প্রকাশিত : সোমবার, ১ জুন ২০২০ ইং ।। ১৮ই জ্যৈস্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।।
বিক্রমপুর খবর : মোঃ রুবেল ইসলাম তাহমিদ। মাওয়া থেকে : দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে বাড়তে পারে পদ্মা সেতুর কাজের মেয়াদ। আগামী মাসের মধ্যে সবগুলো স্প্যান বসানোর কথা থাকলেও নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ ভাগ। জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ ।
আসছে বর্ষা। বর্তমানে পদ্মা নদীতে কোন কোন পয়েন্টে পানি বেড়েছে আগের তুলনায় ৫/৭ ফুটে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, পদ্মায় এ মৌসুমে প্রবল স্রোত থাকে তাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পাড়ে পদ্মা সেতুর কাজের গতি। প্রবল স্রোত থাকে সেটি লৌহজং টানিংপয়েন্টে ।এখানেই উজান থেকে আসা পলি জমে জমে চর হওয়ায়।
চ্যনেলগুলোতে গত পাচঁ দিন ধরে নাব্যতা সংকট থাকায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ডুবোচরে আটকা পড়ে প্রাই ফেরী গুলো। এদিকে নদীতে স্রোত, ডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস। এ প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে দেশি-ও-বিদেশি-প্রশিক্ষণ রত ও শ্রমিকদের প্রকল্পের ভিতর শতভাগ আবাসিক ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। কর্মীদের সংক্রমণ থেকে রক্ষার পাশাপাশি কাজ চালিয়ে যেতে ঈদেও কোনো শ্রমিককে ছুটি দেয়া যায়নি। জাজিরা থেকে মাঝনদী পর্যন্ত ২৮টি স্প্যান বসানো হলেও মাঝে বাদ পড়েছে একটি। বর্ষার আগে এটি বসাতে হবে। চ্যানেলের মধ্যে পলি জমে গেলে এ একটি স্প্যানের জন্য ড্রেজিং করতে হবে ২ কিলোমিটার জুরে নদী। এরপর কাজ ধরা হবে মাওয়া প্রান্তে মূল নদীতে বাকি ১০টি স্প্যান বসানোর কাজ। সবগুলো স্প্যানই জুলাই মাসের মধ্যে বসানোর কথা। সেটা হচ্ছে না, পাশাপাশি পরিবর্তন আসতে পারে প্রকল্পের মেয়াদেও। পদ্মাবহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা জানি না করোনা ভাইরাসের প্রভাব কতদিন চলবে। এটির ওপর নির্ভর করছে মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না। তবে খুববেশি সময় বাড়ানো লাগবে না হয়তো। খুব বেশি হলে ২-৪ মাস বেশি সময় লাগবে। স্প্যানের উপর প্রায় ৩ হাজার করে বসাতে হবে স্ল্যাব। এখন পর্যন্ত বসেছে ১১০৫টি রেল এবং ৫৯৪টি রোড স্ল্যাব। মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৯টি দেশে। বাকি দুটির যন্ত্রাংশ গত মাসে চীন থেকে রওনা হয়েছে, এ মাসের মধ্যে মাওয়া পৌঁছানোর কথা। এদিকে গেল ৩০ মে, শনিবার,সকালে ৩০তম স্প্যানটি বসানো হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ২৬ ও ২৭ নম্বর পিলারে স্প্যান বসানো শেষ হয়। এই দুইটি পিলার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে পড়েছে। ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন বহন করে রওনা দেয়। নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছায় এতে পদ্মাসেতুর সাড়ে ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমাণ হলো। বাকি থাকল আর মাত্র ১১টি স্প্যান। শুরুটা ২০১৫ সালে, শুরুর পর কাজের অগ্রগতি হোঁচট খায় নকশা জটিলতায়। ২২টি পিলারের নিচে মাটির গঠনগত জটিলতা দেখা দিলেও আশা ছাড়েননি প্রকৌশলীরা। দেশি বিদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত দেড়বছর পর নতুন নকশায় শুরু হয় জটিলতায় থাকা পিলারগুলোর কাজ। সে কাজও শেষ হলো অবেশেষে। পরিকল্পনা ছিল, এপ্রিল মাসের মধ্যে সব পিলারের কাজ শেষ করা হবে। প্রকৌশলগত পিপিইর পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত পিপিই ব্যবহার করে আগেই নিশ্চিত করা হয় সুরক্ষা। এর আগে গত ১৭ মার্চ শেষ করা হয়েছিল ৪১তম পিলারটির কাজ। এক সাথে সব পিলারের নকশা সমাধান হলেও ধারাবাহিকতা রক্ষায় একটির পর একটির কাজ শেষ করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।
সেতুর ধরণ- দ্বিতলবিশিষ্ট, কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে, দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৭২ ফুট, ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর, উচ্চতা ৬০ ফুট, চার লেনের সড়ক এবং নিচের তলায় ট্রেন লাইন, থাকবে গ্যাস , বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা, কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ, ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি, উচ্চতা হবে ৬০ ফুট, পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট, মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি, প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হবে ৬টি, মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪টি ।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..