প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার,৭ মার্চ ২০১৯।
বিক্রমপুর খবর: অনলাইন ডেস্ক:বড় অংকের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি নিয়ে সৌদি আরবের ৩৫ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার ঢাকা এসেছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মনোনীত এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মেদ আল তোয়াইজরি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি। সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট ও পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট-বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা রয়েছেন এ প্রতিনিধি দলে।
পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার রাত ১১টায় বাংলাদেশে আসেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। সৌদি প্রতিনিধিদলের এবারের সফরে ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিযোগ প্রতিশ্রুতি আশা করছে সরকার।
সভায় বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। আজ বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রাত ১০টায় সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে প্রতিনিধিদল।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সৌদি প্রতিনিধিদলের বিবেচনার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে।
সৌদি প্রতিনিধিদল এ সফরকালে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের এবং অর্থায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার খাতমূহ, সরকার কর্তৃক প্রদেয় বিভিন্ন সুবিধা, প্রণোদনা, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসমূহ ও এর প্রতিকার, বিশেষত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তুতকৃত প্রকল্পসমূহের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিসিআিইসি) এবং সৌদি সরকারের এমআরএএমসিওর যৌথ বিনিয়োগে একটি অয়েল রিফাইনারি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হবে। এতে প্রথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া যৌথ বিনিয়োগে একটি ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া সার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হবে। এতে প্রাথমিক ভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং সৌদির ডেলিম-এর যৌথ বিনিয়োগে কম মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নেপালে রফতানির জন্য ‘হাইড্রো-আইপিপি’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সরকারি পর্যায়ে ১২টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১৭টিসহ মোট ২৯ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকগুলো প্রজেক্ট নিয়েই আলোচনা হবে। কিছু কিছু প্রজেক্ট আলোচনা শেষে চুক্তিও হওয়ার কথা রয়েছে। কিছু প্রজেক্টে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। উন্নত দেশ হতে গেলে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য এমন কিছু প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে যা বাস্তবায়ন হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রফতানি করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার সেসব ধরনের বিনিয়োগের বিষয়েই আলোচনা হবে। আমরা তো সার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলি-কমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্পসহ অনেক কিছুতেই গুরুত্ব দিচ্ছি। বৈঠকে অয়েল রিফাইনারি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স স্থাপন, সার কারখানা স্থাপনসহ-এ ধরনের বড় কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হবে। আমি আশা রাখি কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি উদ্যোক্তাদের জন্য দেশের বিভিন্ন উদীয়মান খাত যেমন-পুঁজিবাজার,বিদ্যুৎ, জ্বালানি,টেলিকমিউনিকেশন,তথ্যপ্রযুক্তি,পেট্রোকেমিক্যাল,ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত, হালকা প্রকৌশল শিল্প,ব্লু-ইকোনমি,গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন,পানি ও সমুদ্র সম্পদসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প; সেবামূলক খাত যেমন-ব্যাংক,অর্থনীতি ও লজিস্টিকস এবং মানবসম্পদ খাতেও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকা এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফা নিয়ে দেশে ফেরার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে।এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের যেসব সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে সেগুলো হলো আইন দ্বারা সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই),ট্যাক্স হলিডে,যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক প্রদান, বিনাশুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, রেমিট্যান্স অন রয়্যালটি,শতভাগ ফরেন ইক্যুয়িটির নিশ্চয়তা এবং লাভ ও পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাওয়ার সুবিধা।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে উল্লেখ করা হবে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তি,ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধা।যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ),অস্ট্রেলিয়া, কানাডা,ভারত,জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশ সুবিধা।