প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং।। ১লা ফাল্গুন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।। ১১ রজব,১৪৪৩ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ২০২১ সালের ফল প্রকাশ হয়েছে। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। যা আগের বছরের চেয়ে ২৭ হাজার বেশি। জিপিএ-৫ পাওয়ায় ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। আর পাসে এগিয়ে মানবিক, জিপিএ ফাইভে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর সারা দেশে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এবার পাসের হারে পাসের হারে সবার ওপরে রয়েছে যশোর শিক্ষাবোর্ড। আর জিপিএ-৫ সংখ্যায় শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। যশোর বোর্ডে অংশ নেওয়া ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৮৭৮ শিক্ষার্থী।
এর পরেই রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড। বোর্ডটিতে অংশ নেওয়া ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী। পাসের হারে তৃতীয় রাজশাহী বোর্ড। অংশ নেওয়া ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮৪ জন পরীক্ষার মধ্যে পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৩২ হাজার ৮০০ জন।
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা বোর্ড। অংশ নেওয়া ৩ লাখ ১০ হাজার ১৫২ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ঢাকা ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৫৯ হাজার ২৩৩ জন। এর পরের অবস্থানে বরিশাল বোর্ড। অংশ নেওয়া ৬৬ হাজার ৭৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৯ হাজার ৯৭১ জন।
এরপর আছে ময়মনসিংহ বোর্ডের অবস্থান। অংশ নেওয়া ৬৯ হাজার ২১৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৭ হাজার ৬৮৭ জন। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে সিলেট বোর্ড। অংশ নেওয়া ৬৬ হাজার ৬৬১ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৭৩১ জন।
এর পরের অবস্থানে রয়েছে দিনাজপুর বোর্ড। অংশ নেওয়া ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৯২.৪৩ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩৪৯ শিক্ষার্থী। সবশেষ অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বোর্ড। অংশ নেওয়া ৯৯ হাজার ৬২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ১৩ হাজার ৭২০। এছাড়া বিদেশি কেন্দ্রে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ জন শিক্ষার্থী। বিদেশের ৮টি কেন্দ্রে ২৬৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৬৪ জন।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর অবশ্য স্বয়ংক্রিয় পাসে শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করেছিলেন। কারিগরিতে এবার জিপিএ-৫ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৭৫ জন, যা আগের বছর ছিল ৪ হাজার ১৪৫ জন।
২০২১ সালে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৭ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ জন।
মাদরাসা রোর্ডের আলিম পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত বছর অবশ্য স্বয়ংক্রিয় পাসে শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করেছিলেন। এবার মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৮৭২ জন। যা আগের বছর ছিল ৪ হাজার ৪৮ জন।
গত বছরের মতো এবারো এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাওয়ায় ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৯৬.৪৯ শতাংশ। বিপরীতে ছাত্রদের পাসের হার ৯৪.১৪ শতাংশ।
৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের গ্রুপভিত্তিক ফলাফলে পাশের হারে এগিয়ে আছে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সংগীত এ তিন বিভাগের ৬ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ২২ হাজার ৬৩১ জন। পাশের হার ৯৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৩৭৩ শিক্ষার্থী। পাশের হারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ তিন বিভাগের ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ জন। পাশের হার ৯৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে এ বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ২৩০ শিক্ষার্থী।
আর ব্যবসায় শিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩২৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ২১৭ জন। পাশের হার ৯৩ দশমিক ২১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ হাজার ৯১৯ শিক্ষার্থী।
এবার ১ হাজার ৯৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মাদরাসা বোর্ড। দেশের ১ হাজার ৩টি মাদরাসার শতভাগ শিক্ষার্থী এবার আলিম পরীক্ষায় পাস করেছেন। এ ছাড়া সাধারণ নয় শিক্ষাবোর্ডের ৭৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছেন। এছাড়া পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউই পাস করেনি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবগুলোই সাধারণ নয় শিক্ষাবোর্ডের অধীনে।
এদিকে প্রকাশিত ফল নিয়ে আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী আগের মতো এবারো পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করার সুযোগ পাবে। পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন শুরু হবে আজ সোমবার থেকে, যা চলবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, ফলে যে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি, তারা আগামীকাল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করতে পারবে। যা চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শিগগিরই পুনর্নিরীক্ষার বিস্তারিত বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
সাধারণত প্রতি বছর এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে এই পাবলিক পরীক্ষা ২০২১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। পরীক্ষা ২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১১টি শিক্ষাবোর্ডে বিভাগভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ছয়টি পত্রে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর আবশ্যিক বিষয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাদ দেওয়া হয় চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষাও।
২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৮ জন। এর মধ্যে অংশ নিয়েছে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন, উত্তীর্ণ হয় ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’