প্রকাশিত:বৃস্পতিবার,১২ মার্চ, ২০২০ ইং ।। ২৮ ফাল্গুন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর :নিজস্ব সংবাদদাতা মাওয়া :পদ্মা সেতুর ২৬তম স্প্যান ১০মার্চ মঙ্গলবার বসানো হয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে এই স্প্যান। আর এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর প্রায় ৪ কিলোমিটার। ২৫তম স্প্যান বসানোর ১৯ দিনের মাথায় ২৬তম স্প্যানটি বসানো হলো। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার সময় স্প্যানটি বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়।
এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতুতে বসানো হয় ২৫তম স্প্যান। স্প্যানটি বসানোর খবর নিশ্চিত করেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল কাদের মুরাদ। তিনি জানান, সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটি ক্রেনে করে জাজিরা প্রান্তের দিকে রওনা দেয়। দুপুর ২টার দিকে জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের কাছে পৌঁছে স্প্যানটি। গতকাল ভোরে স্প্যানটি খুঁটির ওপর উঠানোর কাজ শুরু করে সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিলারে রাখা হয়েছে ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। স্প্যানগুলো চীন থেকে তৈরি করে আনা হয়।
পদ্মা সেতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, সোমবার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের ২৬তম স্প্যানটি বসানোর জন্য ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান-ই’ ভাসমান ক্রেনে করে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করে জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারের কাছে নোঙ্গর করে রাখার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার স্প্যানটি বসানো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে স্প্যান বসানো হলে ২০২০ সালের জুলাই নাগাদ ৪১টি স্প্যান বসানো শেষ হবে।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, সেতুর মোট ৪২টি পিলারের মধ্যে বর্তমানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৮টির। সেতুতে ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৭৩৮টি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৩৪৪টি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে চীন থেকে মাওয়ায় এসেছে ৩৪টি স্প্যান। এর মধ্যে ২৬টি স্প্যান বসে গেছে।
এর আগে ১৪ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসানো হয় ২১তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তে বসানো হয় ২২তম স্প্যান। গত মাসের ২ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৩তম স্প্যান। ১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪তম স্প্যান। আর ২১ ফেব্রুয়ারি ২৫তম স্প্যান বসানো হয়।
নদীর জাজিরা প্রান্তে যোগ হলো পদ্মা সেতুর আরও একটি স্প্যান। ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে সেতুর ২৯ ও ৩০ নম্বর পিলারের ওপর এ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো পৌনে চার কিলোমিটার সেতু।
পুরো সেতুর ২৫টি স্প্যানের মধ্যে শুধু জাজিরা প্রান্তেই টানা দৃশ্যমান করা হলো ১৩টি স্প্যান। নির্ধারিত স্প্যান প্রস্তুত হয়ে গেলে মাওয়া প্রান্তেও কাজ এগিয়ে নেয়ার কথা বললেন প্রকল্প পরিচালক।
জাজিরা প্রান্তে আগেই এক সাথে দৃশ্যমান করা আছে ১২টি স্প্যান। তার পাশেই যোগ করা হবে নতুন একটি স্প্যান। তাই এ প্রান্তে টানা ১৩তম স্প্যানটি বসানোর প্রস্তুতি সারা হয় সকাল সকালই।
মাওয়ার কুমারভোগ ইয়ার্ড থেকে রওয়ানা দেয়া ক্রেন নির্ধারিত পিলারের কাছে আনতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় প্রায় ৪ কিলোমিটার দুরত্ব। ৩৬শ মেট্রিক টন ওজনের স্প্যানটি বয়ে আনা হয় অত্যাধুনিক ক্রেন তিয়াই ইউ’এর মাধ্যমে। সময় লাগে তাই সব মিলে ঘন্টাখানেকের বেশি।
নির্ধারিত পিলারের কাছে আনার পর শুরু হয় নতুন স্প্যান যোগ করার প্রক্রিয়া। ক্রেনের দুই পাশে টানা হয় মোটা কেবল।
চীনের প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে বাংলাদেশের শ্রমিকরা সেরে নেন কেবল টানার কাজ। বাকি কাজটা যন্ত্রের। বয়ে আনা ক্রেন দিয়েই স্প্যানটি পিলারের সমান উচ্চতায় তোলা হয়। তারপর টেনে এনে বসিয়ে দেয়া হয় আগের ১২টি পিলারের সাথে। দৃশ্যমান তাতে ৩ হাজার ৭৫০ মিটার পদ্মা সেতু।