প্রকাশিত: শনিবার,৩১ ডিসেম্বর ২০২২।। ১৬ পৌষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।। ৫ জমাদিউস সানি,১৪৪৪ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : মহামারীর দুঃসময় অনেকটাই পেরিয়ে এসেছে দেশ; পেরিয়ে গেছে আরও একটি বছর। ২০২২ সালেও রাজনীতি, চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের কেউ মারা গেছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে, কারও কারও ক্ষেত্রে কোভিডও ছিল ছটিলতার কারণ।
এ এস এম আলী কবীর
আলী কবীর মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে চাকরি করেন পেশাজীবনের শুরুতে। কিছু দিন বাংলাদেশ ব্যাংকেও তিনি চাকরি করেন। পরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
জনপ্রশাসন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১১ সালে তিনি অবসরে যান। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আলী কবীর।
ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পাওয়া আলী কবীর বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তার লেখা কবিতা, ছোট গল্প ও প্রবন্ধের বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।
টি এইচ খান

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, প্রবীণ আইনজীবী এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী টি এইচ খান ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান ১৬ জানুয়ারি। তার বয়স হয়েছিল ১০২ বছর।
টিএইচ খানের পুরো নাম মো. তোফাজ্জল হোসেন খান, জন্ম ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে ১৯৪৭ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ঢাকা হাই কোর্টের যাত্রা শুরু হলে তিনি একজন আইনজীবী হিসেবে হাই কোর্টে কাজ শুরু করেন।
১৯৬৮ সালে টিএইচ খান পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে অবসর নিয়ে পুনরায় আইনপেশায় ফেরেন।
১৯৭৪ ও ১৯৭৯ সালে দুই দফা তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি।
জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে তাতে যোগ দেন সাবেক এই বিচারক। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জিয়ার মন্ত্রিসভায় আইন, শিক্ষা, ধর্মসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমৃত্যু তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
- সাবেক বিচারপতি টি এইচ খানের মৃত্যু

ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জানুয়ারি জীবনাবসান হয় বাংলাদেশের স্পাই থ্রিলার জগতে জনপ্রিয়তম চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি।
অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেন একাধারে ছিলেন অনুবাদক, প্রকাশক, চিত্রনাট্যকার। গানও গাইতেন, তবে সব কিছু ছাপিয়ে তার পরিচয় ছিল সেবা প্রকাশনীর প্রকাশক এবং এই প্রকাশনার সিরিজ মাসুদ রানার লেখক।
১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন ঢাকা বেতারের নিয়মিত শিল্পী। সিনেমায় প্লেব্যাকও করতেন। ১৯৬২ সালে বিয়ে করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে।
গান ছেড়ে গত শতকের ষাটের দশকে প্রকাশনা ব্যবসায় নামেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সেগুনবাগিচায় নিজেদের বাড়িতে গড়ে তোলেন সেগুনবাগান প্রেস। সেটাই পরে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। এ প্রকাশনীর মাধ্যমেই পেপারব্যাক বই বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পায়। গোয়েন্দা সিরিজ কুয়াশা দিয়ে সেগুনবাগান প্রকাশনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপরে আসে মাসুদ রানা।
১৯৭৪ সালে মাসুদ রানার প্রথম চলচ্চিত্রায়ন ঘটে সিরিজের ‘বিস্মরণ’ বইটি নিয়ে। কল্পনার মাসুদ রানার ভূমিকায় এসেছিলেন সোহেল রানা, সেটাই এই চিত্রনায়কের প্রথম সিনেমা। আর মাসুদ রানার জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতার বাচসাস পুরস্কার জেতেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
- ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের চিরবিদায়
কাওসার আহমেদ চৌধুরী

ঢাকার গ্রিন রোডের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ ফেব্রুয়ারি মারা যান গীতিকার, জ্যোতিষ শাস্ত্রবিদ কাওসার আহমেদ চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
কয়েক বছর ধরে কিডনি ও স্নায়ুজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন কাওসার চৌধুরী, এছাড়া দুইবার তার স্ট্রোকও হয়েছিল। তার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
জনপ্রিয় অনেক আধুনিক গানের গীতিকার কাওসার চৌধুরী। তার লেখা গানের মধ্যে রয়েছে- আমায় ডেকো না, যেখানে সীমান্ত তোমার, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে, এই রুপালি গিটার ফেলে, এক ঝাঁক প্রজাপতি ছিলাম আমরা, মৌসুমী, এলোমেলো বাতাসে।
- কাওসার আহমেদ চৌধুরী আর নেই

দেশের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতা আজিজুর রহমান মারা যান এ বছর ১৪ মার্চ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘ছুটির ঘণ্টা’ নির্মাণ করে খ্যাতি পান আজিজুর রহমান; লম্বা ছুটি ঘোষণার পর একটি স্কুলের টয়লেটে এক ছাত্রের আটকে পড়ে মৃত্যুর সেই চলচ্চিত্রায়ন কাঁদিয়েছিল বহু মানুষকে। ছুটির ঘণ্টা ছাড়াও আজিজুর রহমানের তৈরি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘অশিক্ষিত’, ‘মাটির ঘর’।
বেশ কিছু দিন ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে দূরে থাকা আজিজুর রহমান করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর আগে কানাডায় মেয়ের কাছে গিয়ে আটকা পড়েন। জীবদ্দশায় তার আর দেশে ফেরা হয়নি।
- জীবন থেকে ছুটি নিলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতা আজিজুর রহমান

নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
বাংলাদেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে। ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের নাটকীয়তার মধ্যে ওই বছর ৬ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন সাহাবুদ্দীন। শর্ত অনুযায়ী নির্বাচনের পর নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে আবার সুপ্রিম কোর্টে পুরনো দায়িত্বে ফিরে যান। চাকরির মেয়াদ শেষে প্রধান বিচারপতি হিসেবেই অবসর নেন।
সাহাবুদ্দীন পরে ১৯৯৬ সালে আবারও রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ফিরেছিলেন। ওই বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি।
২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেওয়ার পর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঢাকার গুলশানের বাড়িতে অনেকটা নিভৃতে জীবন কাটান।
- সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনাবসান

পাঠকনন্দিত উপন্যাস ‘ঘর মন জানালা’র রচয়িতা দিলারা হাশেম মারা যান ২১ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই সাহিত্যিকের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
দিলারা হাশেম দীর্ঘদিন ভয়েস অব আমেরিকায় কাজ করেছেন। বেতার সম্প্রচারক হিসেবে তিনি ১৯৮২ সালে ভয়েস অফ আমেরিকায় যোগ দিয়েছিলেন।
তার আগেও বেশ কয়েক বছর তিনি ভয়েস অফ আমেরিকায় খণ্ডকালীন বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তিনি বিবিসিতেও বাংলা সংবাদ পড়তেন।
তার আগে করাচিতে থেকে রেডিও পাকিস্তানে নিয়মিত বাংলা সংবাদ পাঠ করতেন দিলারা হাশেম। ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনেও সংবাদ পাঠ করেন তিনি।
দিলারা হাশেমের জন্ম ১৯৩৬ সালে। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার সহপাঠী।
‘ঘর মন জানালা’ ছাড়াও তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘একদা এবং অনন্ত’, ‘স্তবদ্ধতার কানে কানে’, ‘আমলকির মউ’, ‘শঙ্খ করাত’।
- সাহিত্যিক দিলারা হাশেম না ফেরার দেশে

আবৃত্তিশিল্পী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ মারা ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান ১ এপ্রিল।
গত বছরের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল হাসান আরিফকে। লম্বা সময় ধরে চলা চিকিৎসায় শরীরে অক্সিজেন জটিলতার কারণে বেশ কয়েকবারই তার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়। সেখান থেকে তার আর বাসায় ফেরা হয়নি ৫৬ বছর বয়সী এই সাংস্কৃতিক সংগঠকের।
১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া হাসান আরিফ আবৃত্তি চর্চায় যুক্ত হন আশির দশকে। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন।
দেশে আবৃত্তিচর্চার বুনিয়াদ গঠন এবং প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোতে হাসান আরিফের ছিলেন সক্রিয়।
এদেশের সংস্কৃতির বিকাশে নিবেদিতপ্রাণ এই শিল্পী মৃত্যুর আগে তার দেহ দান করে যান বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য।
- আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফের চিরবিদায়

তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর ১৯ এপ্রিল জীবনাবসান হয় ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেলের। বাঁহাতি এই স্পিনারের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।
২০০৮ সালে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মোশাররফের৷ বাংলাদেশের হয়ে ৫টি ওয়ানডে খেলা মোশাররফ ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন দারুণ সফল৷
সবশেষ মাঠে নামেন তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে৷ বিপিএল চলাকালে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ টুর্নামেন্ট শেষে অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক দফা জ্ঞান হারালে পরীক্ষা করানো হয় নানারকম৷ তাতেই ধরা পড়ে, তার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে টিউমার৷
দ্রুতই তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে অস্ত্রোপচারও সফল হয়৷ প্রায় এক বছর ধরে চিকিৎসার পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠেন রুবেল৷ টুকটাক মাঠে আসাও শুরু করেন সেসময়৷ আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার আশাও করেন।
কিন্তু কোভিডের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের খেলাধুলা৷ ওই বছরের নভেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ পরীক্ষায় ধরা পড়ে, টিউমার ফিরে এসেছে আবার৷ মোশাররফের আর মাঠে ফেরা হয়নি।
- ক্যান্সারে থেমে গেল মোশাররফ রুবেলের জীবনের পথচলা

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মান্নান মারা যান এ বছর ২৮ এপ্রিল। ৭২ বছর বয়সী মান্নান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
মান্নান অধ্যাপনা থেকে ১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে (জাগদল) যোগ দিয়ে রাজনীতিতে নামেন। এই জাগদলই ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৯১ সালে বিএনপির টিকেটে গাজীপুরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মান্নান। এরপর বিএনপি সরকার গঠন করলে ধর্ম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী করা হয় মান্নানকে। ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন হলে প্রথম নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হন মান্নান। কিন্তু এরপর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন বেশ কিছু দিন।
বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মান্নান দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। এর আগে তিনি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন।
- গাজীপুরের প্রথম মেয়র বিএনপি নেতা মান্নান মারা গেছেন

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দেওয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চিরবিদায় নেন ৩০ এপ্রিল। ৮৮ বছর বয়সে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই বর্ষীয়ান সদস্য। বার্ধক্যের নানা সমস্যাও পেয়ে বসেছিল।
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করা মুহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সক্রিয় ছিলেন ভাষা আন্দোলনেও।
সাবেক এই আমলা একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক-রাজনৈতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন।
দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পান মুহিত। আশির দশকে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ বিভিন্ন সংস্থায় কাজ শুরু করেন।
এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে কিছুদিন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে পরে আবার বিদেশে চলে যান মুহিত। পরে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন।
২০০৮ সালে সিলেট-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাল ধরেন মুহিত। টানা দশ বছর সেই দায়িত্ব সামলে ২০১৯ সালে রাজনীতি থেকেও অবসরে যান।
মৃত্যুর আগে ১৬ মার্চ সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্মাননা গ্রহণ করে মুহিত বলেছিলেন, “আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এর জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।”
- আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবনাবসান

ঢাকার আজিমপুরের বাসায় ৮ মে জীবনাবসান হয় গীতিকার ও সাংবাদিক কে জি মোস্তফার। ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’ এর মতো জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি।
গীতিকার হিসেবে পরিচিত হলেও কে জি মোস্তফা সাংবাদিক ও কলামিস্ট ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
কে জি মোস্তফার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করে দৈনিক ইত্তেহাদে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক মজলুম, দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক স্বদেশ এবং সাপ্তাহিক জনতায় কাজ করেছেন।
১৯৭৬ সালে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হয়ে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দিয়েছিলেন কে জি মোস্তফা। ১৯৯৬ সালে সিনিয়র সম্পাদক (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে তিনি অবসর নেন।
কে জি মোস্তফা অনেক সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘মায়ার সংসার’, ‘অধিকার’, ও ‘গলি থেকে রাজপথ’। কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ, ছড়ার বই, গানের বইও প্রকাশিত হয়েছে তার।
- ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’র গীতিকার কে জি মোস্তফা আর নেই
আবদুল গাফফার চৌধুরী

ভাষার জন্য বাঙালির রক্তদানের স্মৃতি জড়ানো একুশের গানের রচয়িতা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী গাফফার চৌধুরী ছিলেন একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলার নির্বাহী সম্পাদক। ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করলেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তার কলম সোচ্চার ছিল বরাবর।
প্রবাসে থেকেও ঢাকার পত্রিকাগুলোতে তিনি যেমন রাজনৈতিক ধারাভাষ্য আর সমকালীন বিষয় নিয়ে একের পর এক নিবন্ধ লিখে গেছেন, তেমনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা ও প্রবন্ধ।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন, তার আগেই জড়িয়ে যান সাংবাদিকতায়।
দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক জেহাদ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক জনপদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন বিভিন্ন পদে।
গাফফার চৌধুরী ১৯৭৪ সালে স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ি জমান লন্ডনে। তখনই তাদের প্রবাস জীবনের শুরু। সেখানেও বাংলা ভাষার কয়েকটি পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করেছেন।
নাম না জানা ভোর, নীল যমুনা, শেষ রজনীর চাঁদ, সম্রাটের ছবি, সুন্দর হে সুন্দর, বাংলাদেশ কথা কয় তার লেখা বইগুলোর অন্যতম। তার লেখা নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
- একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরীর চিরবিদায়
মহিউদ্দিন আহমদ

ঢাকার উত্তরার বাসায় ২০ জুন জীবনাবসান হয় একাত্তরের নির্ভীক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদের।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া কূটনীতিকদের একজন মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত।
মহিউদ্দিন আহমদের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৯ জুন, ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় নূরপুর গ্রামে। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে লন্ডনে তৎকালীন পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত ছিলেন মহিউদ্দিন।
১ অগাস্ট ট্রাফালগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক সমাবেশে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করার ঘোষণা দেন। ইউরোপের দেশগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের কাজে যোগ দেন।
পেশাদার কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদের চাকরিজীবন কেটেছে নানা উত্থান পতনে। এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল অন্য মন্ত্রণালয়ে। বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখার ‘অপরাধে’ বিএনপি সরকার করেছিল চাকরিচ্যুত।
পরে শেখ হাসিনা সরকারে এসে মহিউদ্দিন আহমদকে চাকরিতে ফেরান, সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেন। অবসরে যাওয়ার পর নিয়মিত কলাম লিখেছেন মহিউদ্দিন আহমদ।
- চলে গেলেন একাত্তরের নির্ভীক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ
আবু মুসা চৌধুরী

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ‘অপারেশন অ্যাভলুজ’ এর নেত্বত্ব দেওয়া নৌ কমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা চৌধুরী মারা যান এ বছর ৮ জুলাই।
নৌ কমান্ডো মুসা মুক্তিযুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপট ও অপারেশন আউটার অ্যাঙ্করসহ ছয়টি সফল নৌ অভিযানে অংশ নেন, সে সময় তিনি ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র। একাত্তরের ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে গ্রিসের পতাকাবাহী তেলবাহী জাহাজ ‘অ্যাভলুজ’ ধ্বংসের অভিযানে অংশ নেতৃত্ব দেন আবু মুসা চৌধুরী। বিশ্বব্যাপী আলোচিত ওই অভিযানে জাহাজে লিমপেট মাইন বেঁধে ছিলেন মুসা, সেই মাইনের বিস্ফোরণে জাহাজটি ডুবে যায়।
অপারেশন অ্যাভলুজের পর ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী মোহনায় এমভি তুরাগ, নারায়নগঞ্জে জাতিসংঘের রসদবাহী জাহাজ মিনি লেডি ও মিনি লায়ন এবং কাঁচপুর ফেরি ও পল্টুন ধ্বংস অভিযানেও অংশ নেন।
আবু মুসা চৌধুরী ছিলেন জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক।
- মুক্তিযুদ্ধের নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী আর নেই
আলম খান

ঢাকার শ্যামলীর একটি হাসপাতালে ৮ জুলাই জীবনাবসান হয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খানের। ৭৭ বছর বয়সী আলম খান কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর জন্ম নেন এই সুরকার। তিনি পপসম্রাট আজম খানের বড় ভাই।
১৯৭০ সালে ‘কাচ কাটা হীরে’ সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন আলম খান; তারও আট বছর পর আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’ সিনেমায় ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানের সুরে বাজিমাত করেন তিনি।
১৯৮২ সালে ‘রজনীগন্ধা’ সিনেমায় আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠে ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত’ এবং এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ এবং রক ধাঁচের ‘তুমি যেখানে, আমি সেখানে’ আজও মনে রেখেছে শ্রোতা।
এ সুরস্রষ্টা শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘সবাই তো ভালবাসা চায়’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটারে’র মতো জনপ্রিয় সব গান।
মোট ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আলম খান। এর মধ্যে পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে ও একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে পুরস্কার পান।
- সুরকার আলম খানের চিরবিদায়
শর্মিলী আহমেদ

বাংলা চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের আলোচিত অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদের জীবনাবসান হয় ৮ জুলাই। ৭৫ বছর বয়সী শর্মিলী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
শর্মিলী আহমেদের আনুষ্ঠানিক নাম মাজেদা মল্লিক। ১৯৪৭ সালের ৮ মে মুর্শিদাবাদের বেলুর চাকে তার জন্ম। অভিনয় জীবনে মঞ্চ, টিভি ও সিনেমায় নানা চরিত্রে তাকে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম ধারাবাহিক নাটক দম্পত্তিসহ বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান শর্মিলী আহমেদ। সুভাষ দত্ত পরিচালিত আলিঙ্গন, আয়না ও অবশিষ্ট, আর্বিভাব সিনেমাতও তিনি কাজ করেছেন।
তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় দেড়শ, নাটক করেছেন চারশর মত। আশি ও নব্বইয়ের দশকে তাকে এত বেশি সিনেমা আর নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যে তার ওই ভূমিকাই অনেক দর্শকের মনেই দাগ কেটে আছে।
- শর্মিলী আহমেদ আর নেই
কাজী এবাদুল হক

ভাষা সৈনিক, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ১৪ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান; তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি ফেনী জেলায় কাজী এবাদুল হকের জন্ম। ফেনী শহরে ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৫৪ সালে ফেনী ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৯০ সালে বিচারক হিসেবে হাই কোর্টে যোগ দেওয়া বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বাংলা ভাষায় রায় লিখে নজির সৃষ্টি করেন। হাই কোর্ট বিভাগে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর আপিল বিভাগেও তিনি এক বছর বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি সর্বোচ্চ আদালত থেকে অবসরে যান।
সাবেক এই বিচারপতি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। সরকার ২০১৬ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
- অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভাষা সৈনিক কাজী এবাদুল হক আর নেই
ফজলে রাব্বী মিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই মারা যান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাটিয়া গ্রামে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তার বিরোধিতার আন্দোলনে নেমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলে রাব্বী মিয়া। পরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হিসেবে অংশ নেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির হয়ে। পরে আবার আওয়ামী লীগে ফেরেন।
তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে যান। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন।
দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
- মারা গেছেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া
করিম উদ্দিন ভরসা

জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা মারা যান ২৩ জুলাই। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন এই রাজনীতিবিদ। পারিবারিক বিরোধসহ নানা জটিলতায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পারেননি স্বজনরা।
করিম উদ্দিন ভরসা রংপুরের বিড়ি শিল্প নগরীখ্যাত কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
- সাবেক এমপি ও শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা আর নেই
অমিত হাবিব

ঢাকার একটি হাসপাতালে ২৮ জুলাই জীবনাবসান হয় সাংবাদিক অমিত হাবিবের। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
তিন দশকের কর্মজীবনে সম্পাদক হলেও বার্তা সম্পাদক হিসেবে দক্ষতার জন্য গণমাধ্যম জগতে খ্যাতি ছিল তার। বার্তা কক্ষে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তার দক্ষতার কথা সহকর্মীদের মুখে মুখে ফেরে।
অমিত হাবিবের জন্ম ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে যশোরে। সাংবাদিকতা শুরু ১৯৮৭ সালে, দৈনিক খবরে। পরের বছরগুলোতে দৈনিক আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, যায়যায়দিন এবং সমকালে তিনি কাজ করেন। মাঝে কিছুদিন চীনের আন্তর্জাতিক বেতারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও যোগ দেন।
২০০৯ সালে নতুন দৈনিক কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন অমিত হাবিব। পরে ওই পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্বও পান। ২০১৮ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দেশ রূপান্তর। মৃত্যুর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বেই ছিলেন।
- সাংবাদিক অমিত হাবিবের জীবনাবসান
মাহবুব তালুকদার

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুদকার ২৪ অগাস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৮০ বছর বয়সী এই কবি ও সাবেক আমলা দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
২০১৭-২০২২ মেয়াদে কেএম নুরুল হুদার কমিশনে নির্বাচন কমিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহবুব তালুদকার ইসির কাজেরই সমালোচক হিসেবে আলোচনায় আসেন বার বার।
মাহবুব তালুকদারের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায়। শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে পরে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে।
১৯৭১ সালে তিনি মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। সেসময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ‘স্পেশাল অফিসার’, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহর পাবলিক রিলেশনস অফিসার মাহবুব তালুকদার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় সহকারী প্রেস সচিবের (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করেন। একসময় তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে তিনি অবসরে যান।
সাবেক এই আমলা লেখালেখি করতেন নিয়মিত। কবিতা, গল্প, উপন্যস, স্মৃতিকথা, ভ্রমনকাহিনী মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০টি। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মাহবুব তালুকদার।
- সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আর নেই
গাজী মাজহারুল আনোয়ার

ঢাকার একটি হাসপাতালে ৪ সেপ্টেম্বর জীবনাবসান হয় কিংবদন্তি গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’- এর মত অসংখ্য কালজয়ী গানের এ স্রষ্টার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
বলা হয়, মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গানের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। তার পরিচালিত ও প্রযোজিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা চল্লিশের বেশি।
১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে মাজহারুল আনোয়ারের জন্ম। ১৯৬৪ সালে তিনি রেডিও পাকিস্তানের জন্য গান লেখা শুরু করেন।বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে টেলিভিশনের জন্যও নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেছেন।
১৯৬৫ সালে সুভাষ দত্তের আয়না ও অবশিষ্ট সিনেমায় মাজহারুল আনোয়ারের প্রথম গান ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ শ্রোতার হৃদয়ে আজও অমলিন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বল কি হবে’ মাজহারুল আনোয়ারেরই লেখা।
১৯৭০ সালে ‘জয় বাংলা’ সিনেমার জন্য (পরে নাম বদলে হয় সংঘাত) মাজহারুল আনোয়ার লেখেন মুক্তিযুদ্ধের সেই প্রেরণাদায়ী গান ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। আনোয়ার পারভেজের সুরে সেই গানকেই পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ আর ‘একবার যেতে দে না’- এই তিনটি গান বিবিসির এক জরিপে ২০ শতকের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসেরও উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে সরকার ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়। ১৯৭২ সালে তিনি পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক।
- গাজী মাজহারুল আনোয়ারের চিরবিদায়
সৈয়দ আমিরুল ইসলাম

সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম মারা যান ৭ সেপ্টেম্বর; তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ১৯৯৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান। এক যুগের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান ।
যুক্তরাজ্যের লিঙ্কনস ইন থেকে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রিধারী সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বিচারপতি হিসেবে অবসরে যাওয়ার পরও আপিল বিভাগে আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন।
২০১৩ সালে আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য সাবেক এই বিচারপতিকে অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যায় রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়েছিল সরকার।
আকবর আলী খান

ঢাকার একটি হাসপাতালে ৮ সেপ্টেম্বর জীবনাবসান হয় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানের। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আকবর আলি খানের জন্ম। ২০০৬ সালে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন সাবেক এই আমলা। পরে সেই সময় রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নে তিনিসহ চার উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছিলেন।
পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আকবর আলি খান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন।
যুদ্ধের সময়ে আকবর আলি মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকায় পাকিস্তানি জান্তা তখন তার অনুপস্থিতিতে তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন আকবর আলী খান। তিনি অর্থনীতি, সমাজ ও স্মৃতিচারণমূলক বই লিখেছেন। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত রাজনীতি ও আর্থ সামাজিক অবস্থা নিয়ে কলাম লিখেছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৭টি।
- আকবর আলি খান আর নেই
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী

ঢাকার একটি হাসপাতালে ১১ সেপ্টেম্বর জীবনবসান হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের এই কাণ্ডারী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
১৯৩৫ সালের ৮ মে জন্ম সাজেদার, তরুণ বয়সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর তার সঙ্গেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯২ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদেও নির্বাচিত হন। এরপর বারবার তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা সংসদ উপনেতার পদে ছিলেন সাজেদা চৌধুরী।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও শেখ হাসিনা তাকে দিয়েছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১০ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে সরকার।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন

ঢাকার গুলশানের বাসায় ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময়ের আলোচিত চরিত্র শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
শাহ মোয়াজ্জেমের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের দোগাছি গ্রামে। সর্বশেষ তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।
তবে বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনও না কখনও যুক্ত ছিলেন তিনি। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, সব প্রতীকে শুধু ভোটই করেননি তিনি, মন্ত্রীও ছিলেন।লেখালেখিও করতেন শাহ মোয়াজ্জেম। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘নিত্য কারাগারে’, ‘বলেছি বলছি বলবো’, ‘ছাব্বিশ সেল’, ‘জেল হত্যা মামলা’
রণেশ মৈত্র

ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট রণেশ মৈত্র ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিকের বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে রণেশ মৈত্র ছিলেন অগ্রণীদের কাতারে। ষাটের দশকের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খেটেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাবনায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হলে সেই কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
রণেশ মৈত্রর জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর, রাজশাহী জেলার নহাটা গ্রামে। ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিয়ে তার রাজনীতির শুরু। পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ হয়ে যান মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপে। নব্বইয়ের দশকে কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরামে যোগ দেন। পরে ২০১৩ সালে যোগ দেন ঐক্য-ন্যাপে।
সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করে পরে দৈনিক সংবাদ, ডেইলি মর্নিং নিউজ, ডেইলি অবজারভার, দি নিউ নেশন এবং ডেইলি স্টারে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।
‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’, তার জীবনীমূলক বই ‘নিঃসঙ্গ পথিক’, ‘আঁধার ঘোচানো বঙ্গবন্ধু’ রণেশ মৈত্রের লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
তোয়াব খান

ঢাকার একটি হাসপাতালে ১ অক্টোবর জীবনাবসান হয় সাংবাদিক তোয়াব খানের। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তোয়াব খানের আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হত ‘পিণ্ডির প্রলাপ’। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য সরকার ২০১৬ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন তোয়াব খান। সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এবং প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং পরে ১৯৯১ সালের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিব ছিলেন তিনি।
তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল, সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে। ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতায় তার সাংবাদিকতার শুরু। পরে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান।
দৈনিক জনকণ্ঠের শুরু থেকে ছিলেন উপদেষ্টা সম্পাদক। সর্বশেষ তিনি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।
সমরজিৎ রায় চৌধুরী

ঢাকার একটি হাসপাতালে ৯ অক্টোবর মারা যান একুশে পদকজয়ী চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান লেখার পর অলংকরণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার প্রধান ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। এই কমিটির সদস্য হিসাবে কাজ করছিলেন সমরজিৎ রায়।
১৯৩৭ সালে কুমিল্লা জেলায় সমরজিৎ রায় চৌধুরীর জন্ম। ১৯৬০ সালে তিনি তখনকার সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক শেষ করেন। সেখানে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানের মত শিল্পীদের।
স্নাতক শেষ করে চারুকলা অনুষদেই শিক্ষকতায় যোগ দেন সমরজিৎ, ৪৩ বছর সেই দায়িত্ব পালন করে ২০০৩ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান। এরপর ২০১০ সাল পর্যন্ত শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির চারুকলা এবং প্রদর্শন কলা বিভাগের ডিন হিসেবে কাজ করেন।
গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেও খুব দ্রুতই তিনি সৃজনশীল শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ২০১৪ সালে শিল্পকলায় একুশে পদক লাভ করেন গুণী এই শিল্পী।
শেখ এ্যানী রহমান
পিরোজপুরের সংরক্ষিত নারী আসন-১৯ এর সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমান মারা যান ১১ অক্টোবর। ৬৩ বছর বয়সী এই এমপি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শেখ এ্যানী রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই শেখ হাফিজুর রহমানের স্ত্রী ও সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর চাচি। তার বাবা এনায়েত হোসেন খান ছিলেন তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১৬ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৯ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন এ্যান
মাসুম আজিজ

একটি বছর ক্যান্সারে ভুগে ১৭ অক্টোবর চিরবিদায় নেন একুশে পদকজয়ী অভিনেতা মাসুম আজিজ। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম আজিজ মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে তিনি চার দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত অভিনয় করছেন।
১৯৫২ সালে পাবনায় মাসুম আজিজের জন্ম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি থিয়েটারে সক্রিয় হন। প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন ১৯৮৫ সালে।
‘ঘানি’, ‘এই তো প্রেম’. ‘গহীনে শব্দ’, ‘গাড়িওয়ালা’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ে অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক পান মাসুম আজিজ; ‘ঘানি’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসাবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
মসিউর রহমান

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান তার ঝিনাইদহের বাড়িতে মারা যান ১ নভেম্বর। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
স্কুল জীবনেই মসিউর ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধ শুরু করেন। ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের সময় সঙ্গে ছিলেন মসিউর রহমান। ১৯৭৭ সালে তিনি হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে চারবার বিএনপির টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মসিউর জাতীয় সংসদের হুইপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন
সাবিহ উদ্দিন আহমেদ

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক সচিব সাবিহ উদ্দিন আহমেদ মারা যান ৩১ অক্টোবর। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
২০১৭ সালে একবার স্ট্রোক হয়েছিল এই বিএনপি নেতার। এরপর থেকে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকেও অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়েন সঙ্গে সম্পৃক্ত হন সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। লেখাপড়া শেষে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন সাবিহ উদ্দিন।
তিনি জিয়াউর রহমানের আমলে জ্বালানি মন্ত্রী আকবর হোসেন, এইচএম এরশাদের আমলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খানের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হন।
২০০১ সালে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে আসেন। তাকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনারও করা হয়েছিল বিএনপি সরকারের সময়ে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির রাজনীতি সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে সদস্য পদ পান।
গোলাম মোস্তফা খান

ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৩ নভেম্বর রাতে জীবনাবসান হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী-প্রশিক্ষক গোলাম মোস্তফা খানের। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশের অন্যতম নৃত্যশিল্পী ছিলেন গোলাম মোস্তফা খান। তার নির্দেশিত নৃত্যনাট্যসমূহের মধ্যে ‘বেণুকার সুর’, ‘তিন সুরে গাঁথা’ এবং ‘রক্তলাল অহংকার’ অন্যতম।
১৯৮০ সালে তিনি ‘বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্র’ নৃত্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
মাহবুব জামিল

ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৬ নভেম্বর মারা যান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, ব্যবসায়ী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি মাহবুব জামিল। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে মন্ত্রী মর্যাদায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব জামিল।
সিঙ্গার বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, আইসিই রিটেইল ইনিশিয়েটিভ লিমিটেড, আইএল ক্যাপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা মাহবুব জামিল সর্বশেষ রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা ছিলেন।
প্রায় চার দশক ধরে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মাহবুব জামিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ড ছাড়াও, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের প্রেসিডেন্ট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আলী ইমাম
ছয় শতাধিক বইয়ের লেখক শিশু সাহিত্যিক, শিশু সংগঠক আলী ইমাম ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের আগে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিলুপ্ত চ্যানেল ওয়ানের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন।
১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইউনিসেফের ‘মা ও শিশুর উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্প’ পরিচালক ছিলেন আলী ইমাম। টেলিভিশন ও বেতারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের নির্মাতা ও উপস্থাপক হিসেবেও তিনি পরিচিতি পান। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘হ্যালো, আপনাকে বলছি’ নামে তার উপস্থাপিত অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়েছিল।
বাংলাদেশের শিশু সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য আলী ইমাম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
এ বি এম গোলাম মোস্তফা

কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এ বি এম গোলাম মোস্তফা আর মারা যান ৩ ডিসেম্বর। ৮৮ বছর বয়সী মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে বাধ্যর্কজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
সাবেক আমলা গোলাম মোস্তফা এইচ এম এরশাদের সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য হন। আমৃত্যু তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।
১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর গ্রামে গোলাম মোস্তফার জন্ম। পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, মুসলিম লীগ নেতা মফিজউদ্দীন আহমেদের দ্বিতীয় পুত্র তিনি।
বাংলাদেশের প্রথম বেতন কমিশনের এই সদস্য সরকারের কয়েকটি দপ্তরে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবসরের পর জাতীয় পর্টিতে যোগ দিয়ে তিনি ১৯৮৮ সালে জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
সবশেষ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন

বছরের শেষ দিন জীবনাবসান হয় প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একাধিকবারের সভাপতি এবং বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মামলা লড়েছেন তিনি।
খন্দকার মাহবুবের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ বরগুনার বামনায়। বরগুনায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন নারায়ণগঞ্জে। তখনই ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে বন্দি হয়েছিলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন ঢাকার নটর ডেম কলেজে। ১৯৫৮ সালে পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। তখন আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন তিনি।
১৯৬৪ সালে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় যোগ দেন খন্দকার মাহবুব। ১৯৬৬ সালে তিনি হাই কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। স্বাধীনতার পর দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন খন্দকার মাহবুব। তবে চার দশক পর একাত্তরের যুদ্ধারাধের বিচারের সময় বিপরীত অবস্থান নেওয়ায় সমালোচিতও হন তিনি।
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার আত্মীয় হওয়ায় রাজনীতিকদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বরাবরই ছিল। তবে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন ২০০৮ সালে, বিএনপিতে।
তিনি চার বার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবামূলক নানা কাজে যুক্ত ছিলেন খন্দকার মাহবুব। অন্ধ ও পঙ্গুদের জন্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভিটিসিবিরর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ছিলেন তিনি। শিশু সংগঠন কচিকাঁচার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড ইউনিয়ন, এশিয়ান ব্লাইন্ড ইউনিয়ন ও ঢাকা রোটারি ক্লাবের সদস্য ছিলেন তিনি।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
নিউজ ট্যাগ: