প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০২০ ইং ।। ৭ই জ্যৈস্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।। ২৭ রমজান ১৪৪১
বিক্রমপুর খবর : কাজি সাব্বির আহমেদ দীপু, টঙ্গিবাড়ী থেকে : বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজমেরি জামান রেশমা বার্ধ্যক্যজনিত জটিলতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মরহুমার পারিবারিক সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রায়ত এই চিত্র নায়িকা আজমেরী জামান রেশমা মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারন কাজী বাড়ীর কৃতি সন্তান। তার বাবা কাজী আমির হোসেন মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের প্রফেসর ছিলেন। তার ছোট বোন জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী প্রয়াত নাজমা আনোয়ার। মৃত্যুকালে তিনি একমাত্র ছেলে ববিসহ অসংখ্যা আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।
তার পরিবারিক সূত্র জানায়,‘ বুধবার রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে তিনি মারা যান।’
বৈচিত্র্যময় ক্যারিয়ারে অধিকারী রেশমা স্বাধীনতা আগে ও পরে চলচ্চিত্র,মঞ্চ এবং টেলিভিশন অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও টেলিভিশনে উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।
বিক্রমপুরে কৃতি সন্তান আজমেরি জামান রেশমা ১৯৩৮ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে আজমেরি জামান রেশমা বেতার ও ভয়েস আমেরিকায় ভয়েস আর্টিস্ট, উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সত্তরের দশকে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ঘটে টিভিতে মুনীর চৌধুরী অনূদিত উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটকে মূল চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। নাটকটির নির্দেশক ছিলেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘শেষের কবিতা’, ‘বৃত্ত থেকে বৃত্তে’, ‘সাঁকো পেরিয়ে’, ‘দিন বদলের পালা’সহ অনেক আলোচিত নাটকে।
১৯৬০ সালে সিনেমায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘জি না ভি মুশকিল’ ছবির মধ্য দিয়ে। তাঁর সঙ্গে সে সময় তারকা শিল্পী নাদিম, শাবানা অংশ নেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বাংলা ও উর্দু ছবির মধ্যে রয়েছে ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘নয়ন তারা’, ‘ইন্ধন’, ‘চাঁদ আর চাঁদনি’, ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘শেষ উত্তর’ প্রভৃতি।
তিনি দীর্ঘদিন মঞ্চে শিল্পনির্দেশকের কাজ করেছেন। ষাটের দশকে যুক্ত ছিলেন মঞ্চ সংগঠন ড্রামা সার্কেলের সঙ্গে। তাঁর স্বামী জামান আলী খান ছিলেন ১৯৬১ সালে পিটিভির প্রথম প্রযোজক।
দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন তিনি। তাঁকে দেখা যায়নি টেলিভিশনে, সিনেমায়, দেখা যায়নি কোনো ছোট–বড় উৎসব আয়োজনে। নিভৃতে নিজের মতো ছিলেন। দীর্ঘদিন নিভৃতে থাকা এই শিল্পী যেন মৃত্যুর পর আবারও ফিরে এলেন স্মৃতিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করছেন। দিচ্ছেন সেই সময়ের পুরোনো নাটকের দৃশ্যের ছবি।