ঢাকা-বেইজিং চুক্তি স্বাক্ষরের একটি মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর আর্কিওলজিকাল সাইট পার্ক প্রকল্প।
প্রকাশিত : শুক্রবার , ১২ জুলাই ২০২৪ ইংরেজি, ২৮ আষাঢ়,১৪৩১বাংলা(বর্ষা কাল), ৫ মহররম ১৪৪৬ হিজরি
বিক্রমপুর খবর : নিউজ ডেস্ক: চীনে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে ২১টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি এবং ৭ টি ঘোষণাপত্র সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। এর মধ্যে ২টি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশদারিত্বে’ উন্নীত হতেই এসব চুক্তি ও সমঝোতা। গত বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’ এ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এসব চুক্তি-সমঝোতা এবং ঘোষণাপত্র সই হয়। এরমধ্যে একটি মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর আর্কিওলজিকাল সাইট পার্ক প্রকল্প আছে।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে গ্রেট হলে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন লি কিয়াং এবং শেখ হাসিনা।
সকালে গ্রেট হলে পৌঁছালে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। এখানে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অভ্যর্থনা জানিয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে গত ১০ জুলাই বিক্রমপুরের নাটেশ্বর প্রত্নক্ষেত্র সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপার একটি সম্মতিসূচক আনুষ্ঠানিক চিঠি বিনিময় হয়। গত বুধবার বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা ও ঘোষণাপত্র সই হয় সেখানে এটিও ছিল। চুক্তি-সমঝোতা স্মারক ও দলিল সই এর ৯ নং টা ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন প্রকল্পের সংরক্ষণের বিষয়।
বিক্রমপুরের মানুষের পক্ষ থেকে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নূহ উল আলম লেনিন এবং বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর সংবাদটি অবগতির সঙ্গে সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নূহ উল আলম লেনিন এর ফেইসবুকের লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম _
“চমকপ্রদ খবরঃ গৌরবের -আনন্দের
******************************
১০ জুলাই,’২৪। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে গত ১০ জুলাই বিক্রমপুরের নাটেশ্বর প্রত্নক্ষেত্র সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপার একটি সম্মতিসূচক আনুষ্ঠানিক চিঠি বিনিময় হয়। উল্লেখ্য যে ২০১৩ সাল থেকে নাটেশ্বরে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্ব প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু শুরু হয়। এর মধ্যে আমাদের আমন্ত্রণে চীনের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক টিম পর পর তিন বছর এই খননে অংশগ্রহণ করে।
এখানে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের একটি বৌদ্ধ মন্দির নগরী আবিষ্কৃত হয়। ২০ঽ৪ সালে প্রথম পর্যায়ের খনন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হবে সংরক্ষণের কাজ। বিপুল ব্যায় সাপেক্ষ এই সংরক্ষণ কাজে চীন অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্হিতিতে তারই সম্ভাব্যতা যাচাইর ব্যাপারে সম্মতিসূচক চিঠি বিনিময় হয়।
দেশের বৃহত্তম এই নাটেশ্বর প্রত্নক্ষেত্রটিক মাত্র দুদিন আগে বাংলদেশ সরকার সংক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে।”
বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এলাকা একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দায়িত্ব নিচ্ছেন চীন। বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা ও ঘোষণাপত্র সই হয়। তার একটি বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার হাজার বছর পুরোনো মাটির নিচ থেকে আবিষ্কৃত নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন প্রকল্পটি আছে এটি বিক্রমপুরের মানুষের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল হাজার বছর তা বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, গবেষক ও কবি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংগঠন ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ ২০১০ সালে এ অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, গবেষণা ও অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সীমিত আর্থিক সহায়তায় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয় এর আনুষ্ঠানিক খনন। প্রকল্পটির গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে জরিপ ও খনন কাজে ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেন। ২০১৪ সালে নাটেশ্বর বৌদ্ধ নগরীর ‘কার্বন পরীক্ষা’ করা হয়েছিল, ফলাফলে ‘সি-১৪’ পাওয়া যায়, যার মানে এই প্রাচীন নগরী প্রায় ১০০০ থেকে ১২৫০ বছর আগের।
হাজার বছর আগের বিক্রমপুরের এই সভ্যতা আজ বিশ্বের দরবারে উপস্থিত হতে চলেছে। রাজনীতির পাশাপাশি বিক্রমপুরের মানুষের জন্য তথা বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি মহামূল্যবান কাজ করলেন। তিনি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্বরনীয় হয়ে থাকবেন। এখানে গড়ে উঠবে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দেশের মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকবে সবসময়। বিশাল মহাযজ্ঞ কাজের সূত্রপাত হলো কেবল।
বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন খবর দেখতে ছিলাম কখন ডিকলারেশন আসবে বিক্রমপুরের সুখবরটি। আমরা জানতাম অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন ভাইয়ের সাথে ক’দিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতেও বিষয়টি উঠেছিল। সেদিন নূহ-উল -আলম লেনিন ভাই বিক্রমপুরের এই মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত করে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘এই খনন প্রকল্পের উদ্বোধন-ও করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২৮ মে লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্নতত্ত্ব খনন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর করেন। এরপরই বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধানে প্রত্নখনন কাজ শুরু করা হয়।’
বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এলাকা
প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ জনপদ বিক্রমপুর বঙ্গ ও সমতট অঞ্চলের রাজধানী ছিল। প্রাচীন তাম্রলিপিতে একে ‘শ্রীবিক্রমপুর-সমাবাসিত-শ্রীমজ্জায় স্কন্ধাবারাত্’ অর্থাত্ ‘বিজয় শিবির বা রাজধানী’ হিসেবে এবং কোনো কোনো লিপিতে ‘শ্রীবিক্রমণিপুর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি বিশ্ববিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার নালন্দায় অধ্যয়ন করেন। তাকে বিক্রমশীল মহাবিহারের অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয়রোধে রাজা চং ছপের বিশেষ আমন্ত্রণে অতীশ তিব্বতে গমন করেন। তিব্বতীরা তাকে সম্মানসূচক হো-বো-জে অর্থাত্ দ্বিতীয় বুদ্ধ উপাধি দিয়েছিল। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে গৌতম বুদ্ধের পরই অতীশ দীপঙ্করের স্থান। কিন্তু তার বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। বাল্যজীবনে তিনি কোথায় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং কিভাবে বৌদ্ধ ধর্মে বুত্পত্তি অর্জন করেন, তা এখনও সুস্পষ্ট নয়। রঘুরামপুর বিহার এবং নাটেশ্বর দেউল আবিষ্কার সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে বলে আশা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকরা।