প্রকাশিত: রবিবার, ২৭ডিসেম্বর ২০২০ইং।। ১২ই পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ(শীতকাল)।। ১১ই জমাদিউল-আউয়াল,১৪৪২ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বিক্রমপুরের কৃতী সন্তান বিশিষ্ট লেখিকা রাবেয়া খাতুন এর ৮৫তম জন্মদিন। তিনি ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আজকের দিনে বিক্রমপুরের পাউসার গ্রামে, মামাবাড়িতে। তাঁহার পৈতৃক বাড়ি বিক্রমপুরের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে৷
এদেশের প্রবীণ কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম একজন কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন। ছয় দশক ধরে রাবেয়া খাতুন লিখছেন। মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের দরুন জীবন ঘষে আগুন জ্বেলেছেন, বাংলা সাহিত্যে রেখেছেন প্রোজ্জ্বল স্বাক্ষর। তাঁর কয়েকটি বই ধ্রুপদী সাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে।
তাঁর লেখায় এ দেশের সর্ববিত্ত মানুষের জীবন ফুটে উঠেছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। গল্প-উপন্যাসের বিষয়বস্তু হিসেবে এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও নানা সম্প্রদায় বারবার ফিরে ফিরে এসেছে।
রাবেয়া খাতুনের বাবা মৌলবী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ, মা হামিদা খাতুন। স্বামী চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক ফজলুল হক। চার সন্তান শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসি, টিভি উপস্থাপক প্রবাল ও সুগৃহনী কাকলী। লেখালেখির পাশাপাশি এক সময় রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতাও করেছেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি নারীবিষয়ক মাসিক পত্রিকা।
তার প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একশ‘রও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক। তার গল্প উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি।
রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি, এ যাবৎ কাল পর্যন্ত চার খন্ডে সংকলিত ছোটগল্প সংখ্যায় চারশোরও বেশি। ছোটদের জন্য লেখা গল্প-উপন্যাসও সংখ্যায় কম নয়; রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের প্রধানতম লেখকও।
জরা তাঁকে জড় করতে পারেনি। ভ্রমণের ক্লেশ তাঁর কাছে প্রত্যক্ষাভিজ্ঞতার আনন্দ! কর্মজীবনে অনেক মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন। উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যাঁদের দ্বারা স্মৃতিমূলক রচনার মধ্য দিয়ে তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিতাকে পাঠকের কাছে হাজির করতে।
ছোটগল্প দিয়ে শুরু হলেও লেখকপরিচয়ে প্রথমত তিনি ঔপন্যাসিক। প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পান। ক্ষয়িষ্ণু তাঁতি সম্প্রদায়ের জীবনসংকট ও নাগরিক উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার মধ্যে ব্যক্তিকে আবিস্কার করেছিলেন রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসে।
রাবেয়া খাতুন ভ্রমণসাহিত্য রচনাকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসাবে বিবেচনা করেছেন বলে তাঁর ভ্রমণসাহিত্যের বইও অনেকগুলো। বেশ কিছু আত্মজৈবনিক স্মৃতিমূলক রচনা লিখেছেন। একাত্তরের নয় মাস (১৯৯০) বইয়ে লিখেছেন একাত্তরের শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা।
রাবেয়া খাতুনের উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : মধুমতী (১৯৬৩), মন এক শ্বেত কপোতী (১৯৬৫), অনন্ত অন্বেষা (১৯৬৭), সাহেব বাজার (১৯৬৯), রাজারবাগ শালিমারবাগ (১৯৬৯), ফেরারী সূর্য; বায়ান্ন গলির এক গলি (১৯৮৪), মোহর আলী (১৯৮৫), নীল নিশীথ; বাগানের নাম মালনিছড়া (১৯৯৫), ই ভরা বাদর মাহ ভাদর (১৯৯৫)।
বাংলা সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাবেয়া খাতুন পেয়েছেন বহু পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো একুশে পদক (১৯৯৩), স্বাধীনতা পদক (২০১৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫), শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৬), নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩) এবং কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯’।
করোনা মহামারীর কারণে এ বছর রাবেয়া খাতুনের জন্মদিনের আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। এদিন ছোটকাকু ক্লাবের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে খাদ্য ও কম্বল বিতরণ করা হবে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’