প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ইং।। ৪ঠা পৌষ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।। ১৩ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৩ হিজরী।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বাড়ির উঠানের এক পাশে মাটির ঘর। নেই দরজা জানালা। ঘরের এক কোনে রয়েছে ভাঙা চৌকি। পাশেই পোতা রয়েছে কাঠের খুঁটি। চৌকির উপর বসে থাকা বৃদ্ধকে কোমরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে খুঁটির সাথে। শোয়া বসার জায়গা নেই। পাখা ও বাতিহীন অন্ধকার ঘরে এভাবেই কেটে গেছে তিন যুগ। শিকলে বাঁধা জীবনে যৌবন পার করে এখন বৃদ্ধ সাফাজ উদ্দিন। শিকলবন্দি সাফাজ উদ্দিন মোল্লা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মূলাইদ গ্রামের মৃত রজব আলী মোল্লার ছেলে।
শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ গ্রামে মোল্লা বাড়ির উঠানের এক পাশে মাটির ঘর। বাইরে থেকে চট দিয়ে দুটি জানালা, একটি দরজা বন্ধ রয়েছে। ঘরের ভেতর অন্ধকার। নেই বৈদ্যুতিক পাখা-বাতি। এক পাশে রয়েছে বাড়ির অপ্রয়োজনীয় বস্তু। অন্য পাশে রয়েছে একটি ভাঙা জরাজীর্ণ চৌকি। চৌকির এক কোণে রয়েছে ময়লা ছেঁড়া বালিশ। এতে মাথার স্পর্শ লাগেনি হয়তো বহু বছর। অপরিষ্কার পাত্রে রয়েছে কিছু ভাত। রঙের পটে রয়েছে পানি। ভাঙা চৌকির এক কোণে যবু-থবু হয়ে নির্বাক বসে আছেন সাফাজ উদ্দিন। ঘরে ঢুকতেই ফেল ফেল করে শুধু তাকিয়ে থাকেন।
মুখে কি যেন বিরবির করে বলেন। মুখে লম্বা দাড়ি গোঁফ, মাথায় লম্বা চুল। পরনে ছেঁড়া মলিন জামা কাপড়। গায়ে জড়ানো পুরাতন মলিন চাদর। ঘরের ভেতর দুর্গন্ধ। হয়তো গোসল করেনি অনেক দিন। অনাহার, অনিদ্র, অপুষ্টিতে চোখ দুটি দেবে গেছে। যুগ যুগ ধরে শিকলবন্দি হয়ে আলো-বাতাসহীন বদ্ধ ঘরে এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার দিন। বৃদ্ধ বয়সে এখন পরে আছেন অবহেলা-অনাদর, বিনা চিকিৎসায়, অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও অমানবিক পরিবেশে।
মোল্লাবাড়িতে গিয়ে সাফাজ উদ্দিনের কথা জানতে চাইলে কথা হয় তার বড় ভাই আফাজ উদ্দিন মেল্লার সাথে। তিনি জানান, তারা ৫ ভাই ৪ বোন। আফাজ উদ্দিন মৃত রজব আলীর প্রথম স্ত্রীর সন্তান। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা ছায়তুন নেছাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় সাফাজুদ্দিনসহ ৪ ভাই ৪ বোন। সকল ভাই বোনদের মধ্যে সাফাজুদ্দিন দ্বিতীয়।
তিনি আরও বলেন, সাফাজুদ্দিনের মাথায় জট ছিল। বিয়ের পর তার স্ত্রী কৌশলে চুলের জট কেটে ফেলে। এরপর থেকেই সে অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে তার মেয়ে ঝর্ণা আক্তারের জন্ম হয়। কিছুদিন পর অসুস্থ স্বামীকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন সাফাজ উদ্দিনের স্ত্রী। তারপর থেকেই প্রায় তিন যুগ ধরে শিকলবন্দি আছে সাফাজ উদ্দিন।
সাফাজ উদ্দিনের এক মাত্র মেয়ে ঝর্ণা আক্তার, মামারা লালন পালন করে বিয়ে দেন। ছোট বেলা থেকেই দেখছেন তার বাবা শিকলবন্দি। যখন বুঝতে শিখেছেন, তখন জানতে পারেন তার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। চাচারা বাবার কি চিকিৎসা করিয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই। বহু বছর ধরে বাবা বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছে। বাবা অসুস্থ হওয়ায় তার জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি। এ নিয়ে তিনি নানা বিড়ম্বনায় আছেন।
তিনি আরও বলেন, তার স্বামী ইট ভাটার লড়িচালক। স্বামীর সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানোর পর বাবার ভরণপোষণ দিতে পারেন না। বাবার মালিকানার জমি ভোগ দখল করতে পারছেন না। বিক্রিও করতে পারছেন না। বিনা চিকিৎসায় ধুকছেন তার বাবা। বাবার এমন দুর্ভোগের জীবন দেখে শুধুই চোখের জল ফেলেন তিনি। প্রায় তিন যুগ ধরে তার বাবা শিকলবন্দি হয়ে অন্ধকার ঘরে অমানবিক পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন। ভাঙা চৌকিতে তার দিন কাটে বসে থেকে। সামান্য শোবার মতো এতটুকু জায়গা নেই তার।
সাফাজ উদ্দিনের বৃদ্ধা মা ছায়তুন নেছা জানান, তার স্ত্রী নেই। কেউ দেখাশোনা করেনা। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ছেলেকে ফেলে দিতে পারেন না। এ ভাবেই যুগ যুগ ধরে বেঁধে রেখে ভরণ পোষণ দিচ্ছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন জানান, সাফাজ উদ্দিন আমার আত্মীয়। বহুবছর ধরে সে অসুস্থ। তার একটি মেয়ে আছে। সাফাজ উদ্দিনের মানবিক জীবন যাপনের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি সরেজমিনে খবর নিয়ে এ ব্যপারে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।