প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২ইং।। ১ বৈশাখ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।। ১২ রমজান, ১৪৪৩ হিজরি ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। বাংলা ভাষাভাষীদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পয়লা বৈশাখ।
নতুন বছর নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। শুভ্রতার প্রত্যাশায় তাকে স্বাগত জানাতে মানুষ পথে নেমে আসে। প্রভাতের প্রথম আলোয় সংগীত সমাবেশ আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বরণ করে নতুন বছরকে। আজ পহেলা বৈশাখ। আজ সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে নতুন বছর, বঙ্গাব্দ ১৪২৯। আজ নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন করোনা মহামারির তাণ্ডবে গত দুই বছর বন্ধ ছিল বৈশাখ উদযাপন। এ বছর তাই নতুন উদ্যমে বৈশাখ বরণের প্রতীক্ষায় পুরো জাতি। আজ প্রভাতে সবাই গেয়ে উঠবে—‘নব আনন্দে জাগো—আজি নব রবি কিরণে,/ শুভ্র-সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে!’
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও সেজেছে রমনার বটমূল। বৈশাখী আয়োজনের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে নগরবাসী। করোনার প্রকোপ থাকায় গত দুই বছর কোনো বৈশাখী উৎসব আয়োজিত হয়নি। এবার ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীরাও আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন। প্রতি বছর ১২৫ জন শিল্পী আয়োজনে অংশগ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবার ১০০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন।
এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে শুরু হবে। শেষ হবে ৮টা ৩০ মিনিটে। আয়োজনে এবার গেটের সংখ্যা আটটি। তার মধ্যে প্রবেশপথ তিনটি যথাক্রমে অরুনোদয়, রমনা রেস্তোরাঁ, অস্তাচল। বের হওয়ার পথ দুটি যথাক্রমে বৈশাখী ও উত্তরায়ন। একইসঙ্গে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ তিনটি যথাক্রমে শ্যামলিমা, স্টার গেট এবং নতুন গেট।
আগত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে জরুরি চিকিৎসা সেবা, নারী/সিনিয়র সিটিজেন/শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। এছাড়া লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার কোনো খাবারের দোকান থাকছে না। বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে তাই রমনাসহ পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিয়োজিত থাকবে নিরাপত্তা কর্মীরা।
দিনটি উপলক্ষে সকাল ৯টায় টিএসসি সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণ থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। ইউনেস্কো কর্তৃক ‘মানবতার স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষিত মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের শ্লোগান ‘নির্মল করো মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।
এবার পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এ দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫ টার পর কোনভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোন ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রেও (টিএসসি) সামনে রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিবর্গ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদের সামনে ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সামনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন এবং এই উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট থাকবে।
বর্ষবরণে আকাশ পথেও নিরাপত্তা দেবে র্যাব
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবারের পহেলা বৈশাখে আকাশ পথেও নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমরা এবার আকাশ পথেও নিরাপত্তা দেবো। আকাশ পথে হেলিকপ্টারযোগে সম্ভাব্য সব স্থানে নজরদারি অব্যাহত রাখা হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সদা প্রস্তুত। মোটরসাইকেল টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। থাকবে স্ট্রাকিং রিজার্ভ ফোর্স। তাৎক্ষণিক যেকোনো প্রয়োজনে তাদের নামানো হবে। এছাড়া র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সাইবারে নজরদারি করবে।
র্যাবের স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন থাকবে। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। র্যাবের ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
২১ বছরেও রমনা বটমূলে বোমা হামলার বিস্ফোরক মামলার বিচার শেষ হয়নি
২০০১ সালের আজকের এইদিন (পহেলা বৈশাখ ১৪০৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলাকালে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি ও ১০টা ১৫ মিনিটের পর অন্য বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। এতে ১০ জন নিহত হওয়াসহ আহত হন আরও অনেকেই। এ ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে ওইদিনই রমনা থানা পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি মামলা করে।
আট বছর আগে হামলার ঘটনায় হত্যা মামলার রায়ে আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে ২১ বছরেও একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।
পয়লা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে উঠবে সারাদেশ। বর্ষবরণের এ উৎসব আমেজে মুখরিত থাকবে বাংলার চারদিক। গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য।
মূলত, ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এসময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় , উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’