলিং অন্তর অন্তর এ সেতুর পাইলগুলোর ১২০ মিটার বা ৪০ তলা ভবনের সমান কাঠামো পানির নিচে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে সেতুটির একেকটি পাইলের দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। পাইলগুলো আকারে হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেমনি এগুলো যাবে সবচেয়ে বেশি গভীরে। অন্যদিকে এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে বড় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যেটি হয়তো ইতিহাস হয়ে থাকবে। সরকারের ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দাতা দেশগুলোর অন্যায় হস্তক্ষেপ প্রবণতা কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাওয়া পয়েন্টে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়কে থাকা ব্রিজ, সংযোগ সড়কের পাশের সার্ভিস রোড তৈরি, ড্রেজিং ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ। শেষে ভারী ভারী নির্মাণ যন্ত্রগুলো বিদায় নিচ্ছে ।
মাওয়া পয়েন্টের পাথর ভাঙা, মাটি কাটা, মাটি ভরাট করা, রাস্তা সমান করার কাজ-ওয়েল্ডিং এর আলোর ঝলকানি আর ভারী যন্ত্রপাতির শব্দে কর্মমুখর পদ্মার পাড় পাশাপাশি অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে পুরোদমে।
এদিকে এ সেতুর কাজ পর্যবেক্ষণে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দল এসেছেন কয়েক দফা এবং এই বিশেষজ্ঞ প্যানেল সেতু এলাকায় উভয় পাড়ে দু’দিন বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে থেকেই তার পর থেকে, নতুন গতি পেয়ে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ হাজার কর্মীর নিরন্তর কাজ করছেন। ২০ হাজারের ১৮ হাজার বাংলাদেশি। আর দু’হাজার বিদেশির। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি নারী কর্মীরাও।
পালাক্রমে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে তারা। এই ২০ হাজারের বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছে দু’পাড়ে ২ হাজার সেনা সদস্য। এছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনতো রয়েছেই।
সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ,বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১০৯ তম বোর্ড সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন ‘পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়। এটি এখন দৃশ্যমান বাস্তব। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’ পদ্মা সেতুর অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রত্যাশিত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ ভাগ।
ইতোমধ্যে ৩৭টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ৫.৫৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে ,নদীর স্রোত প্রত্যাশিত লেভেলে থাকলে বাকি ৪টি স্প্যান ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে স্থাপন করা হবে। তিনি আরোও জানান মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে শত করা প্রায় ৯১ ভাগ। এছাড়া নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৮২ ভাগ।
বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব তথ্য পাশাপাশি তিনি আরো জানান, সরকারের বিরুদ্ধে ও পদ্মাসেতুকে নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। ফেসবুক-ইউটিউবে গুজব-অপপ্রচার চলছে। এ সব গুজব ষড়যন্ত্র কে পিছনে রেখে।
পদ্মা পাড়ের বিপুল জনগণের অধীর আগ্রহের অবসান ঘটিয়ে শুভযাত্রায় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ।
প্রকল্পের নাম: পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প
প্রকল্পের বিভিন্ন উপাত্তসমূহ
ক) মূল সেতু
খ) নদীশাসন কাজ
গ) জাজিরা সংযোগ সড়ক ও আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা
ঘ) মাওয়া সংযোগ সড়ক ও আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা
ঙ) সার্ভিস এরিয়া-২
চ) পুনর্বাসন
ছ) পরিবেশ
জ) ভূমি অধিগ্রহণ
ঝ) সিএসসি (মূল সেতু ও নদীশাসন)
ঞ) সিএসসি (সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২)
ট) ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট এন্ড সেফটি টিম (ইএসএসটি)
মূল সেতু (৬.১৫ কি:মি: দৈর্ঘ্য)-
ঠিকাদার : চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, চায়না।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor