আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই

0
0

প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২ইং।। ১৭ই বৈশাখ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।। ২৮ রমজান,১৪৪৩ হিজরি ।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : সাবেক অর্থমন্ত্রী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মাল আবদুল মুহিত ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।

মুহিতের ছোটভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এই খবর নিশ্চিত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর বেলা ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখান থেকে মরদেহ সিলেটে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত

আবুল মাল আবদুল মুহিতের বর্ণাঢ্য জীবন

আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধারে একজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষা-সৈনিক ও রাজনীতিবিদ। ১৯৩৪ সালে সিলেটে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী।

তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস-এ (সিএসপি) যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন।

মুহিত পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপ-সচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এই বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন।

ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২-৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন লেখকও হিসেবে খ্যাতিমান। তার ২১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে তিনি একজন পথিকৃত এবং বাপার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর) আসন থেকে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মুহিত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হন এবং অর্থমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। তাঁকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়।  তার আসন থেকে নৌকার টিকিটে সংসদ সদস্য হন তার ছোট ভাই সাবেক কূটনীতিক ড. এ কে আবদুল মোমেন। পরে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন, যার ১০টি আওয়ামী লীগ সরকার আমলে, আর দুটি জাতীয় পার্টির আমলে।

(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..

 

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন