প্রকাশিত : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।। ২১ জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সহধর্মিণী লেডি অবলা বসু চাইলেই হতে পারতেন বাঙালি নারীদের মধ্যে প্রথম ডাক্তার, মেধাবী ছাত্রী হয়েও নিজে সেভাবে বিখ্যাত হতে চান নি ! স্বামীর কীর্তিতে চাপা পড়া এক মহিয়সী মহিলা অবলা বসু যিনি নারীদের শিক্ষা ও স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে সমাজের এক আলোকবর্তিকা..
১৮৮১সালে স্কলারশিপ নিয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেছেন,অবলার ইচ্ছা ডাক্তারি পড়বেন,কলকাতা মেডিকেল কলেজে তখন মেয়েদের পড়ার সুযোগ নেই,অতএব বাবা দুর্গামোহন কন্যা অবলাকে ডাক্তারি পড়তে পাঠালেন মাদ্রাজ যা আজকের চেন্নাই৷ সেখানে পড়ার জন্য অবলা কুড়ি টাকা স্কলারশিপ পেয়েছিলেন৷ কয়েক বছর ডাক্তারি পড়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেন৷ কেন তিনি চলে এসেছিলেন ডাক্তার না হয়ে এই বিষয়ে অনেকের ভিন্ন অভিমত আছে৷ কেউ বলেন তিনি অসুস্থতার জন্য মাদ্রাজে পড়া শেষ করতে পারেন নি,কেউ আবার বলেন বিয়ের জন্য তাকে পড়া ছেড়ে আসতে হয়েছিল! যাই হোক, যদি অবলা বসু মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় না ফিরতেন বা ফিরে আসতে হয়েছে! বোধহয় আরও কিছুদিনের মধ্যে প্রথম মহিলা বাঙালি ডাক্তার হিসেবে তাঁর নাম লেখা হত!
জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে বিয়ে হয় ১৮৮৭সালে৷ দুর্গামোহন দাশ ও ব্রহ্মময়ী দাশের দ্বিতীয় কন্যা অবলা’র আদি বাড়ি বিক্রমপুরের টাঙ্গীবাড়ি থানার তেলিরবাগ,সেই গ্রাম পদ্মা গর্ভে৷ দুর্গামোহনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল জগদীশচন্দ্রের বাবার সাথে৷ বিয়ের পর অবশ্য অবলার একমাত্র লক্ষ ছিল স্বামীকে সাহচার্য দেওয়া,এবং তাকে সববিষয়ে সাহায্য করা৷ জগদীশচন্দ্রের তখন আয় কোথায়,দেশি-বিদেশি অধ্যাপকদের বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে তিনি বেতন নিচ্ছিলেন না৷ বাবার থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া সমস্যার, কারণ তিনি দেশি শিল্প গড়তে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন৷ সবমিলিয়ে বলা যায় আর্থিক একটা সংকট জগদীশচন্দ্র-অবলা বসুর পরিবারে এসেছিল৷
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র নদী পছন্দ করতেন,আবার কলকাতার তুলনায় ভাড়া কম বলে চন্দননগর নদীর পাড়ে ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল৷ অবলা বসুর সেখানে প্রথম সংসার পাতা৷ ১৮৮৮-এর শেষ অথবা ৮৯-এর প্রথমে কলকাতায় আসেন জগদীশচন্দ্র৷ দিদি সুবর্ণপ্রভার সঙ্গে যৌথভাবে ৬৪/২,মেছোবাজার স্ট্রিটে একতলা একটা বাড়ি ভাড়া নিলেন৷ এদিকে ততদিনে দেশি-বিদেশি অধ্যাপকদের বেতন সমান হয়েছে,জগদীশচন্দ্র তিনবছর বিনা বেতনে কাজ করেছিলেন,বকেয়া টাকা একসঙ্গে পাওয়ায় বাবার ঋণের কিছু অংশ শোধ করে দিলেন,আর ঋণের বাকি অংশ শোধ হয়েছিল রাঢ়িখালের সম্পত্তি ও মায়ের গয়না বিক্রি করে৷ এন্টালির কনভেন্ট রোডে একটি বাড়িতে কিছুদিন জগদীশচন্দ্র-অবলা ছিলেন,পরে তাদের আপার সার্কুলার রোডে নিজেদের বাড়ি হয়,এই বাড়ির পাশে বিখ্যাত বসু বিজ্ঞান মন্দির বা বোস ইনস্টিটিউট৷
জগদীশচন্দ্র—অবলা,দু’জনের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তান জন্মেছিল কিন্তু তাঁর মৃত্যু হয়,পরে তাদের আর সন্তান হয় নি৷ হয়ত! অনেক কিছুর মাঝেও এই কারণে সারাজীবন অবলা বসু বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার জন্য সর্বদা সজাগ দৃষ্টি দিয়েছেন,প্রতিভাময়ী,মেধাবী ছাত্রী হয়েও নিজে সেভাবে বিখ্যাত হতে চান নি ! স্বামীর ছায়াসঙ্গী হিসেবে ব্যক্তিগত সচিবের ভূমিকা পালন থেকে দেশ-বিদেশে সর্বত্র পাশে থেকেছেন৷
খুব সত্যি কথা বলতে জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে অবলা বসুর পরামর্শ,অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা লিখে অথবা বলে বোধহয় বোঝানো যায় না! সেই আমলে অত্যন্ত মেধাবী পড়ুয়া স্বামীর বিজ্ঞান প্রতিভা বিকাশের নেপথ্যে থেকেছেন,সবসময় প্রসারিত করেছেন নিজের সার্বিক সাহায্যের হাত৷ অবশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কীর্তি স্থাপনের বদলে অবলা বেছে নিয়েছিলেন আরও অনেক নারীর জীবন প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ৷ নারী-শিক্ষা প্রসারে,অল্পবয়সি বিধবাদের স্বনির্ভর করার জন্য তাঁর অবদান বিশেষ তাৎপর্যময়৷
১৯১৯সালে গড়ে তুলেছিলেন ‘নারী শিক্ষা সমিতি’ এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন,পাঠ্যপুস্তক তৈরি,সন্তান প্রসব ও শিশুদের সুস্বাস্থের জন্য কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল৷ গ্রামগঞ্জে তৈরি হয়েছিল ৮৮টি বিদ্যালয়৷
অবলা বসু জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে অনেকবার বিদেশে গিয়ে সেখানে ছোটদের শিক্ষার পদ্ধতি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন,এদেশে সেসব প্রচলনের চেষ্টা করেছেন৷ নারী শিক্ষা সমিতির প্রি -প্রাইমারী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করার জন্য ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘বিদ্যাসাগর বানী ভবন’ পরে নাম হয়েছিল ‘ বিদ্যাসাগর বানী ভবন টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন’৷ বয়স্ক মহিলাদের অবলা বসুর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘সিস্টার নিবেদিতা ওমেনস এডুকেশন ফান্ড’ এর মাধ্যমে ১৪টি বয়স্ক মহিলাদের জন্য স্কুল তৈরি হয়েছিল৷
নারী ও বিধবাদের শিক্ষা ও স্বনির্ভরতার পাশাপাশি বিধবা মহিলাদের জন্য ‘সাধনা আশ্রম’-এর মত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷
বিখ্যাত স্বামীর প্রতিভার আলোয় অবলা বসু’র নিজস্ব পরিচিতি বোধহয় কিছুটা চাপা পড়েছে! কিন্তু একথা অনস্বীকার্য তিনি চাইলেই প্রথম মহিলা বাঙালি ডাক্তার হতে পারতেন,অবশ্যই তিনি বাঙালি মেয়েদের মধ্যে প্রথম মেডিকেল শিক্ষার্থী৷
আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি..
তথ্যসূত্রঃ সংগ্রামী বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র (সুনীতিকুমার মণ্ডল)
সৌজন্য : এক যে ছিলো নেতা
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor