প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।। ২৫ জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ‘জুমা’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো সমবেত হওয়া, একত্র হওয়া। শুক্রবারকে আরবিতে ‘এওমুল জুমা’ বা ‘জুমার দিন’ বলা হয়। যেহেতু সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে মুমিন মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে সেদিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করেন, সে জন্য এই নামাজকে জুমার নামাজ বলা হয়।
জুমার দিন হাতের নখ কাটা, সুন্দর করে গোসল করা, পরিষ্কার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মসজিদে আগে যাওয়া এবংং মেসওয়াক করা সুন্নত। মসজিদে প্রবেশ করেই (বসার আগে) প্রথমে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’-এর নামাজ আদায় করা এবং ইমামের দিকে মুখ করে বসে মনোযোগ সহকারে ইমামের খুতবা শোনা উত্তম।
নামাজের অপেক্ষা করা : জুমার দিন সব ব্যস্ততা থেকে দ্রুত অবসর হয়ে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া এবং আগে আগে মসজিদে গিয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করা বেশ সওয়াবের কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মসজিদে গিয়ে নামাজের অপেক্ষায় অতিবাহিত সময় নামাজ হিসেবেই গণ্য করা হয়। আর নামাজ শেষে যতক্ষণ নামাজের স্থানে বসে থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন।
ফজরের নামাজে আমল : জুমার দিন ফজরের ফরজ নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর তেলাওয়াত করা সুন্নত। রাসুল (সা.) নিয়মিত এ আমলটি করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) জুমার দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর পাঠ করতেন।’ (সহিহ বুখারি ৮৯১) তবে কেউ যদি সুরা সাজদাহ ও সুরা দাহর পড়তে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি কোরআনের যে কোনো সুরা থেকে পড়বেন। কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কোরআন থেকে যতটুকু পাঠ করা সহজ হয়, ততটুকু পাঠ করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল ২০)
মসজিদে বসার আদব : দেরিতে মসজিদে এসে কাতার ও মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা গুনাহের কাজ। তাই যেখানে খালি জায়গা পাবেন, সেখানেই বসে পড়বেন। এমনকি দুজন মুসল্লির মাঝখানে ফাঁক তৈরি করেও বসবেন না। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার জুমার দিন রাসুল (সা.) খুতবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। তিনি লোকের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে বললেন, তুমি বসে যাও। তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ এবং অনর্থক কাজ করছ।’ (ইবনে মাজাহ)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন কোনো ব্যক্তি তার ভাইকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে নিজে সেখানে বসবে না। বরং তোমরা তোমাদের জায়গা বিস্তৃত করে অন্যকে বসার সুযোগ করে দাও।’ (সহিহ মুসলিম ২১৭৮)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যদি মসজিদে কোনো ব্যক্তি (খুতবার সময়) তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়, তাহলে সে যেন স্বীয় স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র সরে বসে।’ (তিরমিজি)
জুমার নামাজের আগে মসজিদে গোল হয়ে বসা মাকরুহ। হাদিসে এটা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) জুমার দিন ফরজ নামাজ পড়ার আগে মসজিদে গোলাকার হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ)
সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা : জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। এটি অত্যন্ত একটি ফজিলতপূর্ণ সুরা। জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। এ সুরা তেলাওয়াতে অন্তরে আনে প্রশান্তিদায়ক বিশেষ রহমত। রাসুল (সা.) প্রতি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করতেন। এ সুরা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নুর বা জ্যোতি অর্জন করা যায়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তার (ইমানের) নুর এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।’ (মিশকাত ২১৭৫) অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য এমন এক নুর প্রজ¦লিত করা হবে, যা তেলাওয়াতকারী থেকে বাইতুল্লাহ শরিফ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।’ (বায়হাকি ৩/১১৩)
সুরা কাহাফ তেলাওয়াতের দ্বারা দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম ৮০৯)
আলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে পুরো সপ্তাহ সব ধরনের ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখবেন। যদি দাজ্জালও বের হয়, তবু আল্লাহ তাকে নিরাপদ রাখবেন।’ সুরা কাহাফ তেলাওয়াতের সময় হলো, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এর মধ্যে যে কোনো সময় সুরা কাহাফ পাঠ করলে হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে। উল্লেখ্য, যদি কেউ সম্পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করতে না পারে তবে সে যেন এ সুরার প্রথম এবং শেষ দশ আয়াত অথবা যে কোনো দশ আয়াত তেলাওয়াত করে।
সর্বোপরি জুমা হলো মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এ নামাজের প্রতি আমাদের খুব যতœবান হতে হবে। অযথা অলসতা করে কোনো মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ ত্যাগ করা উচিত হবে না। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor