করোনা,বন্যার মাঝে পবিত্র ঈদুল আজহা আজ

0
22
করোনা,বন্যার মাঝে পবিত্র ঈদুল আজহা আজ

প্রকাশিত : শনিবার,১লা আগস্ট ২০২০ইং ।। ১৭ই শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : যথাযথ মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশ ও উৎসবের আমেজে আজ শনিবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ ও পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে পালন করবে অন্যতম বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব।

এবার করোনা পরিস্থিতিতে জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজ হচ্ছে না। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে থেকে শুরু হয় কোরবানির এই প্রচলন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির এ রেওয়াজ চালু হয়।

মহান আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁরই রাস্তায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এ ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্বে কোরবানি ও ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে।

বাণী : মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।

এবার ঈদের ছুটি তিন দিন ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদ উপলক্ষে আজ ৩১ জুলাই,১ আগস্ট শনিবার ঈদের দিন ও ২ আগস্ট রোববার ছুটি থাকবে।

এবারের ঈদের ছুটির সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে। তারা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।

করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঈদ জামাত হবে এলাকার মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা: ঈদের নামাজ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা যাবে;কোলাকোলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জারিকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে বাসা থেকে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে যেতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।

ঈদ জামাতে যাওয়া মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে যেতে হবে। মুসল্লিরা মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করতে পারবেন না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আরো জানানো হয়েছে যে, শিশু, বৃদ্ধ যেকোনো ধরনের অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করবেন না। এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে ছয়টি ঈদ জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭টা ৫০, ৮টা ৪৫, ৯টা ৩৫, ১০টা ৩০ এবং ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।

সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সময়সূচি অনুযায়ী বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, মুকাব্বির থাকবেন ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।

দ্বিতীয় জামাত সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, মুকাব্বির থাকবেন ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।

তৃতীয় জামাত সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হক, মুকাব্বির থাকবেন মাওলানা ইসহাক।

চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে। এ জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম, মুকাব্বির থাকবেন মো. শহীদুল্লাহ।

পঞ্চম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। এ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান, মুকাব্বির থাকবেন খাদেম হাফেজ মো. আব্দুল মান্নান।

ষষ্ঠ ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া, মুকাব্বির থাকবেন খাদেম হাফেজ মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের এই জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এই ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়,এবারের ঈদ জামাত আয়োজনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।

ঈদের অনুষ্ঠান সূচি :

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন,বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কোরবানির পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুতবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনে ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..         

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন