প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২০ইং ।। ৭ই পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।। ৬ই জমাদিউল–আউয়াল, ১৪৪২ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : কাজী দীপু : জেলার টঙ্গিবাড়ীর ধলেশ্বরী নদী ঘেষাঁ সরকারি খাস জমির ও মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীর চরের মাটি কেটে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে ভুমিদস্যুরা। আর এই লুট করা মাটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে ভরে ইটভাটায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভুমিদস্যু একাধিক সিন্ডিকেট। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর রায়পুরা ও দক্ষিন রায়পুরা গ্রাম ঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর তীরের খাস জমির মাটি এবং লৌহজংয়ের সামুর বাড়ীর দক্ষিনে পদ্মার চরের মাটি প্রকাশ্যে ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে লুট করা হচ্ছে। এই মাটি লুটের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জলদস্যুরা সম্পৃক্ত থাকায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করতে সাহস পাচ্ছে না। আর অবৈধ ভাবে মাটি কেটে লুট করার কারনে নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা ও সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীর চরের মাটি কেটে লুট করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে পদ্মার শাখা লৌহজং-ডহুরী নদী দিয়ে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জের একাধিক ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। লৌহজংয়ের সাহাবুদ্দিন মাদবরে নেতৃত্বে নজরুলসহ ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট পদ্মার চরের মাটি লুটের সঙ্গে জড়িত।
এ সিন্ডিকেটের নেতা সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সহযোগী নজরুল মিয়া মোবাইলে জানান, পদ্মার চরের যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে, তা শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পড়েছে। আমার এলাকার সাহাবুদ্দিন মিয়া মাটি কাটার নেতৃত্বে রয়েছে, আমি তার সঙ্গে কাজ করি।
জানতে চাইলে সিন্ডিকেটের অপর এক সদস্য জানায়, অনেক দিন ধরেই পদ্মার চরে মাটি কাটা হচ্ছে। ভোর রাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এ মাটি কাটা হয়। পদ্মার ঢালে অনেক সময় নড়িয়া এলাকার লোকজনও মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে থাকে। ট্রলার প্রতি পুলিশকে কোন টাকা দেওয়া হয় কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে সাহাবুদ্দিন মিয়া তা দেখভাল করে বলে জানায় নজরুল।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, সাহাবুদ্দিন মাদবর যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের যোগদান করে নানা ফায়দা লুটতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ভোজগাঁও ও ব্রাম্মনগাঁওয়ের পদ্মার তীরের নরম মাটির বুকে ভুমিদস্যু সাহাবউদ্দিন মাদবর বছরের পর বছর মাটি লুট করে ইটভাটায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আগে কোদালের সাহায্যে মাটি কাটলেও এখন মাটি লুটেও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট।
স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য ইয়াছিন মিয়া ও ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য সোবহান চোকদার জানিয়েছে, বিগত বছরের ন্যায় এবারও সাহাবুদ্দিন মাদবরের নেতৃত্বে ভূমিদস্যুরা পদ্মার চরের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সাহাবুদ্দিন গংয়ের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তাই এলাকার মানুষের ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসনে ভুমিকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
লৌহজং ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী পদ্মার চরের ওই জমি সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত। শুধু সরকারি কেন, ব্যক্তি মালিকানার কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হলেও সরকারি অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।
অন্যদিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর রায়পুরা ও দক্ষিন রায়পুরা গ্রাম ঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর তীরের খাস জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাকযোগে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।
গ্রামবাসী জানিয়েছে, উত্তর রায়পুরা গ্রাম ঘেঁষা ধলেশ্বরী তীরের সরকারি খাস জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। দক্ষিন রায়পুরা নদীর তীরের সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমির মাটি কাটার নেতৃত্বে দিচ্ছে স্থানীয় চিহ্নিত একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট।
এ প্রসঙ্গে লৌহজং উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মার চরে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা হয়ে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কতিপয় ব্যক্তি মাটি কেটে বিক্রি করছে-এমন অভিযোগ জানতে পেরে স্থানীয় তহসিলদারকে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নামের তালিকা তৈরী করতে বলা হয়েছে
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’