আগামী ১৫,১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

0
11

প্রকাশিত:শুক্রবার,২৫ জানুয়ারি ২০১৯।

বিক্রমপুর খবর::অনলাইন ডেস্ক: পবিত্র হজের পর মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। অবশেষে তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের অবসান হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে টঙ্গীর তুরাগ তীরে আয়োজন হতে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে দাওয়াতে তাবলীগের শীর্ষ মুরব্বীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে গত বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন,আল্লাহর রহমতে তাবলিগের দুই গ্রুপের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের সম্মতিতে আমরা একসঙ্গে একপর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার সফল সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। সবার সহযোগিতায় সেটা করা সম্ভব হয়েছে।

বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন,আপনারা জেনে খুশি হবেন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত নিয়ে এখন আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। গোলমাল অভিযোগও নেই। কোনো রকম বিশৃঙ্খলাও নেই। অতীতের মতো আমরা এদেশে সবাই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করব। সুশৃঙ্খলভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রেখে বিশ্ব ইজতেমার পবিত্রতা অক্ষুণ্ন রাখব। আশা করছি ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন,দীর্ঘদিন ধরে ইজতেমা নিয়ে বিশৃঙ্খলা চলছে। এটাকে প্রশমিত করার জন্য এতদিন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছি। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। গতকালকের বৈঠকে আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করার ফলে দুই গ্রুপকে একত্রে বসাতে সক্ষম হয়েছি। ঐ বৈঠকে শেষ পর্যন্ত আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাই,এবার বিশ্ব ইজতেমা একসঙ্গেই হবে। তারিখটা নির্ধারণ করার জন্যই আজকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে।

ধর্ম প্র‌তিমন্ত্রী বলেন,আমরা কিছু চাপিয়ে দেইনি। আমরা শুধু একটা কথাই বলেছি, তাবলিগ জামাতের এত বড় কাজ যেন একসাথে করা হয়, সারা দেশবাসী যেন খুশি হয়। ওনারা রাজি হয়েছেন।

তিনি বলেন,দুইপক্ষ দুইটা তারিখ ঠিক করেছিলেন। একপক্ষ ৮ এবং অপর পক্ষ ২২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছিলেন। মীমাংসার পথ হিসেবে আমরা প্রস্তাব দেই,যাতে এমন না হয়,একদল বলল ওনাদের কথা মতো তারিখ ঠিক হল আবার আরেক দল বলল ওনাদের কথা মতো তারিখ ঠিক হল। দুইটির মাঝামাঝি ১৫,১৬ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ধর্মসচিব আনিছুর রহমান,তাবলিগ জামাতে একপক্ষের সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, খান সাহাবুদ্দিন নাসিম এবং অপরপক্ষের মাওলানা জুবায়ের,মাওলানা ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য,তাবলীগ জামাতের ভেতরে মাওলানা সাদ কান্দালভিকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব চরম আকর ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার পর তাবলীগ জামাতের দু’পক্ষ আলাদাভাবে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে।

১১,১২ ও ১৩ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন সাদপন্থীরা। এর বিরোধিতা করে ১৮,১৯ ও ২০ জানুয়ারি ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন হেফাজতপন্থী মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা।

এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন।

সাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ,বেশ কিছু কাল ধরেই তাবলীগ জামাতে সংস্কারের কথা বলছেন তিনি। সাদ বলেন,ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা জায়েজ নেই। যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড পড়ে বলে মনে করা হয়।

সাদ আরো বলেন,মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত। কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন,সাদ যা বলছেন-তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী। তাদের বক্তব্য,সাদের কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

বুধবারের (২৩ জানুয়ারি) বৈঠক শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরও বলেন,‘তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষ ও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ এবং ইজতেমা নিয়ে রিট করার বিষয়টি তাদের কলঙ্কিত করেছে। তাবলিগ সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে আঘাত করেছে। রিট করার বিষয়টি দেশে-বিদেশে সমালোচিতও হয়েছে। আমরা ইজতেমা নিয়ে সমালোচনা চাই না।’

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন