প্রকাশিত: রবিবার, ৭ মার্চ ২০২১ইং।। ২২শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।। ২২ রজব ১৪৪২হিজরী
বিক্রমপুর খবর : নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। পাঁচমাস ব্যাপী খননে যেসব প্রত্নবস্তু মিলেছে সেসব ঘুরে দেখেন প্রতিমন্ত্রী। প্রায় ১০ একর ঢিবিতে খনন কাজ চলছে। এসময় বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার প্রত্নতত্ত্ব স্থান জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। গতকাল বুধবার বেলা ১২টায় সদর উপজেলার রঘুরামপুর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর প্রত্নতত্ত্ব স্থান ঘুরে দেখেন। ওই স্থানে কয়েক বছর যাবৎ খনন কাজ চলছে। খননে বেরিয়ে এসেছে হাজার বছর আগের মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ এক কমপ্লেক্স। যেখানে ছিলো ড্রেনেজ ব্যবস্থাও। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাটেশ্বর দেউলে দ্বিতীয় স্তরে ইতিপূর্বে এবং এবার যে আবিষ্কার হলো তা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে যে, নাটেশ্বর প্রত্নতত্ত্ব স্থানে ছিল দশম-একাদশ শতকে একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স যা বাংলাদেশে প্রথম। বিগত বছরের আবিষ্কার যেমন বৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ। এটির চতুর্পাশে চারটি স্তূপ হলঘর। প্রতীকী স্থাপত্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুইটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ, নকশাকৃত ইট। অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরণের স্থাপিত ‘স্মারক কুঠুরি’ একটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। যেখানে গৌতমবুদ্ধ বাঁতার গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহ ভষ্ম, ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো। এর উপরের অংশ গোলাকার ও নিচের অংশ চতুষ্কোণাকৃতি। বাংলাদেশে এ আবিষ্কার প্রথম। স্মারক কুঠুরির গোলাকার অংশ বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্ব ‘শুন্যবাদ’ এর প্রতীকী রূপ। এছাড়া স্তূপের ভেতরের অন্তস্থলটি নির্মিত হয়েছিল স্পোকযুক্ত গাড়ির চাকার আদলে। গোলচাকা শুন্যের প্রতিরূপ এবং চাকা গতির প্রতীক। উলম্ব ইটের বিন্যাসকে চাকার স্পোকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্পোককে কল্পনা করা হয় সূর্যের রশ্মির সঙ্গে। ইতিপূর্বে ইট নির্মিত সুরক্ষা প্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে। সুরক্ষা প্রাচীরটি যে পুরো স্তূপ কমপ্লেক্স জুড়েই ছিল এবারের আবিষ্কারে তা অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। পুরো বসতি জুড়ে সুরক্ষা প্রাচীরও বাংলাদেশে এই প্রথম। ইতিপূর্বে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙ্গা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যায়নি। এবার সুরক্ষা প্রাচীরের বহিস্থ দেয়ালে একটি হলেও ইটের পূর্ণাঙ্গ নকশা সঠিক অবস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে। খননকালে হতাশার জায়গা ছিল নাটেশ্বরে পোড়ামাটির ফলক না আবিষ্কৃত হওয়া কিন্তু নকশাকৃত ইটের ব্যবহার বুঝতে পেরে রহস্যটি উন্মোচিত হলো। অতীশের জন্মভূমিতে স্তূপ কমপ্লেক্সের দেয়াল অলংকরণের ক্ষেত্রে পোড়ামাটির ফলকের পরিবর্তে নকশাকৃত ইট ব্যবহৃত হয়েছে যার কারণ গবেষকদের নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির ‘কর্মসূচি পরিচালক’ ড. নূহ-উল-আলম লেনিন, গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’