প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার,২২ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ৬ই কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ৪ঠা রবিউল আউয়াল,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা হজরত মারইয়ামের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টি কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আর এতে প্রকাশিত হয়েছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের সত্যতা। কারণ এ ঘটনা ছিল অনেক আগের। সে বিষয়টি তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন-
ذَلِكَ مِنْ أَنبَاء الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيكَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُون أَقْلاَمَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ
এ হলো অদৃশ্যের সংবাদ, যা আমি আপনাকে পাঠিয়ে থাকি। আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা প্রতিযোগিতা (লটারি) করছিল যে, কে প্রতিপালন করবে মারইয়ামকে এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলো।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৪৪)
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ও হজরত মারইয়াম সম্পর্কিত ঘটনা। যা বাহ্যিকভাবে জানার কোনো সুযোগ ছিল না। বরং তা অদৃশ্য বিষয়ক সংবাদ। আপনার থেকে যা কিছু অদৃশ্য সে সম্পর্কিত কাহিনী, হে মুহাম্মাদ! যা আমি তোমার কাছে ওহি পাঠিয়েছি। মারইয়ামের তত্ত্বাবধানের তথা লালন-পালনের ভার কে গ্রহণ করবে? এ জন্য এটা উদঘাটনের উদ্দেশ্যে যখন তারা তাদের কলম পানিতে নিক্ষেপ করছিল। অর্থাৎ লটারি দিয়েছিল, তখন তুমি তাদের কাছে ছিলে না এবং তাঁর তত্ত্বাবধান সম্পর্কে যখন তারা বাদানুবাদ করেছিল তখনও তুমি তাদের কাছে ছিলে না। যে, বলা যায় তা নিজে জেনে এ সম্পর্কে আপনি এদের সংবাদ দিচ্ছেন; বরং ওহির মাধ্যমেই আপনি সে সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। (তাফসিরে জালালাইন)
নবুয়তের সত্যয়ন
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ও হজরত মারইয়ামের তত্ত্বাবধান ও লটারির বিষয়টি যখন সংঘটিত হয় সে সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত ছিলেন না। এ অনেক আগের ঘটনা। সে ঘটনার বর্ণনা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের অন্যতম সত্যায়ন।
আল্লাহ তাআলা ওহি নাজিল করে সে সময়কার ঘটনা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন। যা এর আগে বিশ্বনবি ও মুসলমানদের কাছে ছিল অদৃশ্য।
নবি-রাসুলগণের জ্ঞানের অন্যতম উৎস হলো ওহি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৃশ্যত লেখা-পড়া করেননি। আবার আহলে কিতাবদের বিশেষ সহচর্যও পাননি। যেখান থেকে তিনি অতিত ঘটনার বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। আর আহলে কিতাবদের সহচর্য পেলেই বা কি হতো? কেননা তারা এমনিতেই তারা নিজেরাই ভিত্তিহীন কল্পকথা ও গালগল্পের অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছিল। হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ও হজরত মারইয়ামের অদৃশ্য ঘটনা আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওহির মাধ্যম এসব জানিয়েছেন। (তাফসিরে ওসমানি)
অভিভাবকত্বের সমাধানে লটারি
এ ঘটনার প্রকৃত বিবরণ যতটুকু জানা যায়, ‘হায়কেল সুলেমানির’ (বায়তুল মুকাদ্দাস)-এর খাদেম হিসেবে অনেক লোক নিয়োজিত ছিল। তাদের কেউ ঝাড়ুদার, কেউ ঘরবাড়ি সংস্থাপনকারী, কেউ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকারী, কেউ পাহারাদার আবার কেউ ছিল মুয়াজ্জিন।
হজরত মারইয়ামের বাবা ইমরান ছিলেন এদের সবার তত্ত্বাবধায়ক। তাঁর ইন্তেকালের পর মারইয়ামের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব কার উপর ন্যস্ত হবে এ নিয়ে খাদেমের মধ্যে বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন হজরত মারইয়ামের নিকটাত্মীয় ও খালু। তখন তারা এ মতে পৌঁছলো যে, ভাগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তখন প্রথা প্রচলিত ছিল যে, তাওরাত যে কলম দিয়ে লেখা হতো, সে কলম দিয়ে তাওরাতের কিছু অংশ লিখে কলমসহ উক্ত লিখিত টুকরো জর্ডান নদীতে নিক্ষেপ করা হতো।
নিক্ষেপ করা কলম স্রোতের অনুকূলেই প্রবাহিত হতো। এ স্রোতের বিপরীতমুখী কলমের অধিকারীকেই কৃতকার্য ও সফল বলে ঘোষণা দেয়া হতো এবং এ ব্যবস্থাকে গায়েবি ইঙ্গিতের স্থলাভিষিক্ত মনে করা হতো। আর মনে করা হতো, স্রোতের বিপরীতমুখী প্রবাহিত কলমের মালিকের পক্ষেই গায়েব থেকে রায় প্রদান করা হয়েছে। (তাফসিরে জালালাইন)
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম এ কলম পরীক্ষা তথা ভাগ্য পরীক্ষায় হজরত মারইয়ামের অভিভাবকত্ব লাভ করেছিলেন। আর এ পুরো ঘটনাটি ছিল বিশ্বনবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের সত্যতা অন্যতম প্রমাণ।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’