প্রকাশিত : শুক্রবার,৫ জুলাই ২০২৪ ইংরেজি, ২১ আষাঢ়,১৪৩১বাংলা(বর্ষা কাল),২৮ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি
বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক :বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অবিস্মরণীয় সংযোজন পদ্মা সেতু। অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব বিবেচনায় এই সেতু উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি উদ্বোধনের দুই বছরেই নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগে বদলে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের চিত্র। মানুষের জীবন ও কর্মের ওপর ফেলেছে ইতিবাচক প্রভাব।২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সড়কপথ এবং ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর চালু হয় রেলপথ। বাকি ছিল নদী শাসনসহ কারিগরি কিছু কাজ। এখন প্রকল্পের সেসব কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে শুক্রবার (০৫ জুলাই)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে মাওয়ায় সুধী সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশ। নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে আবারও উৎসবের আমেজ বইছে পদ্মা পাড়ে। প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার পাশাপাশি সুধী সমাবেশে বিকাল সাড়ে ৪টায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
২০২২ সালের ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের দীর্ঘতম সেতুটি উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। উদ্বোধনের পরদিন ভোরে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। গত দুই বছরে সেতু দিয়ে এক কোটি ২৭ লাখ যানবাহন পারাপার হয়েছে। গত ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৬৬১ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) বিকালে সরেজমিনে মাওয়া প্রান্তে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে সুধী সমাবেশের আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। একই মাঠে পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই এলাকাজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় জোরদার করা হয়েছে। নজরদারিতে রয়েছে এসএসএফ। প্রধানমন্ত্রীকে বরণে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুই বছর আগে সেতুর মূল কাজটি সম্পন্ন করেছিলাম। পরবর্তীতে রেল কর্তৃপক্ষ রেললাইন স্থাপন করে। এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প, আমাদের কিছু দাবি ছিল। আর নদী শাসন ও কারিগরি কিছু কাজ বাকি ছিল। বড় কাঠামো তৈরির পর ডিফেক্ট লাইবিলিটি পিরিয়ড থাকে। এই সময়ে অবকাঠামোর ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে (যেমন কোথাও রং উঠে গেছে, কোথাও আরও কিছুটা কাজ বাকি থাকলে) তা সংশোধন করা হয়। ঠিকাদারেরও বেশ কিছু দাবি ছিল। এসব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের সব কাজ গত ৩০ জুন সম্পন্ন হয়েছে।’
নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেই আমাদের কাজটি সম্পন্ন করতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টায় আমরা সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। মানুষকে একটি সুন্দর সেতু উপহার দিতে পেরেছি। এটি আমাদের দেশের গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক।’
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানালেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বিকালে মাওয়ায় আসবেন। প্রকল্পের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা থাকবেন। সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানস্থল ও মাওয়া এলাকার আশপাশে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানালেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। এ উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি আমরা। সাদা পোশাকে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ট্রাফিক পুলিশসহ সব মিলিয়ে ১৩ শতাধিক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত বলে উল্লেখ করেছেন টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম হালদার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তার সাহসিকতায় তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু। এই সেতুতে বদলে গেছে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমরা সমাপনী অনুষ্ঠানে যাবো। তাকে অভিবাদন জানাতে সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ থাকবেন।’
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব সহজেই ঢাকা হয়ে সারা দেশে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন মাওয়া এলাকার বাসিন্দা শিশির রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে যে ভোগান্তিতে পড়তে হতো আমাদের, তা এখন স্মৃতি। ফেরি দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেতো। সেই ভোগান্তি এখন নেই। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবলের কারণে এই সেতু হয়েছে। তাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা গর্বিত।’
গত বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ৩২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা থেকে চূড়ান্ত বিলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। সেতুতে ২৯ জুন পর্যন্ত এক কোটি ২৭ লাখ গাড়ি ও যানবাহন চলাচল করেছে। গড়ে প্রতিদিন যান চলাচল করেছে ১৯ হাজার। টোলের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ। সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে যে কার্যক্রমগুলো নেওয়া হয়েছে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সমাপনী অনুষ্ঠানের বাজেট কত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘বাজেট পাঁচ কোটি টাকার ওপরে। পাঁচ কোটি টাকার কম হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা অনুমোদন করতে পারেন। তবে খরচ না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত খরচ বলা সম্ভব না।’
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com