প্রকাশিত:মঙ্গলবার,১২ জানুয়ারি ২০২১ইং।। ২৮শে পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ(শীতকাল।। ২৭শে জমাদিউল-আউয়াল,১৪৪২হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : হারুন আল নাসিফ: অধরা মায়াচিত্রসংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অভিজাত মেগা মল ইয়াস মলের মূল প্রবশদ্বারের সম্মুখবর্তী ঘাসাবৃত খানিকটা উঁচু বালিয়াড়ির ওপর ২০১৪ সালে স্থাপিত ছয় উড়াল বাজের বিশাল বহিরঙ্গন ভাস্কর্যটি স্বল্প সময়ের মধ্যে নগরীর একটি সুপরিচিত ল্যান্ডমার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিল্পী মার্কো সিয়ানফানেলির (জন্ম: ১৯৭০) তৈরি এই ভাস্কর্যটি ভাস্কর্যশিল্পের এক নতুন প্রকরণ। এটি একেবারে অভিনব, অপূর্ব বা অভূতপূর্ব ভাস্কর্য প্রকরণ। এ শিল্পকর্মে শিল্পী তার সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী প্রতিভার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছেন।এধরনের ভাস্কর্যে কোনো নির্দিষ্ট অবয়ব তৈরি করা হয় না। ব্যবহৃত কলামগুলোতে খণ্ডিতভাবে একটি অবয়বের অংশগুলো বিশেষভাবে বণ্টিত থাকে। একটি নির্দিষ্ট কৌণিক অবস্থান থেকে তাকালেই কেবল নিহিত দ্বিমাত্রিক অবয়বটি দৃষ্টির সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে। অবস্থান সঠিক না হলে কোনো চিত্রই খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনে হবে চোখের সামনে কতোগুলো নিছক কলাম দাঁড়িয়ে আছে।
ইয়াস মলের মূল প্রবশদ্বারের শিল্পকর্মটি ছয়টি উড্ডীয়মান বাজপাখির চিত্র ফুটিয়ে তোলে। ছয়টি বাজ ছয় ভিন্ন ভঙ্গিতে আকাশে উড়ছে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট কোণ থেকে তাকালে একসঙ্গে কেবল একটি বাজপাখিই দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ছয়টি বাজপাখি দেখতে হলে বার বার অবস্থান বদল করে ছয়টি নির্দিষ্ট কৌণিক দূরত্বে দাঁড়াতে হবে। একসঙ্গে ছয়টি বাজ দেখা যাবে না। মূর্ত আর বিমূর্তের শৈল্পিক লুকোচুরি। মায়াবী ছলনার ললিত কুহক!এ ধরনের শিল্পকর্মে মূর্ত হয়ে ওঠা অবয়বটি সত্যিকার কোনো অবয়ব নয়। মানুষের মনে বা স্মৃতিপটে জমা হয়ে থাকা কোনো নির্দিষ্ট অবয়বের ধারণাকে জোড়া লাগিয়ে মানব মস্তিষ্ক এই চিত্রকল্প তৈরি করে এবং লক্ষ্যস্থলে প্রক্ষেপ করে। নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে সরলে ফুটে ওঠা ছবি বা চিত্রটি নিমিষে ভেঙে যায় বা, হারিয়ে যায়।
এ চিত্র বা ছবি বাস্তবে অধরা। এটিকে এক ধরনের মায়াচিত্র বলাই অধিকতর সঙ্গত। এটি আছে আবার নেই; নেই কিন্তু আছে। যারা পূর্ণাবয়ব প্রাণীর ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্যের বিরোধিতা করেন, তাদেরও এই প্রকরণের শিল্পকর্ম বা ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়। কেননা এটি ত্রিমাত্রিক ও পূর্ণাবয়ব কোনোটাই নয়। তাই ইসলাম ধর্মীয় কথিত নিষেধাজ্ঞা এটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার নয়। কিন্তু এটি বুঝতে হলে কোরআন-হাদিসের জ্ঞানের পাশাপাশি শিল্পজ্ঞান এবং গ্রহণের মানসিকতা থাকা সমানভাবে জরুরি। নচেৎ, নৈবচ নৈবচ।
এই বিশাল শিল্পকর্মটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৮ মিটার উঁচু ১৩২টি কলামের সমন্বয়ে। কলামগুলো স্থাপন করা হয়েছে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ভিত্তির ওপর। এসব কলাম তৈরিতে প্রয়োজন হয়েছে ১২০ টন ইস্পাতের। শিল্পীর জন্মস্থান দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্মাণের পরে কলামগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রেরণ করা হয়।এই আন্তর্জাতিক শিল্পী ৫০টি স্টিল কলামের মাধ্যমে চিত্রিত নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতিকৃতির জন্যও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন, হয়েছেন সমাদৃত। ভাস্কর্যটি দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান থেকে প্রায় ৫৬ মাইল দক্ষিণে হাউইকের ঠিক বাইরে আর-১০২ হাইওয়েতে অবস্থিত। এটিও একই ধরনের ভাস্কর্য।
শিল্পী ৫০টি ইস্পাত কাঠকয়লা কলাম দিয়ে এটি তৈরি করেছেন। নির্দিষ্ট কোণ থেকে দেখলে ম্যান্ডেলার মাথা ও মুখমণ্ডল ফুটে ওঠে। ১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে এখান থেকে নেলসন ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করে পরবর্তী ২৭ বছর ধরে রোবেন দ্বীপে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গ্রেফতারে ঘটনার ঠিক ৫০ বছর পরে ২০১২ সালের ৫ আগস্ট এই অভিনব ভাস্কর্যটি উন্মোচন করে ম্যান্ডেলার প্রতি সম্মান জানানো হয়। ভাস্কর্যটির উলম্ব বারগুলো ম্যান্ডেলার কারাবাসের প্রতীক।© লেখাটি ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নিন। সূত্র উল্লেখ করতে হাইপারলিংক ব্যবহার করুন বা নাম মেনশন করুন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’