কয়েকটি শুভযোগ (কমলাপুর)
প্রকাশিত :মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ ইং । ২রা আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।। বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :
অধ্যাপক ঝর্না রহমান
১৯৬৬ সনে আব্বার অফিস ট্রান্সফারের সুবাদে আমরা আজিমপুর শাহসাববাড়ি থেকে কমলাপুরে চলে এলাম। আব্বা ছিলেন পোস্ট মাস্টার। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আমাদের নতুন বাসা হল। তখন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাত্র নির্মিত হচ্ছে। বিশাল জায়গা জুড়ে কর্মযজ্ঞ। কমলাপুরে আসার পর আমার গানপাগল মনটার জন্য কয়েকটা শুভযোগ দেখা দিল। প্রথমত; যে জায়গাতে আমাদের বাসা হল সে জায়গাটা ছিল আমার চতুর্থ মামা হারুনর রশীদের খালুশ্বশুরের জায়গা। পনের ষোলো কাঠার বিশাল প্লট। মামার খালুশ্বশুরের বাড়ি করার পরও অনেকটা জায়গা পতিত রয়ে গেছে। সেখানে একটা দোচালা ঘর, পানির ইঁদারা (আমরা বলতাম কুয়া), ইঁদারা ঘিরে চমৎকার খোলা উঠোন, পালান সবই আছে। খালুশ্বশুরের বদান্যতায় হারুন মামা সে বাড়িতে বাস করতে লাগলেন, সেই সাথে বিনা ভাড়ায় ঘর তুলে থাকার জন্য মামা তার বোনের পরিবারকেও, মানে আমাদেরও নিয়ে এলেন। তাতে আমার আব্বার কাঁধ থেকে বাসাভাড়ার ভারটা নেমে গেল। ব্যাপারটা বেশ হল। আমরা আর মামারা! আবার ‘আমরা আর খালারা’ও হয়। মামীর খালা, মানে মামার খালাশাশুড়ির একটি মাত্র কন্যা, নাম বিলকিস। সেও হল আমার খালা! আমার চেয়ে এক দেড় বছরের বড়। তাই তাকে ডাকতে হলো বিলকিস খালাম্মা। তবে একই ক্লাস আমরা। আব্বা আমাকে বিলকিস খালাম্মার স্কুলেই ভর্তি করে দিলেন। স্কুলের নাম কমলাপুর শেরে বাংলা প্রাইমারি স্কুল (পরে এটি হাই স্কুল হয়েছিল এবং সে স্কুলে আমি আরও একবার পড়েছি!)। রূপকথার রাজকন্যা পরমাসুন্দরী বিলকিস ছিলেন রাজারানীর একমাত্র সন্তান! বাপমায়ের পরম আদরিণী কন্যাটি আমার সহপাঠি হল বটে, তবে একদিকে বয়সে বড়, আবার সম্পর্কে খালা, তাই তার সাথে খুব সহজে মিশতে পারি না। তাকে মনে হয় দূরদ্বীপবাসিনী কোনো জলপরীকন্যা। পরম শ্রদ্ধেয় এই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমার বুক ধুকপুক করে। পরীর দেশের হেঁশেল থেকে ঘি মাখন আর ময়দা ঠেসে, তুলতুলে করে ছেনেছুনে তার মুখখানা তৈরি হয়েছে। নরম আর জ্বলজ্বলে চামড়ায় ঢাকা গোল মুখ। তার মধ্যে মা দুগগার মতো, যেন টিপে টিপে বসানো হয়েছে নাক আর ঠোঁট। আধখানা চাঁদের মত কপালের নিচে, পানি থেকে সদ্য তুলে আনা চকচকে মাছের মত এক জোড়া চোখ। কালো সিলকের সুতোর মত চুল। সেই চুলে প্যাঁচানো খেজুর পাতার পাটির মত নকশা করে রোজ চুল আঁচড়ে দেয় তার মা। কোমর ছাড়িয়ে পড়ে লম্বা দুটো বেনির ডগা। জানালায় দাঁড়িয়ে রোজ লুকিয়ে দেখতাম এই রাজকন্যার কেশবিন্যাস। নেশা লেগে যেত এই রূপসী খালার মুখের দিকে তাকিয়ে।
মামা, মামী, খালা, নানা নানি সব মিলিয়ে দারুণ একটা আত্মীয় পল্লী হয়ে গেল আমাদের কমলাপুরের বাসস্থান। হারুন মামী ছিলেন খুব শৌখিন আর আমুদে মহিলা। তিনিও দেখতে অপরূপ সুন্দরী। নিজের সৌন্দর্যের প্রতি যথেষ্ট সচেতনও। স্লিভলেস ব্লাউজ পরেন। ব্লাউজের নিচে বডিস পরেন। গোসল শেষে প্রতিদিন মামী চোখে চিকন করে কাজল আঁকেন। কপালে ছোট করে মাঝে মাঝে টিপও দেন! নায়িকাদের মত পাতা কেটে চুল আঁচড়ান। মামীর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি আমি। মামী খুব ভালোবাসেন গান শুনতে, গুনগুন করে গাইতে, সিনেমা দেখতে আর সিনেমার গল্প বলতে। আমি হয়ে গেলাম মামীর আঠাভাগ্নি। সারাক্ষণ মামীর সাথে আঠার মত লেগে থাকি। মামীর গলায় শুনি, তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার, একটা গান লিখো আমার জন্য, ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে আমি বনফুল গো। মামী আমাকে বলেন, তোমার গলা কত সুন্দর, তুমি এ গানগুলো শিখে নাও। মামীর সাথে আম্মাও সারাদিন গল্প করেন। সংসারের কাজ কর্ম শেষ করে হাতে কোনো সেলাই বা অন্য কোনো কাজ নিয়ে বিকেলের মায়াবী উঠোনে মামী আর আম্মা গল্প করতে বসেন। গল্পগোধূলির আলো এসে মামী আর আম্মার চারপাশ ঘিরে নাচতে থাকে। মামীর সাহচর্য আম্মার ঘুমন্ত বিনোদনপ্রিয় মনটাকে উস্কে দেয়। একদিন মামা টিকেট কেটে এনে দিলে আম্মা আর মামী ‘একা একা’ গিয়ে সিনেমা দেখে এলেন। সেটা ছিল ‘তালাশ’ কিংবা ‘চান্দা’ সিনেমা। সিনেমায় যাওয়ার জন্য আম্মাও মামীর মত চোখে হালকা কাজলের টান দিলেন। দুই ভ্রুর মাঝখানে দিলেন তিলের মত ছোট্ট কাজলের টিপ। সিঁথির দুপাশে বসে গেল কালো কেশের দুটি সুরচিত পাতা! হায় আল্লা! আমার আম্মাকেও সিনেমার নায়িকার মত দেখতে লাগছিল। আমি তো তখনও সিনেমা দেখিনি, নায়িকারা কেমন হয় সে ব্যাপারেও ততটা ওয়াকিবহাল নই! তবু মনে হল অপূর্ব সুন্দর লাগলেই তাদের নায়িকার মত লাগছে বলা যায়।
সিনেমা দেখার পর আম্মার গানের আগ্রহটা অন্যরকমভাবে বাড়লো। আম্মা আর মামী তাঁদের সময়ের বিখ্যাত গানগুলো মাঝে মাঝে গেয়ে উঠতেন। একজন থেমে গেলে আর একজন সুর খুঁজতেন। একজনের কথার ভুল ধরিয়ে দিতেন অন্যজন। হেসে উঠতেন তাঁরা। আর আমি তাঁদের পাশে আলোর সাথে মিশে ত্রসরেণু হয়ে, বাতাসের আড়ালে বাতাসের ঢেউ হয়ে, গাছের পাতা হয়ে, ঘাস হয়ে, ছায়া হয়ে ঘন হয়ে থাকতাম। কেন? শুধু গানের সুরগুলোকে ধরে ফেলার জন্য। গানের গল্পগুলোকে কুড়িয়ে নেবার জন্য।
আম্মা একদিন একটা নতুন জামা বানানো শেষ করে আমাকে পরিয়ে দিয়ে চারদিক ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন। আম্মা আমাকে ডানে বললে ডানে ঘুরি, বামে বললে বামে ঘুরি। আমাকে দেখে আম্মার চোখমুখ ঝলমল করে। হঠাৎ আম্মা বলেন, নাচ তো! একটু নেচে দেখা! (এ কথা শুনে আম্মার ‘সোহাগ চাঁদবদনি ধনি’ তো অবাক! বালা তো তখনও নাচ জানে না! নাচবে কী করে! সুতরাং বালা হাবালার মত দাঁড়িয়ে থাকে।) মিনমিন করে বলি, কীভাবে নাচবো? আমি তো নাচতে জানি না! আম্মা বলেন, আমি গান করি, তুই নাচ। গানের সাথে ঘুরে ঘুরে হাত পা নাড়লেই নাচ হয়ে যাবে! সত্যি? এভাবে নাচতে হয়? হয় তো!
সেদিন জননীর গানের সাথে তার সপ্তমবর্ষীয়া কন্যা স্বরচিত কোরিওগ্রাফিতে ঘুরে ঘুরে নাচলো। তার সাথে নাচলো নতুন জামার রঙ ওড়ানো ঘের, নাচলো ফ্রকের ফ্রিল, নাচলো জামরুল গাছের সবুজ কিশলয়, উঠোনে পোকা খুঁজতে আসা চড়ুই পাখি, আর আব্বার সবজি ক্ষেতের লাউকুমড়ার লতায় ঝুলে থাকা ঢলোঢলো পাতা। আম্মা সেদিন তখনকার দিনের ক্রেজ, হিন্দি ফিলম ‘দীদার’-এর সুপার ডুপার হিট দুটো গানের অংশবিশেষ গাইলেন। একটা ছিল শামসাদ বেগমের ‘চমন মে রাহকে ভিরানা মেরা দিল হোতা যাতা হায়’, আর একটি হল, লতা মুঙ্গেশকরের ও শামসাদ বেগমের গাওয়া ও বাচপানকে দিন ভুলানা দেনা’। স্বর্ণযুগের এই চিরায়ুষ্মান গান দুটি শুনলে আজও আমার মনে কমলাপুরের বাসার উঠোনে আম্মার গানের কথা মনে পড়ে। আম্মা সেদিন আমার মনের ভেতরে দুটি চিরসবুজ গানের দুটি আয়ুশ্চারা লাগিয়ে দিয়েছিলেন, ওরা শেকড় ছড়াতে থাকে। ঝিলমিল ঝিলমিল কাচের মত সবুজ পাতায় নাচতে থাকে গানের রোদ্দুর।
দ্বিতীয় শুভযোগটি ছিল, আমাদের প্রতিবেশি একটি শিক্ষিত সংস্কৃতিমনা পরিবারের সাথে আমাদের সখ্য। সে পরিবার ছিল মীর্যা পরিবার। মীর্যা সাহেবের নাম মনে নেই। বেগমের নামটা মনে আছে। জোবায়দা মীর্যা। খুব সম্ভবত শুনেছিলাম জোবায়দা মীর্যা সানজিদা খাতুন ফাহমিদা খাতুনের বোন। জোবায়দা মীর্যার তিন কন্যা, শবনম, মহুয়া আর শুক্লা। তিন জনের মধ্যে শুক্লা আমার সমবয়সী। মহুয়া আপা আমাদের চেয়ে বড় হলেও আমরা একই সাথে খেলতাম। আর শবনম আপা তার ভয়াবহ সৌন্দর্য নিয়ে ঘরেই থাকতেন। নাইন কিংবা টেনের ছাত্রী ছিলেন। বই পড়তেন। চুল বাঁধতেন। রেডিও শুনতেন। ওঁর ঘরের ভেতর থেকে রেডিওর আওয়াজ ভেসে আসতো আর চারপাশকে অদ্ভুত রহস্যময় রোমাঞ্চে ভরিয়ে তুলতো। ওঁরা সবাই বইয়ের ভাষায় কথা বলতেন। ফলে ভাষার ব্যাপারে খুব সতর্ক হয়ে গেলাম আমি। খবরদার, ঠোঁট ফস্কে যেন অশুদ্ধ কথা না বেরোয়!
তিন কন্যার বাবা খুব রাশভারি। চোখে চশমা, হাতে খবরের কাগজ। তিনি বোধ হয় কোনো কলেজে অধ্যাপনা করতেন। কারণ আব্বা আম্মা বলতেন ‘প্রফেসর সাহেবের বাসা’। মাকে আমরা দেখিনি। শুনেছি তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে আছেন। ওদের একজন ভাই ছিলেন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেও খুব গম্ভীর মানুষ। সে থাকতো বাগানের ভেতর আলাদা আর একটা দালানের ঘরে। খুব ভয় পেতাম ওদিকটাতে যেতে। মনে হত গেলই সেই ভাইয়া চশমার ভেতর দিয়ে কটমট করে তাকাবে! শুক্লা আর মহুয়া আপা ছাড়া ওদের সবাইকেই মনে হত শুধু বড়দের পৃথিবীর মানুষ। আমরা কখনো অধ্যাপক সাহেব বা বড় ভাইকে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে দেখিনি। কিন্তু শুক্লা, মহুয়া আপা, আমি আর আমার ছোট বোন কাজল, আমরা চারজনে মিলে তৈরি করে ফেলেছিলাম সাংস্কৃতিক দল। প্রতিদিনই দৌড়াদৌড়ি আর চোখ পলান্তি খেলা শেষে আমরা শুক্লাদের বারান্দার বিশাল সিঁড়িতে বসে গল্প করতাম আর করতাম গান। শুক্লা মহুয়া আপা দুজনেই রবীন্দ্রনাথের গান করতো। সিঁড়ির ধার ঘেঁসে স্পাইডার লিলির ঝোপ। সাদা সাদা সরু পাপড়ি বাঁকিয়ে ফুটে থাকা ফুলের দল আমাদের সাথে দুলে দুলে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতো- হারে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দে রে দে রে! নিত্য নতুন পরিকল্পনা করি আমরা। নিজেরাই গান আর নাচের স্টেজ শো করি। স্টেজ বলতে শুক্লাদের শোবার ঘরে খাটের স্ট্যান্ডে দড়ি টাঙিয়ে শাড়ি ঝুলিয়ে পর্দা টাঙানো হয়। তারপর আমরাই দর্শক আমরাই পারফরমার। যাকে যখন গান গাইতে হবে সে দর্শক সারি থেকে উঠে গিয়ে খাটে দাঁড়িয়ে গান করবে। নাচও হয়। লালবাগ স্কুলে পানিশমেন্ট খাওয়া সেই অভিশপ্ত গান ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার মানা’ সেটা শুক্লা আর মহুয়া আপার সঙ্গত পেয়ে নাচে পরিণত হল। সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি, মেঘে মেঘে আকাশ কুসুম তুলি… বুকের ওপর দু হাতের পাতা ক্রস করে ফুলের মত ছড়িয়ে কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত দোলাতে দোলাতে বসে গিয়ে সূর্যের অস্তাচলে ঢলে পড়ার মুদ্রাটাকে মনে হত অদ্ভুত সুন্দর। নৃত্যকলায় অঙ্গসঞ্চালনার আনন্দে বুঁদ হয়ে গানের কথাকে আর সেভাবে বুঝতে পারতাম না। গাইতাম সূর্য যখন আস্তে পড়ে ঢলে, মেঘে মেঘে আকাশ কুসুম তোলে। পরে নাচের এই বিদ্যে জাহির করেছিলাম স্কুলের একটা অনুষ্ঠানেও। আল্লাহ, হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে কী যে নৃত্যকলা করতাম! কিন্তু আমার মামী প্রতিদিন সেটা একবার করে দেখতে চাইতেন। এভাবে একদিন মঞ্চস্থ হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতার নাট্যরূপ। মহুয়া আপা রাজা, শুক্লা হল রানী, বাদবাকি আমরা দাসী আর প্রজা। মহুয়া আপা সামান্য ক্ষতি কবিতা পড়ে আমাদের পাট বুঝিয়ে দিলেন! অভিনয়ের সময় কবিতা আবৃত্তি করতে হবে আমাকে। এমন কি যখন আমি দাসী হয়ে রানীর পেছন পেছন নদীতে যাবো, দরিদ্র প্রজাদের ঘরে আগুন লাগাবো, তখনও আমিই পড়বো কবিতা! কারণ কবিতা মুখস্থতে আমি মাস্টার! সে নাটক দেখতে বসলেন আম্মা মামী এমন কি, আদরের দুলালী রাজকন্যা বিলকিস খালাম্মা আর রূপের গরবী রূপকুমারী শবনম আপাও। বিলকিস খালাম্মা কখনও নিজের লেখাপড়া ছাড়া অন্য কোনো কিছুতে আগ্রহ দেখাতো না। আমরা তখন ফোর কি ফাইভ। সিলেবাসে ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতা নেই। কিন্তু নাটক করার উন্মাদনায় আর রিহার্সালের আবৃত্তিতে সে কবিতা তখনই মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তবে, শাড়ি টাঙিয়ে স্টেজ বানানো, কাগজের মুকুট পরে রাজা-রানী সাজা, তারপর বড়দের সামনে তা অভিনয় করা, সবকিছুই রীতিমত রোমহর্ষক ঘটনা ছিল আমাদের জন্য। রানীর কুবলয়ের জন্য প্রপস ছিল শাপলা। খাতার কাগজ কেটে বানিয়েছিলাম সেই শাপলা। (নিজ হাতে গড়া সেই ‘কাঁচা ঘর’ পদ্মখানাকে কী যে খাসা মনে হয়েছিল!) শাড়িপরা শুক্লারানী সেই পদ্ম হাতে হেলে দুলে হেঁটে গেল আমাদের সামনে দিয়ে। আমার ঠোঁট থেকে পঙক্তি ঝরতে লাগলো, ফিরে গেল রানী কুবলয় হাতে দীপ্ত অরুণ বসনা! রানী চলে গেলে কী হবে, কুবলয় রয়ে গেল আমার স্মৃতির সরোবরে! (চলবে)
ছবি: আমার আধুনিক গানের অ্যালবামের উৎসর্গপত্র। (২০১৫)
ঝর্না রহমান
১২ জুন ২০২০
================ অধ্যাপক ঝর্না রহমান ==============
বিক্রমপুরের কৃতী সন্তান অধ্যাপক ঝর্না রহমান-এর জন্ম ২৮ জুন ১৯৫৯ সালে। তাঁর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরের কেওয়ার গ্রামে। ঝর্না রহমান একজন কথাসাহিত্যিক,কবি ও সংগীত শিল্পী। চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি লেখালিখির সাথে জড়িত।
গল্প উপন্যাস কবিতার পাশাপশি লেখেন প্রবন্ধনিবন্ধ, ভ্রমণসাহিত্য, শিশুসাহিত্য, নাটক। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশের সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। চারটি সম্পাদনা গ্রন্থসহ এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৫০। তাঁর একাধিক গল্প ও কবিতা ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং তা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। কানাডার ভ্যাংক্যুভার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য Trevor Carolan সম্পাদিত দক্ষিণ এশিয়ার গল্প সংকলন The Lotus Singers গ্রন্থে তাঁর গল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত পাঞ্জাবী সাহিত্যিক অজিত কৌর আয়োজিত সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে একাধিকবার সাফল্যের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর পড়াশোনার বিষয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর।
পেশাগত ক্ষেত্রে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা। অবসরে তাঁর কর্মক্ষেত্র লেখালিখি। ঝর্না রহমান একাধারে একজন গীতিকার সুরকার এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী।
এ ছাড়া তিনি কথাসাহিত্যের ছোট কাগজ পরণকথা এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের মুখপত্র ত্রৈমাসিক অগ্রসর বিক্রমপুর সম্পাদনা করেন ।
তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই:গল্পগ্রন্থ: ঘুম-মাছ ও এক টুকরো নারী, স্বর্ণতরবারি, অগ্নিতা, কৃষ্ণপক্ষের ঊষা,নাগরিক পাখপাখালি ও অন্যান্য,পেরেক, জাদুবাস্তবতার দুই সখী,নিমিখের গল্পগুলো,বিপ্রতীপ মানুষের গল্প,বিষঁপিপড়ে, Dawn of the Waning Moon (অনূদিত গল্প) ,তপতীর লাল ব্লাউজ, উপন্যাস: ভাঙতে থাকা ভূগোল, পিতলের চাঁদ, কাকজোছনা। কাব্য: নষ্ট জোছনা নষ্ট রৌদ্র, নীলের ভেতর থেকে লাল, জল ও গোলাপের ছোবল, জলজ পঙক্তিমালা, ঝরে পড়ে গোলাপি গজল, চন্দ্রদহন, উড়ন্ত ভায়োলিন, হরিৎ রেহেলে হৃদয়। কিশোর উপন্যাস: আদৃতার পতাকা, হাতিমা ও টুনটুনি, নাটক: বৃদ্ধ ও রাজকুমারী, প্রবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ: সেঁজুতি, রৌদ্রজলের গদ্য।
মা:রহিমা বেগম,বাবা:মোঃ মোফাজ্জল হোসেন,গ্রামের বাড়ি:কেওয়ার,মুন্সিগঞ্জ। জন্ম:২৮ জুন,১৯৫৯।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।