প্রকাশিত:রবিবার,২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং ।। ১৪ই আশ্বিন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক : গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, গত দশ বছরে দলে যারা ত্যাগি, সৎ এবং দু:সময়ের সঙ্গী তারা কোনঠাসা হয়ে গেছেন। যারা টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস করেন এবং বৈধ ও অবৈধ পন্থায় টাকা পয়সা বানিয়েছেন, তারাই দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের সামনে চলে এসেছেন। এই অবস্থা পাল্টে ফেলা হবে।
দলের নেতৃত্বে সৎ, যোগ্য এবং পরীক্ষিতদের সামনে নিয়ে আসা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন যে, এবারের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব এমনভাবে উঠিয়ে আনা হবে যেন তরুণ, সৎ এবং যোগ্যরা স্থান পায়। যারা আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে নতুন অবয়বে সাজাতে পারবে তাঁদেরকে নিয়ে আসা হবে।
একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও ঢেলে সাজানো হবে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগে অনেক মেধাবী তরুণ রয়েছেন যারা দলে জায়গা পাচ্ছেন না, কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। রাজনীতি করতে গেলেই যে সন্ত্রাস লাগবে, টাকাপয়সা লাগবে এই ধারণা পালটে ফেলতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই পালটে ফেলার অংশ হিসেবেই দলে এই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন যে, শুদ্ধি অভিযানের ফলে দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দলের মধ্যে শুন্যতা সৃষ্টি হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা মনে করছেন না। বরং তিনি নিউইয়র্কে অবস্থিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ সতিক্যারের আদর্শিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী সেখানকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুদ্ধি অভিযান নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করেছেন। তার পরিকল্পনার কিছুটা রুপরেখা তিনি প্রকাশ করেছেন। এই রুপরেখায় তিনি বলেছেন, বিতর্কিত অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না।
আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কাউন্সিল অধিবেশনের আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পর্যায়ের সম্মেলনগুলো সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ জেলা সম্মেলনগুলো সফল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, এইসব জেলা সম্মেলনগুলোতে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। যারা জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত, তাদেরকে এই কমিটিতে রাখা হেব না।
উল্লেখ্য, জেলা সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে কাউন্সিলর নির্ধারণ করা হয়। এই কাউন্সিলররাই জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসাবে যোগদান করেন এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। নিউ ইয়র্কেও তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বলেছেন যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেকের মধ্যে লোভ ঢুকে গেছে, অনেকে আদর্শচ্যুত হয়ে গেছে। এই আদর্শবিচ্যুত এবং অভিযুক্তদের দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের দল গঠন করা সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগ সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আগামী বছর মুজিব বর্ষকে। মুজিব বর্ষের আগেই আওয়ামী লীগের এই বদলে যাওয়া রুপ দেখা যাবে। বিভিন্নক্ষেত্রে যারা প্রতিষ্ঠিত, পেশাজীবী এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি তাঁদেরকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, যারা দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেন সেইসমস্ত ব্যক্তিদেরকে সামনে নিয়ে আসা হবে। সেজন্যই বর্তমানের এই শুদ্ধি অভিযান।
এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে তাদেরকেই চিহ্নিত করা হবে যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত। যারা অপকর্ম করছেন না, যারা দলের জন্য নিস্বার্থভাবে কাজ করছেন তাদের জন্য এখন সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশে ফিরে আসার পরপরই ভারত সফর করবেন এবং ভারত সফর থেকে ফিরে এসেই সাংগঠনিক বিষয়গুলোর বিষয়ে মনোযোগ দিবেন এবং সেসময় তিনি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিবেন।