প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ইং ।। ৩০শে অগ্রাহায়ণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)। ২৯শে রবিউস-সানি,১৪৪২ হিজরী। বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া মন্তব্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মসুলমানদের বিভ্রান্ত করছে একাত্তরের পরাজিত একটি শক্তি। দেশের ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করতে সতর্ক করে দেন।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি তার ভাষণ শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও একযোগে সম্প্রচার করে।
বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা স্বাধীকার আদায়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। জাতীয় চারনেতা, ত্রিশ লাখ মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে পাশে থাকা বন্ধুরাষ্ট্রগুলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। স্মরণ করেন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শহীদদের প্রতি।
বিজয় দিবস
পৃথিবীর বুকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বছর মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। কয়েকদিন পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পন করা হবে।
ধর্ম
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মকদুম, খানজাহান আলীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ।
ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা এবং প্রসারে যা করেছেন, ইসলামের নামে মুখোশধারী সরকারগুলো তা কখনই করেনি। পরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ হয়েছে, অতীতে কোনো সরকারই তা করেনি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। যার যার ধর্ম পালনের অধিকার এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আছে। ধর্মের নামে দেশে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন সরকার প্রধান।
করোনাভাইরাস
প্রতিটি মানুষের জীবনই যে মূল্যবান সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো অবহেলায় একজন মানুষেরও মৃত্যু কাম্য নয়। তাই, তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় দিবস উদযাপনসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, করোনাভাইরাস মহামারি পুরো বিশ্বকে এক মহাদুর্যোগের কবলে ফেলে দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে এক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশে সময়োচিত পদক্ষেপ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করে এই নেতিবাচক অভিঘাত কিছুটা হলেও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে।
পদ্মাসেতু ও উন্নয়ন
নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানোর মাধ্য দিয়ে সেতুর মূল কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু দেশের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ আবার পুর্ণদ্দোমে শুরু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এই মহামারিতে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলির নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মহাসড়কগুলো চার-লেনে উন্নয়নের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আজকের বাংলাদেশ আর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আজকের বাংলাদেশ স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের মহামারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে সরকার সময়োচিত পদক্ষেপ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করে এই নেতিবাচক অভিঘাত কিছুটা হলেও সামাল দিতে পেরেছে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামি বছর আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। করেনাভাইরাসের এই মহামারি না থাকলে যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, একইসঙ্গে চলবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালাও।
বিজয় দিবসের ঠিক আগে জাতিকে নতুন শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, লাখো শহীদের রক্ষের ঋণ ভোলার নয়। এ প্রজন্ম যেন পূবসূরীদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনই ভুলে না যায়। তাদের উপহার দেওয়া লাল-সবুজ পতাকার যেন কোনো অসম্মান এ বাংলার মাটিতে না হয়।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’