প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার,১ জুলাই ২০২১ইং।। ১৭ই আষাঢ় ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল) ।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : আজ পহেলা জুলাই, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শতবর্ষ পূর্ণ করলো। পা রাখলো ১০১তম বর্ষে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনে বেশ কিছু পরিকল্পনা থাকলেও মহামারি করোনার কারণে আপাতত সীমিত পরিসরে ভার্চুয়ালি উদযাপন করা হবে দিবসটি। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) অনলাইনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আগামী ১ নভেম্বর শতবর্ষের মূল উদযাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ এবং ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বাঙালির অন্যসব অর্জনের মতো প্রতিকূলতার ইতিহাস।
১৮৪৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর পুরো ভারতবর্ষেই একপ্রকার নবজাগরণ তৈরি হতে থাকে। আর এই নবজাগরণ তৈরি করে শিক্ষিত সমাজ। তৎকালীন পূর্ব বাংলায়ও তৈরি হয় এমন শিক্ষিত সমাজ। আর এই শিক্ষিত সমাজ অনুভব করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।
১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ওই বছরের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘নাথান কমিশন’। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য এই কমিশন গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যাত্রা কিছুটা থমকে যায়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-১৯২০’ পাস হয় এবং ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। অবশেষে ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিজস্ব স্বাধীন প্রতিবাদী চিন্তা ধারা তৈরি করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুসলিম লীগের ডাকে পাকিস্তান আন্দোলনে সাড়া দেয়। পাকিস্তান আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে। পাকিস্তান আদায়ের পর ১৯৪৮ সালে যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হল প্রাঙ্গণে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন, তখনই ছাত্ররা এর বিরোধিতা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়। আর এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
ভাষা আন্দোলন শুধু নয়, বাঙালির অধিকার আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। স্বাধীনতার আগে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল, স্বাধীনতার পরেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনও এর অংশ।
শতবর্ষ উপলক্ষে কর্মসূচি:
শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমক পূর্ণভাবে ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক্ষেত্রে স্বল্প পরিসরে আজ ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠান হবে না, তবে অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি হবে।
অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এদিন বিকেল চারটায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল বক্তা হিসেবে থাকবেন ভাষাসৈনিক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করবেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor