প্রকাশিত : বুধবার, ১৩নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।।২৮ কার্তিক১৪৩১বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।।১০ জমাদিউল–আউয়াল, ১৪৪৬হিজরী।
বিক্রমপুরখবর : অফিস ডেস্ক : আজ ১৩ নভেম্বর বুধবার বিকেলে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন মুন্সিগঞ্জ জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেন। এসময় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর সঙ্গে সফরসঙ্গী ছিলেন অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট কাজী কামরুল ইসলাম, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট ইফতি হাসান ইমরান, মুহসিনা হোসেন তুষি, মো: জুলফিকার হোসাইন রনি, শহিদুল ইসলাম, দুরদানা রহমান প্রমুখ।
১৪/১৫ জনের সফর সঙ্গী নিয়ে জেলার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামে অবস্থিত বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শনে এসে তিনি সফল সঙ্গীদের নিয়ে একে একে সকল গ্যালারি পরিদর্শন করেন। দীর্ঘ সময় ধরে জাদুঘর প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে দেখে এই জাদুঘরের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনায় সামাজিক সংগঠন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন ও বিক্রমপুর জাদুঘরের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং জাদুঘরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
বিক্রমপুর জাদুঘর ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত সকল গ্যালারি পরিদর্শন শেষে সদ্য জাদুঘরের একাংশ অবৈধ ভাবে যায়গা দখল ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে ঘটনা শুনেন। সন্ধ্যার পরে অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় দখলকৃত জায়গাগুলো দূরে থেকে দেখেন।
উল্লেখ্য বিক্রমপুর জাদুঘর চার তলা ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন। জাদুঘরে ঢুকতেই পুরনো দিনের বিশাল বিশাল মাটির মটকা এবং সাবেক এই জমিদার বাড়ির ব্যবহৃত ঢেঁকিশালা।
নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে।
নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি ইত্যাদি এছাড়া বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।
দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের ছবি সম্মিলিত জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল।
তৃতীয় তলায় তালপাতায় লেখা পুঁথি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী,কাঠের সিন্দুক, আদি আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া ১০০০ বছর আগের বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস
বিক্রমপুরের হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এতদিন। তা এখন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের বৌদ্ধনগরী সহ বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সন্ধান পায় মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার প্রমান করে মাটির নিচে প্রাচীন নগরসভ্যতার আবিষ্কার। ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রায় ৩ মিটার গভীর পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্যর নিদর্শন নিয়ে একটি গ্যালারীতে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে। রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত কিছু মহামূল্যবান নির্দশন ও ছবি এই গ্যালারিতে স্হান পেয়েছে। এসব নির্দশন বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে।
প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।