আজ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মবার্ষিকী

0
68
আজ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মবার্ষিকী

প্রকাশিত:সোমবার,২৬ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ১০ই কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ৮ই রবিউল আউয়াল,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বিসংবাদিত জাতীয় নেতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তা ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের ১৪৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। এ. কে. ফজলুক হক ১৮৭৩ সালে ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন।

শের-এ-বাংলা, আবুল কাশেম ফজলুল হক বাঙালি রাজনীতিবিদ। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালি কূটনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট শের-এ-বাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন।

তিনি রাজনৈতিক অনেক পদ অলংক্রৃত করেছেন তার মধ্যে কলকাতার প্রথম
মুসলিম বাঙালি মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭ – ১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬ – ১৯৫৮) অন্যতম। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

র‌্যামজে ম্যাকডোনাল্ডের গোলটেবিল বৈঠক
ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের রুপরেখ নির্ধারণের লক্ষ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার র‌্যামজে ম্যাকডোনাল্ড (James Ramsay MacDonald) একটি গোলটেবিল বৈঠক আহবান করেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহাত্মা গান্ধী এই বৈঠক প্রত্যাখান করেন। কিন্তু, মুসলিম লীগ সেই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। ১৯৩০ – ১৯৩১ সালের প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে ফজলুল হক বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিলনে। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে বক্তৃতা দেন। ১৯৩১- ১৯৩২ সালে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক অণুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে কংগ্রেসও যোগ দেয়। এ বৈঠকেও সাম্প্রদায়িক প্রশ্নের সমাধান না হওয়ায় ভারতের শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব চলে যায় বৃটিশের হাতে।

কৃষক রাজনীতি
১৯২৪ সালে শিক্ষামন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেয়ার পর থেকে আবুল কাশেম ফজলুল হক সম্পূর্ণরূপে জড়িয়ে পড়েছিলেন কৃষকদের রাজনীতি নিয়ে। ১৯২৯ সালের ৪ জুলাই বঙ্গীয় আইন পরিষদের ২৫ জন মুসলিম সদস্য কলকাতায় একটি সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন। এই সম্মেলনে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি নামে একটি দল গঠনের সিধান্ত হয়। বাংলার কৃষকদের উন্নতি সাধনই ছিল এই সমিতির অন্যতম লক্ষ্য। ১৯২৯ সালেই নিখিল বঙ্গ প্রজা সম্মেলন অণুষ্ঠিত হয় কলকাতায়। ঢাকায় প্রজা সম্মেলন অণুষ্ঠিত হয় ১৯৩৪ সালে। এই সম্মেলনে এ. কে. ফজলুক হক সর্বসম্মতিক্রমে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এই প্রজা সমিতির মধ্য দিয়েই পরবর্তিতে কৃষক-প্রজা পার্টির সূত্রপাত ঘটে।

১৯৩৭ –এর নির্বাচন
১৯৩৭ সালের মার্চে বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টির পক্ষ থেকে পটুয়াখালী নির্বাচনী এলাকা থেকে এ. কে. ফজলুক হক ও মুসলিম লীগের মনোনীত পটুয়াখালীর জমিদার ও ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য খাজা নাজিমুদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করেন। মুসলিম লীগ প্রার্থী খাজা নাজিমুদ্দিনের নির্বাচনী প্রতীক ছিল “হারিকেন” আর হক সাহেবের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল “লাঙ্গল”। কৃষক প্রজা পার্টির শ্লোগান ছিল, “লাঙল যার জমি তার, ঘাম যার দাম তার”। পটুয়াখালীতে এ. কে. ফজলুক হক ১৩,০০০ ভোটে পেয়েছিলেন। অপরদিকে, খাজা নাজিমুদ্দিন ৫,০০০ হাজার ভোট পেয়ে ৭,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

বাংলার প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ. কে. ফজলুক হক বহু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেই জোড় দিয়েছিলেন বেশি। তার আমলে দরিদ্র কৃষকের উপরে কর ধার্য না করে সারা বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়। “বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ”-এর পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন। এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বৃটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে “ক্লাউড কমিশন” গঠন করে।

লাহোর প্রস্তাব
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অণুষ্ঠিত মুসলীম লীগের অধিবেশনে সভাপতি ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ আর ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের উপস্থাপক ছিলেন এ. কে. ফজলুক হক। এই লাহোর প্রস্তাবই “পাকিস্তান প্রস্তাব” হিসেবে পরবর্তীকালে আখ্যায়িত হয়। লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে আরও জানতে

মুসলিম লীগে যোগদান
১৯৪৬ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে বরিশাল অঞ্চল ও খুলনার বাগেরহাট অঞ্চল থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি নির্বাচিত হন। কিন্তু, দলীয় ভাবে পরাজিত হলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রীসভা গঠন করেন ও বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই নির্বাচনের পর দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে হক সাহেব মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু দলের সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন নীরব।

কৃষক শ্রমিক পার্টি গঠন
১৯৫৩ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় তার বাস ভবনে কৃষক-প্রজা পার্টির কর্মীদের সম্মেলন অণুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে দলের নাম থেকে প্রজা শব্দটি বাদ দিয়ে ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’ গঠন করা হয়। আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করে এই পার্টির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এ. কে. ফজলুক হক।

যুক্তফ্রন্ট গঠন
১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এ. কে. ফজলুক হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে গঠিত হল যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার জন্য এ সময়ে সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’কে দৈনিক পত্রিকায় রুপান্তর করা হয়। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছিলেন ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ নির্বাচন অণুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ ৯ টি আসন লাভ করে। ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল এ. কে. ফজলুক হক চার সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রী সভা গঠন করেন। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় ১৫ মে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি ছিল। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ এই ২১ দফা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর হন।

Tomb Of Three Leaders

Tomb Of Three Leaders

মৃত্যু
১৯৫৮ এর ২৭ অক্টোবর আবুল কাশেম ফজলুল হককে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সোর্বচ্চ পদক “হেলাল-ই-পাকিস্তান” খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে এ. কে. ফজলুক হক ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে সমাহিত করা হয়। একই স্থানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর রয়েছে। তাদের
তিনজনের সমাধিস্থলই ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার নামে পরিচিত।

শিক্ষানুরাগী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক হিসেবেও ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। শেরেবাংলার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে মহান এই নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..

‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন