প্রকাশিত : বুধবার,২৫ মার্চ ২০২০ ইং ।। ১১ চৈত্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক :আজ ভয়াল ২৫ মার্চ,জাতীয় গণহত্যা দিবস।এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক হৃদয় বিদারক দিন। বিশ্বের ইতিহাসে ঘৃণ্যতম হিংস্রতা ও নির্মম পৈশাচিকতার দিন।১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বর্বর এক দানবীয় নিষ্ঠুরতায় মেতে ওঠে।গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে সশস্ত্র অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ও নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। শুরু করে ইতিহাসের ভয়াবহ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। কি নির্দয় ও বীভৎস ছিল সেই দৃশ্য! কি ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতা! চারিদিকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের গগন বিদারী শব্দ। রক্তের বন্যা আর সারি সারি লাশের স্তুপ। দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য ভয়ার্ত মানুষের আর্তচিৎকার।আকাশ ছোঁয়া আগুনের লেলিহান শিখা। দানবচক্রের লুটপাট আর ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত চিহ্ন।ভয়াবহ ও গণবিধ্বংসী এই হত্যালীলা আর ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে বিশ্ববাসী হয় স্তম্ভিত,বিস্মিত।বেদনায় হয় অশ্রু সিক্ত।গভীর মর্মাহত।
১৯৭১ সালের এইদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানানদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকসা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালীদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা শুরু করে।
একাত্তেরর ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকান্ডই ছিল না,এটা ছিল মূলতঃ বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলংকজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,২০১৭ সালের পূর্বে আমরা এই শহীদদের যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করতে পারিনি। তাদের স্মরণে সুনির্দিষ্ট একটি দিবসও কোন সরকার ঠিক করে যায়নি। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশাল পটভূমিতে ২৫ মার্চ রাত্রির ভয়াবহ পরিবেশ ও পরিস্থিতির অবদান কোনভাবেই খাটো করে দেখার নয়।
গণহত্যার ঠিক ৪৬ বছর পর স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদ ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা’ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ঐতিহাসিক এই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সমগ্র জাতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে চিরদিন।
জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পাওয়া এই দিনটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের জন্য তাঁর সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিবে বলেও তিনি সেই সময় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। জাতি প্রত্যাশা করে, তাঁর সরকারের আমলেই আন্তর্জাতিকভাবে এই স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হবে।
জাতীয় সংসদে গত ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার সব ধরনের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
তবে দিনটি ঘিরে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নানা ষড়যন্ত্র করেও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে প্রতিহত করতে না পেরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করতেই ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদাররা এ দেশের গণমানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব মানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন।’ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে বর্তমান সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করে আসছে। বেশ কিছু বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
২৫ মার্চের রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। তাদের সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চুড়ান্ত উদাহরণ।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন তার ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বর্ণনার একপর্যায়ে লিখেছেন, ‘মাত্র ১৫ মিনিটে হত্যা করা হলো প্রাণোচ্ছল ১০৯ ছাত্রকে। ইকবাল হলের ছাদে মরদেহগুলো যেন শকুনের অপেক্ষায় ফেলে রাখা হলো। হিন্দু ছাত্রদের দেহগুলো রাখা হয়েছিল জ্বালানি কাঠের মতো স্তূপ করে। রাতে মরদেহগুলো কবর দেওয়ার জন্য কয়েকজন ছাত্রকে দিয়ে গর্ত খোঁড়ানো হলো। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে তাদের গুলি করে সেই গর্তে ফেলে দিল পাকিস্তানি সৈন্যরা। সে রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার হলো আরও ৩ হাজার লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা।’জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন।রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো।সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক ও রেসকোর্স ময়দানের উত্তাল জনসমুদ্রে তাঁর ঘোষণা “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”- বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত শপথে তারা বলীয়ান হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে তখন পূর্ব-পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়ে।এতে শুরু হয় রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট। এই সংকট সমাধানে ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় আসেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দফায় দফায় আলোচনায় মিলিত হন। জুলফিকার আলী ভূট্টোসহ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও ওই আলোচনায় অংশ নেয়। লোক দেখানো ওই আলোচনার আড়ালে তারা পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ ও অস্ত্র মজুদ করার কাজ সম্পন্ন করে। রক্তলিপ্সায় ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টো আলোচনাকে ব্যর্থ করে ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ঢাকা ত্যাগ করেন। পরিণামে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে ইতিহাসের ভয়াল কালরাত,১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। ওই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শুরু করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’নামের এক পরিকল্পিত সামরিক অভিযান,যা নয় মাসব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী হয়।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই সশস্ত্র সামরিক অভিযান নিছক বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের একটি সামরিক চেষ্টা মনে করার কোন কারন নাই। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল এক ভয়াল গণহত্যার নীল নকশা। যার প্রস্তুতি চলছিল অনেক আগে থেকেই। সাংবাদিক রবার্ট পেইন তাঁর ম্যাসাকার বইতে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পশ্চিম পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এক গোপন সামরিক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বাঙ্গালিদের খতম করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকে তিনি সেনা অফিসারদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘ওদের ৩০ লাখ মেরে ফেলো। বাকিরা তোমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে।’ উক্ত বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং ৫৭ ডিভিশনের মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি ‘অপারেশন সার্চলাইট’এর মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন। এ গণহত্যা শুরুর পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তী সময়ে অস্ত্র হাতে মাঠে নামে মুক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত বাঙালি।
‘অপারেশন সার্চলাইট’নামক সামরিক অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরগুলিতে আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা ও ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার ও প্রয়োজনে হত্যা,সামরিক,আধাসামরিক ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ,অস্ত্রাগার,রেডিও,টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখলসহ পূর্বপাকিস্তানের সামগ্রিক কর্তৃত্ব গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত স্বাধীনতা আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করে বাঙালিদের ক্রীতদাসের জাতিতে পরিণত করা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা উদীয়মান বাঙালী জাতিসত্তাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। সেই জন্য বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয় বাংলাদেশে। ভয়ঙ্কর ওই রাতের অভিযানে কতজন হতাহত হলো তার প্রকৃত হিসাব না পাওয়া গেলেও ২৮ মার্চ’৭১-র নিউয়র্ক টাইমস দশ হাজার মানুষ নিহত হবার খবর দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে নোবেল বিজয়ী আলফ্রেড কাস্টলার এর মন্তব্য উল্লেখযোগ্য। তিনি তার মন্তব্যে বলেছিলেন, হিরোসিমায় পারমানবিক বোমায় হত্যাকাণ্ডের চেয়েও বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ছিল অনেকগুণ বেশি ভয়াবহ।
সমাজবিজ্ঞনী জে আর রুমেলও এই গণহত্যাকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তার ডেথ বাই গভর্ণমেন্টস বইতে লিখেছেন, ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী আধাসামরিক বাহিনীগুলো প্রতি পঁচিশজন বাঙালির একজনকে হত্যা করেছেন যার সবচেয়ে কদর্য ও কুৎসিত চেহারা দেখা গেছে একাত্তরের দুইশ সাতষট্টি দিনে।
অস্ট্রেলিয়ার “সিডনি মর্নিং হেরাল্ড”পত্রিকার ভাষ্যমতে শুধুমাত্র পঁচিশে মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী নয় মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই বর্বর ইতিহাসকে।
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তনের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ব চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়,“১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশী মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।”
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড.গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা,অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য,ড.মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে বাড়িতে থেকে মোমবাতি প্রজ্বোলনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ দেশের ১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।