প্রকাশিত: মঙ্গলবার,১৪ ডিসেম্বর ২০২১ইং।।৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (হেমন্ত কাল)।।৯ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৩ হিজরী।।
বিক্রমপুর খবর : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের জামতলায় শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদ স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের ওপর কঠোর সেন্সরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রতিনিয়ত পাকিস্তানিদের বর্বরতা, বাঙালি গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম, পূর্ব-পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদ।
২৫ মার্চের আগে সোয়াত জাহাজে করে চট্টগ্রামে অস্ত্র আনার বিষয়টি তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে জানান। এসময় তিনি পাকিস্থানের দুই অংশের রাজনৈতিক খবর বঙ্গবন্ধু দিতেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মুন্সিগঞ্জ জেলার একমাত্র শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেছেন উপস্থিত বক্তারা।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের জামতলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হাই তালুকদার।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর এই বর্বর আক্রমণের সংবাদ বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করতেন নিজামুদ্দীন। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধি ম্যাক ব্রাউন তার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও ছবির ভিত্তিতে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাকিস্তানি বর্বরতা, বাঙালি গণহত্যার ওপর রিপোর্ট করেছিলেন।
পাকিস্তান সরকার আরোপিত কড়া সেনা সেন্সরশিপের মাঝেও তিনি বিবিসিকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করতেন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে থাকা শুরু করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কৌশলে তা এড়িয়ে যান। এই ঘটনায় পশ্চিম পাকিস্তানের নজরে তিনি শত্রু বলে চিহ্নিত হন।
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পরিবারের সবাইকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসছিলেন। এমন সময় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর বাহিনী তার বাড়িতে হানা দেয়। নিজামুদ্দীন আহমদের স্ত্রী কোহিনুর আহমদ সেদিনের ঘটনার মর্মস্পর্শী দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছেন ‘স্মৃতি ১৯৭১’ বইয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘দেখেই আমার বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল। তারা যেন সাপের মত হিস হিস করছে। …পালিয়ে যাওয়ার তো কোনো পথ নেই। ওরা সদর দরজায়। আমি ভাবছি কোন দিক দিয়ে গেলে নিজাম সাহেবকে আড়াল করা যায়, আর তিনি ভাবছেন ঘরের মেয়েদের যেন কিছু করতে না পারে। তাই ওরা যখন ডাক দিল, তখন আমি বাধা দেওয়ার আগেই তিনি বেরিয়ে এলেন। …ওরা আইডেনটিটি কার্ড দেখতে চায়। উনি দেখান ওই। তিনি নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে বুকে বন্দুক ধরে বলল হ্যান্ডস আপ। ইংরেজিতে তিনি বললেন, আমাকে হাত ধুয়ে আসতে দাও। কিন্তু দিল না। ততক্ষণে আমার ছেলে-মেয়েদের কান্নার রোল শুরু হয়ে গেছে। আমার বড় মেয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছে। ওর বুকে বন্দুক ধরে বলল- আল্লাহ মাৎ বালো। এরপর ঘাতকরা সামনে পেছনে বন্দুক ধরে নিজামুদ্দীন আহমদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
১৯২৯ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মাওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নিজামুদ্দীন আহমদ।
সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৫২ সালে তিনি এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। ১৯৫০ সালে করাচি থেকে প্রকাশিত ‘সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি গেজেট’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ‘দৈনিক মিল্লাত’, ‘দৈনিক আজাদ’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’, ‘ঢাকা টাইমস’, ‘ইউপিআই’, ‘পিপিআই’, ‘এএফপি’, ‘এপিপি’ এবং ‘রয়টার্সে’ কাজ করেন।
সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদের মৃত্যুর পর বিবিসি তার পরিবারের জন্য একটি ট্রাস্ট তহবিল গঠন করে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার এই কীর্তিমান সাংবাদিককে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর চৌধুরী মঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদসহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) স্নেহাশীষ দাশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. আদিবুল ইসলাম, সরকারি হরগঙ্গা কলেজের উপাধ্যক্ষ খান রফিকুল ইসলাম, দৈনিক সভ্যতার আলো সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল প্রমুখ।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’