জাদুর বাকসো (কমলাপুর)
প্রকাশিত :মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ ইং । ২রা আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।। বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক :
অধ্যাপক ঝর্না রহমান
কমলাপুরের বাসাতেই আমাদের প্রথম রেডিও হল। এটি ছিল আমার জন্য আর একটি শুভযোগ। প্রথমে একদিন আব্বা নিয়ে এলেন একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মার্ফি রেডিও। বিশাল সেই রেডিও। ছোটখাট একটা সুটকেসের সমান। রেডিওর সামনে নিচের পাটিতে সাদা সাদা চারটা বিটকেলে দাঁত বেরিয়ে আছে। ওগুলো এক একটা টিপলে এক এক রকম কাণ্ড ঘটে! কোনোটা অন কোনোটা অফ কোনোটা সাউন্ড বাড়ে কোনোটা কমে ইত্যাদি। সবচে মজার হল রেডিওর হৃদপিণ্ড আর পাকস্থলি বাইরে! মানে ব্যাটারিগুলো বাইরে। ব্যাটারিও দুটো ছোট সাইজের বাকসো! তার লাগানো আছে তাতে। কিন্তু সেই হৃদয়তন্ত্রীকে আবার রেডিওর কোন ফোকরে ঢুকিয়ে ভেতরের কোনো ভাল্ব-এর সাথে কানেক্ট করতে হয়! আসলে মার্ফি রেডিওটা ছিল পুরোনো অচল মাল। আব্বা কারও কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন। আব্বা ছিলেন জিনিসপত্র মেরামতির কেরামতিতে এক বিস্ময়কর জাদুকর। আব্বা সেই অচল মালকে খুলে টুলে দুদিন দিনমান খুটখাট করে ওটাকে সচল বানিয়ে ফেললেন। সেই রেডিওতে মাঝে মাঝে গম গম আওয়াজ, মাঝে মাঝে ভ্যাজ ভ্যাজ, মাঝে মাঝে পিঁচ পিঁচ, মাঝে মাঝে স্পিকটি নট! আওয়াজ যেমনই হোক, সেই অবাক রাজ্যের সবাক যন্ত্র নিয়ে আমাদের বাসায় উৎসব লেগে গেল। রেডিও ছেড়ে নড়ি না! কিন্তু সেই বিস্ময়কর যন্ত্র বেশিদিন চললো না। দম আটকে পড়ে রইল। বিষহরির মন্ত্র পড়েও আব্বা সেই বেয়াড়া যন্ত্রকে আর কথা বলাতে পারলেন না। শেষে ক্ষান্ত দিলেন।
তারপর ১৯৬৬ সনের এক রূপকথা দুপুরে আব্বা নিয়ে এলেন ছোট্টখাট্ট টুকটুকে ফুটফুটে সুন্দর বালিকার মত একখানা রেডিও। রেডিওর নাম এনইসি। আব্বা বলেন থ্রি ব্যান্ড রেডিও। জাদুর বাকসের মত বিস্ময়কর এই যন্ত্র আসার পর আমাদের ঘরের চেহারা বদলে গেল। রেডিও অন হলেই মনে হত আমাদের বাসাটা যেন আমাদের বাসা নয়, একটা অন্য দেশের অন্য ঘর। সেই ঘরের ভেতরে অদ্ভুত সুন্দর কণ্ঠে গান হয়, খবর হয়, কথা হয়, বাজনা বাজে। রেডিওর ভেতর থেকে যা বের হয়, সবই সুন্দর। তার আওয়াজটাই অন্যরকম। আমাদের ঘরের ভেতরে বাতাসের শব্দতরঙ্গ বেয়ে রূপকথার রাজ্যের আকাশ থেকে এরোপ্লেন এসে ল্যান্ড করতে লাগলো।
স্কুলের সময়টুকু ছাড়া সারাদিন রেডিওতে গান শুনি আমি। যতক্ষণ আব্বা অফিস থেকে না ফেরেন ততক্ষণ রেডিও আমার। আব্বা ফিরে এলেই রেডিও তাঁর হয়ে যায়। আব্বাও গান ভালোবাসেন। রেডিওর নব ঘোরাতে ঘোরাতে আব্বা গুন গুন করে গান করেন। মন খুশখুশালি থাকলে অন্য সময়ও গান করেন। হায় আপনা দিল তু আওয়ারা/না জনি কিস পে আয়েগাÑ উর্দু এই গানের কলিটি আব্বা নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করেন। কখনো গেয়ে ওঠেন, নিলামওয়ালা ছ আনা যা নিবি তা ছ আনা ~এ কলিটি শুরু করলে আমরা বোনেরা দোহার ধরতাম ‘লিলামালাআআাআ’! হেসে গড়িয়ে পড়তাম আব্বার গায়ের ওপর। আব্বাও হাসতে হাসতে, গান গাইতে গাইতে আমাদের কোনো একজনকে ছোঁ মেরে মাথার ওপরে তুলে ধরতেন। বলতেন, যা নিবি তা ছ আনা! কে নিবি, কে নিবি! সুরের রেশমি পোশাক-পরা পরীরা যেন তখন আমাদের পিঠে করে উড়িয়ে নিত।
তবে আব্বা গানের চেয়ে বেশি শোনেন খবর আর খেলা। রেডিওকে নানাদিকে ঘুরিয়ে ঘারিয়ে কোন কোন স্টেশন থেকে যেন খেলার রানিং কমেন্ট্রি বের করে নিয়ে আসেন। বুকের ওপর রেডিও নিয়ে কান পেতে আব্বা অনেক দূরের, সহস্র কিলোহার্জের স্টেশন থেকে খেলার ধারাবর্ণনার শব্দগুলোকে বোঝার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন আমার মনটা হুহু করতে থাকে। আহা কত গান চলে যাচ্ছে! তখন রেডিও পাকিস্তান। কিন্তু ভারতীয় বাংলা গানও বাজানো হত। দারুণ সুন্দর এক-একটা গান। আমার সমস্ত মনোযোগ সে সব গানের দিকে। একটা গান লিখো আমার জন্য, মনে আগুন জ্বলে চোখে কেন জ্বলে না, সাত ভাই চম্পা জাগো রে জাগো রে, নাও গান ভরে নাও প্রাণ ভরে……। লুকিয়ে লুকিয়ে খাতার মধ্যে কাঁচা হাতে গান লিখে রাখি। আম্মা দেখলে বকা দেবেন, খাতার পৃষ্ঠা নষ্ট করছি বলে। তবে শুধু গানটাই লিখি, শিল্পীর নাম বা অন্য কোনো তথ্য লিখি না। খেয়ালও করি না। একদিন মামী আমাকে গান গাইতে ডেকেছেন। বললাম, কোনটা গাইব? মামী বললেন, ঝর্না গো, ঐ যে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানটা গাও না! কী সুন্দর লাগে তোমার গলায়!
প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়? তার গান আবার কোনটা? বাপরে! কী কঠিন নাম! উচ্চারণই তো করতে পারি না!
মামী বললেন, আরেহ! ঐ যে, একটা গান লিখো! গান গাও আর জানো না সেটা কার গান?
খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। শুরু হল নাম মনে রাখা। লতা মুঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্না দে, নামগুলো খাতায় নয়, মনের মধ্যে লিখে রাখতে শুরু করি। গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে কী হবে! মনের খাতাই তো আসল! তা ছাড়া খাতাই বা পাবো কোথায়? খাতা তো স্কুলের জন্য, হোমওয়ার্ক করার জন্য। সে সব হিসেব করা খাতা। তবে গানের খাতার জন্য খুব ভাবিওনি তখন। গান দু একবার শুনলেই মনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে আর নড়নচড়ন নেই।
যতক্ষণ রেডিও স্টেশন খোলা ততক্ষণ রেডিও বাজে আমাদের বাসায়। কতরকম অনুষ্ঠান! বাংলা খবর, ইংরেজি খবর, মাগরেবি পাকিস্তান আর মাশরেকি পাকিস্তানের সময় উল্লেখ করে উর্দু খবর, কৃষি অনুষ্ঠান, পাটের দর, জাতকের গল্প, কওমী গান, অনুরোধের আসর, এ মাসের গান, ইসলামী গান, যন্ত্রসংগীত, নাটক! যত অনুষ্ঠানই হোক আমার লক্ষ্য মূলত গানের দিকে। রেডিওতে বেশিরভাগ সময়ে যাদের গান বাজে, তাঁরা এ দেশের শিল্পী। সুন্দর সুন্দর গানের সাথে তাঁদের নামও বাজতে থাকে কানে। ফেরদৌসী বেগম, আঞ্জুমান আরা বেগম, নীনা হামিদ, আব্দুল জব্বার, মো আলী সিদ্দিকী, বশীর আহমেদ, আনোয়ার উদ্দীন খান, আব্দুল আলীম, ফরিদা ইয়াসমিন, ইসমত আরা এসব শিল্পীর কিছু গান বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। একবার শুনলে সারাক্ষণ কানের মধ্যে লেগে থাকে সেই সুর। বিশেষ করে তখনকার কিছু সিনেমার গান আমাকে একেবারে দখল করে ফেলে। রেডিওতে সিনেমার গানের অনুষ্ঠানের জন্য কান পেতে বসে থাকি। অনুষ্ঠানে গানের পরিচয় দিতে গিয়ে ঘোষক শিল্পীর নামের সাথে বলেন বাণীচিত্রের নাম। সে-ই প্রথম জানলাম বাণীচিত্র মানে সিনেমা। জানলাম, ‘সুরারোপ করেছেন’ কথাটির মানে, যিনি সুর দিয়েছেন। একবার একটা গান শুনলে আবার কবে সে গান ফিরে আসবে সে আশায় চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতাম। তবে গান আমার মনের মধ্যে একবারেই অনেকটা রেকর্ড হয়ে যেত। বিশেষ করে সিনেমার গান। রাজধানীর বুকে, সুতরাং, অভিমান, ডাকবাবু, হারানো দিন, তোমার আমার, নতুন সুর, এদেশ তোমার আমার, জোয়ার এলো, ধারাপাতÑ কী রোমাঞ্চকর একেকটা সিনেমার নাম! সিনেমা দেখার কথা চিন্তাও করি না, বাচ্চারা আবার সিনেমা দেখে নাকি? তবে সিনেমার গানগুলো শুনে শুনে মনে মনে দৃশ্যপট তৈরি করে নিই। ফেরদৌসী বেগমের এই সুন্দর পৃথিবীতে, প্রাণেতে দোলা দিয়ে যায়, তুমি আছো পাশে (আব্দুল জব্বারের সাথে দ্বৈতকণ্ঠে), আমি রূপনগরের রাজকন্যা, নিশি জাগা চাঁদ হাসে কাঁদে আমার মন, নদী বাঁকা জানি, লাজুক লাজুক চোখ মেলে ঐ, এই চৈতালি রাত, আঞ্জুমান আরা বেগমের তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে, কে স্মরণের প্রান্তরে চুপি চুপি ছোঁয়া দিয়ে যায়, বলতো পাখিরা কেন যে গান গায়, ফরিদা ইয়াসমিনের ফুলের হাওয়া লাগে বনে ঐ, জানি না ফুরায় যদি এই মধু রাতি, তুমি জীবনে মরনে আমায় আপন করেছ, ফৌজিয়া খানের মন তো নয় আর আয়না, আব্দুল জব্বারের তারাভরা রাতে তোমার কথা যে মনে পড়ে, কলসি কাঁখে ঘাটে যায়, নীনা হামিদের আমার সোনার ময়না পাখি, দুঃখ কে মনের মাঝে হানিল আমায় তারে নি ভালো রাখিবেন খোদায়, সাগর কূলের নাইয়ারে অপার বেলায়, ইসমত আরার এত কাছে চাঁদ বুঝি কখনো আসেনি, অধরে জড়ানো কথার কাকলি, এসব গান আমার শ্রুতি আর স্মৃতিতে মুদ্রিত হতে থাকে। (এখন ভাবলে অবাক লাগে, মাত্র আটনয় বছরের এক বালিকা এসব গানের কথা আর সুর কীভাবে মনে রাখতো? এসব তো ছোটদের গানও না! আমি বোধ হয় গানের ব্যাপারে ইঁচড়ে পাকা ছিলাম!) যাই হোক, রেডিওর বদৌলতে সারাক্ষণ আমার মনের মধ্যে গুনগুন করে গান। এমন কি হোমওয়ার্ক করতে গেলেও গুনগুন করে গান করি। পড়ার বই সামনে নিয়ে গান করার জন্য বকা খাই আম্মার কাছে। আম্মার নামাজের সময় একদিন রেডিও অন করার দোষে নামাজ শেষ হওয়ার পর আচমকা পিঠের মধ্যে তাল পড়লো একটা। চড় চাপড় কিল মুক্কি ঠোনা প্রয়োজন মত এসব প্রয়োগ করতে আম্মার কোন দ্বিধা ছিল না। (বহুকাল পরে, যখন আমি তিন সন্তানের জননী, তখনও আমি কাজের মধ্যে গান শোনার জন্য আম্মার বকা খেয়েছি। সে গল্প তোলা রইল। সময়মত বলবো।) সুতরাং সেই বাচ্চাবেলায়ই সাবধান হয়ে গেলাম, গান সবসময় করা যাবে না। কখন কখন যাবে না? বেশিরভাগ সময়েই না! পড়ার সময় না, খাওয়ার সময় না, পাঁচবেলা আযান আর নামাযের সময় না, আম্মা যখন কোরান পড়বেন তখন বা ভাইবোনেরা যখন পড়তে বসবে সে সময়ও না, আরও অনেকগুলো নিষেধাজ্ঞার সময়সূচি নিজে নিজেই নির্ণয় করে ফেলতে পারলাম। সুতরাং গানই চুপি চুপি আমাকে প্রবোধ দিয়ে বললো, রোসো, ভাবনা কোরো না। বুদ্ধি আছে! কী বুদ্ধি? তা হল, গান আমার কণ্ঠে নিজেকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে এলো। খুব আস্তে, রেডিওর নব ঘুরিয়ে মিনিমাইজের শেষ মিটারে নিয়ে এলে যেমন আস্তে শোনায়, প্রায় সেই রেঞ্জে গান গাইতে আমি রীতিমত পারদর্শী হয়ে উঠলাম। আবার নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে গলা খুলে গাইতেও দারুণ লাগে আমার। তখন নিজের কাছেই আমার কণ্ঠ রেডিওর শিল্পীর মত শোনায়। তবে সে সুযোগ বাসায় বেশি পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় মামীর ঘরে গেলে। মামা বাসায় থাকলে আবার সেটাও হত না। নতুন এক একটা গান শিখে আমার মন আকুল হয়ে উঠতো কাওকে শোনাবার জন্য। গলার ভেতরে গানগুলো জালে আটকা পড়া প্রজাপতির মত ছটফট করতো। ছাড়া পেলেই ওরা কারো শ্রুতির ঝিল্লিতে নেচে উঠবে! তাই কেউ গান শুনতে চাইলে বা একটু বললেই হল, টুং করে যন্ত্রের মত বেজে উঠতো মন। হুড়মুড় করে গানেরা সামনে এসে দাঁড়াতো। কোনটা গাইবো?
আামি গান শোনাতাম, আমাদের প্রতিবেশি শুক্লা আর মহুয়া আপাকে, রাস্তার উল্টো দিকের এক দরজির দুই মেয়ে আমিনা আর আম্বিয়াকেও গান শুনিয়েছি। উঠোনে কুয়োর রেলিঙে বসে গরবিনী সহপাঠি বিলকিস খালাম্মাকেও গান শোনাতাম! আর খুব করে শোনাতাম আমার গানপিয়াসী মামীকে। মামী বারবার শুনতে চাইতেন সুতরাং ছায়াছবিতে আঞ্জুমান আরার গাওয়া ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’ গানটি। যতবার আমি এ গান করতে শুরু করেছি, ততবার ‘তাই চম্পা বকুল করে গন্ধে আকুল এই জোছনা রাতে মনে পড়ে’ জায়গাটায় এলে মামী আর চুপ থাকতে পারতেন না, আমার সাথে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠতেন। তাঁর মুখ ভরা থাকতো হাসি। মামীর দাঁত খুব সুন্দর। হাসলে তাঁকে দারুণ লাগে। আজও এ গান শুনলে আমার মনে ভেসে ওঠে, নায়িকা কবরী নয় আমার শৈশবের রূপসী নায়িকা মামীর* সাজানো অলংকারের মত সুন্দর দাঁতের হাসি।
একবার প্রতিবেশি এক বাসায় একজন অচেনা মেহমানকে গান শুনিয়ে আসি। গান শুনে কত যে প্রশংসা করলেন সেই মেহমান-কাকা! বাসায় এসে আম্মাকে সে গল্প করার পর, আম্মা আমাকে খুব বকলেন। বললেন, আমি ধিঙ্গি হচ্ছি আর লাজ লজ্জা ধুয়ে খাচ্ছি। ঠ্যাং বেশি লম্বা হয়ে গেছে আমার। যখন তখন বাইরে চলে যাই! যে কেউ গান গাইতে বললেই গাইতে হবে, বেলেহাজ মাইয়া? আমি ততদিনে সত্যিই ধিঙ্গি হয়ে গিয়েছি! ফোর পাস করে ফাইভে উঠে গেছি! সত্যিই পা জোড়া লম্বা হয়ে গেছে আমার। লিকলিকে শরীর ছাড়িয়ে আমার মাথাটাও হঠাৎ যেন গাছে চড়ে বসেছে! কাজেই আমি সতর্ক হয়ে যাই। গানগুলো আমার মাথায় অনেকগুলো খোপ বানিয়ে ফেলে। সেখানে বসেই রকম রকম গান বকম বকম করতে থাকে! তবে পরে যখন আমি হাই স্কুলে নাইনের ছাত্রী, তখন গান গেয়ে শোনানোর একটা আস্ত কিশোরী জীবন আমার কাছে চলে এসেছিল। সে গল্প আর একদিন। (চলবে)
ছবি: আমার লেখা ও স্বকণ্ঠে গীত ২০১৫ সালে প্রকাশিত দেশাত্মবোধক গানের অ্যালবামের প্রচ্ছদ।
*আমার মামী (নাম, লুৎফুন নাহার লুৎফা) আজ প্রায় দশ বৎসর যাবৎ ব্রেন স্ট্রোকে প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী আছেন। তিনি কোনো কথাও বলতে পারেন না আজ প্রায় চার বছর। এ লেখার মধ্য দিয়ে আমি তাঁর প্রতি অন্তরের নিবিড়তম শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।)
ঝর্না রহমান
১৫ জুন ২০২০
================ অধ্যাপক ঝর্না রহমান ==============
বিক্রমপুরের কৃতী সন্তান অধ্যাপক ঝর্না রহমান-এর জন্ম ২৮ জুন ১৯৫৯ সালে। তাঁর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরের কেওয়ার গ্রামে। ঝর্না রহমান একজন কথাসাহিত্যিক,কবি ও সংগীত শিল্পী। চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি লেখালিখির সাথে জড়িত।
গল্প উপন্যাস কবিতার পাশাপশি লেখেন প্রবন্ধনিবন্ধ, ভ্রমণসাহিত্য, শিশুসাহিত্য, নাটক। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশের সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। চারটি সম্পাদনা গ্রন্থসহ এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৫০। তাঁর একাধিক গল্প ও কবিতা ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং তা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। কানাডার ভ্যাংক্যুভার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য Trevor Carolan সম্পাদিত দক্ষিণ এশিয়ার গল্প সংকলন The Lotus Singers গ্রন্থে তাঁর গল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত পাঞ্জাবী সাহিত্যিক অজিত কৌর আয়োজিত সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে একাধিকবার সাফল্যের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর পড়াশোনার বিষয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর।
পেশাগত ক্ষেত্রে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা। অবসরে তাঁর কর্মক্ষেত্র লেখালিখি। ঝর্না রহমান একাধারে একজন গীতিকার সুরকার এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী।
এ ছাড়া তিনি কথাসাহিত্যের ছোট কাগজ পরণকথা এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের মুখপত্র ত্রৈমাসিক অগ্রসর বিক্রমপুর সম্পাদনা করেন ।
তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই:গল্পগ্রন্থ: ঘুম-মাছ ও এক টুকরো নারী, স্বর্ণতরবারি, অগ্নিতা, কৃষ্ণপক্ষের ঊষা,নাগরিক পাখপাখালি ও অন্যান্য,পেরেক, জাদুবাস্তবতার দুই সখী,নিমিখের গল্পগুলো,বিপ্রতীপ মানুষের গল্প,বিষঁপিপড়ে, Dawn of the Waning Moon (অনূদিত গল্প) ,তপতীর লাল ব্লাউজ, উপন্যাস: ভাঙতে থাকা ভূগোল, পিতলের চাঁদ, কাকজোছনা। কাব্য: নষ্ট জোছনা নষ্ট রৌদ্র, নীলের ভেতর থেকে লাল, জল ও গোলাপের ছোবল, জলজ পঙক্তিমালা, ঝরে পড়ে গোলাপি গজল, চন্দ্রদহন, উড়ন্ত ভায়োলিন, হরিৎ রেহেলে হৃদয়। কিশোর উপন্যাস: আদৃতার পতাকা, হাতিমা ও টুনটুনি, নাটক: বৃদ্ধ ও রাজকুমারী, প্রবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ: সেঁজুতি, রৌদ্রজলের গদ্য।
মা:রহিমা বেগম,বাবা:মোঃ মোফাজ্জল হোসেন,গ্রামের বাড়ি:কেওয়ার,মুন্সিগঞ্জ। জন্ম:২৮ জুন,১৯৫৯।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।