প্রকাশিত : রবিবার,১১ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ২৬শে আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)।। ২৪শে সফর,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু : মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে ২ দশমিক ৫ মিটার গতিতে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। যা স্রোতের স্বাভাবিক গতির চেয়ে দ্বিগুন। আর এই স্রোতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রোববার সকালে মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মার মাঝে থাকা ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হলো ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩২তম স্প্যান। শনিবার নোঙরে থাকা ভাসমান জাহাজ তিয়ান-ই রোবাবার সকাল ১০টার দিকে ক্রেনের সাহায্যে স্প্যানটির পাজরে আটকিয়ে দুটি খুঁটির ওপর বসিয়ে দেয়। এর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মার অগ্রগতি আরও একধাপ এগিয়ে এখন সেতুর মূল অবকাঠামো ৪ হাজার ৮০০ মিটার বা প্রায় ৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে। পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) নির্বাহি প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আগামী ২০ অক্টোবর ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-সি’ নম্বরের ৩৩ তম স্প্যান, ২৫ অক্টোবর ২ ও ৩ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-বি’ নম্বরের ৩৪তম স্প্যান বসানোর দিনক্ষন নির্ধারণ থাকায় এখন দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞের ব্যস্ততায় রয়েছে।
এদিকে ৩২তম স্প্যানটি শনিবার খুঁটির ওপর বসানোর কথা থাকলেও তা স্থাপন করতে দুই দিন লেগেছে দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের। কেননা, মূল পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে ২ দশমিক ৫ মিটার গতিতে প্রবাহিত হওয়া প্রচন্ড ¯্রােতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবং কাজের গুনগত মান বজায় রাখতে একদিনের স্থলে দুইদিন সময় নেওয়া হয়েছে বলেও জানান পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) নির্বাহি প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার দিনভর দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রচন্ড স্রোতের কারনে স্প্যানবাহি ভাসমান জাহাজ তিয়ান-ই নোঙরে রাখতে বিপাকে পড়লে সন্ধ্যায় কার্যক্রম স্থগিত রেখে রোববার ৩২তম স্প্যানটি বসানোর কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা হয়। এর আগে গত ১০ জুন জাজিরা প্রান্তের ২৫ ও ২৬ নম্বর খুঁটির উপর ৩১ তম স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর মূল অবয়ব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার। এরপর আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে ৫টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য থাকলেও মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচন্ড স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় ১০ অক্টোবর পর্যন্ত একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের গতি ফিরেছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর পদ্মা সেতুর ৩২ তম স্প্যান বসানোর কাজ শুরু করে। ওই দিন স্প্যান বসানোর কাজ সাময়িক স্থগিত রেখে রোববার সকাল ১০টা নাগাদ খুঁটির ওপর ওয়ান ডি’ নম্বরের স্প্যানটি বসানোর পর এখন বাকী রইল আর মাত্র ৯টি স্প্যান। চলতি অক্টোবরে আরও ২টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ থাকায় এখন চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদ্মার পানি স্বাভাবিক হয়ে আসলেও এবার পদ্মায় এখনও পানির উচ্চতা ৫ দশমিক ৫ মিটারের বেশি। একই সঙ্গে এখন প্রতি সেকেন্ডে ২ দশমিক ৫ মিটার গতিতে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক স্রোতের গতি ১ দশমিক ৫ মিটার হলেও এখন দ্বিগুন গতিতে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই অপর স্প্যান গুলো খুঁটির ওপর বসানো হবে।
মূল সেতুর নির্বাহি প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ৫টি স্প্যান শতভাগ প্রস্তুুত রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি স্প্যান স্টক ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর রোববার মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর ৩২ তম স্প্যান বসানো হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ মিটার বা প্রায় ৫ কিলোমিটার। বর্তমান সময় পর্যন্ত মূল সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৩২টি স্প্যান বসে গেছে। বাকী ৯টি স্প্যান মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে। এ স্প্যানগুলো সেতুর ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-এ’ স্প্যান, ২ ও ৩ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-বি’ স্প্যান, ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-সি’ স্প্যান বসানো হবে। যা পুরোপুরি প্রস্তুুত রয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৩ তম স্প্যান ও ২৫ অক্টোবর , ২ ও ৩ নম্বর খুঁটির ওপর ৩৪তম স্প্যান বসানো লক্ষ্য নিয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ।
অন্যদিকে মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে স্থাপন হয়েছে ১ হাজারের বেশী এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্লাবের মধ্যে স্থাপন হয়েছে ১ হাজার ৫০০টির বেশী। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের মধ্যে ৪৮৪টি সুপার গার্ডারের মধ্যে প্রায় ২০০টি স্থাপন করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের পর পদ্মার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত ও প্রচন্ড স্রোতের কারনে থেমে ছিল পদ্মা সেতুর কাজের গতি। ফলে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ৫টি স্প্যান শতভাগ প্রস্তুত রেখে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মান করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ২টি ডাঙায়। ডাঙায় থাকা দু’টি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ৬টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট বা ঝুলন্ত পথ ও জাজিরা প্রান্তে থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্টাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটিং ঢালাইয়ের চাল লেনের মহাসড়ক আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন। নির্ধারিত সময়েই পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com