সেপ্টেম্বরে পদ্মাসেতুর কাজের গতি ফিরবে

0
13
সেপ্টেম্বরে পদ্মাসেতুর কাজের গতি ফিরবে

প্রকাশিত : সোমবার, ১৭ আগস্ট ২০২০ইং ।। ২রা ভাদ্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।

বিক্রমপুর খবর : কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু : করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর পদ্মার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ও প্রচণ্ড স্রোতের কারণে থমকে আছে পদ্মাসেতুর কাজের অগ্রগতি। ফলে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সোমবার পর্যন্ত ৫টি স্প্যান শতভাগ প্রস্তুুত থাকলেও মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় চলতি আগস্টেও খুঁটির উপর কোনো স্প্যান বসানোর সম্ভাবনা দেখছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে আগামী সেপ্টেম্বরে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজের গতি ফিরে আসবে বলে জানান প্রকৌশলীরা। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অন্তত ৫টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে স্রোতের তীব্রতাও স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে। আর তখনই পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের গতি ফিরে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মাসেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, বর্তমান সময় পর্যন্ত মূল সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি ১০টি স্প্যান এখন মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে। প্রস্তুুত রয়েছে আরো ৫টি স্প্যান। এছাড়া মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে স্থাপন হয়েছে ৭৫টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্লাবের মধ্যে স্থাপন হয়েছে ১ হাজার ২৫৬টি। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের মধ্যে ৪৮৪টি সুপার গার্ডারের মধ্যে ১৭১টি স্থাপন করা হয়েছে। তাই পদ্মাসেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি এখন ৮৯ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। আর সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা।

পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘পদ্মা নদীর প্রতিকূল ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে কাজের গতি কমেছে। তবে আগামী বছর পদ্মাসেতু চালু করতে যে দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে কর্মযজ্ঞ অব্যাহত থাকবে। তবে বাস্তবে সেতুর কাজ অন্তত এক বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। করোনাকালে প্রথম দফায় গতি ছিল শ্লথ। তাই জুলাই মাসে সব স্প্যান বসানোর লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন বন্যার পানি বিপৎসীমার উপরে ও প্রচণ্ড স্রোতের কারণে দ্বিতীয় দফায় কাজের গতি কমে যায়। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি থাকা ১০টি স্প্যান খুঁটির পর বসানো লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ৫টি স্প্যান শতভাগ প্রস্তুুত রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি স্প্যান স্টক ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা, মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রবাহিত হওয়া স্রোতের তীব্রতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার।

সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সূত্র মতে, মাত্র ১০টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানো কাজ বাকি। কাজ সর্বোচ্চ গতিতে চললে প্রতিমাসে ৩টি স্প্যান উঠানো যায়। সেই হিসেবে ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ১০টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩১টি স্প্যান খুঁটির উপর বসানোর পর পদ্মাসেতুর মূল অবয়ব দৃশ্যমান হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার। এর মধ্য দিয়ে জাজিরা প্রান্তের সব স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। এখন শুধু মাওয়া প্রান্তে থাকা ৯টি খুঁটির ওপর ১০টি স্প্যান স্থাপনের কাজ শেষ হলেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মাসেতু শতভাগ সম্পন্ন হয়ে বিশ্বের দরবারে লাল-সবুজের পতাকার বাংলাদেশকে নতুন আলোয় আলোকিত করবে। অন্যদিকে স্প্যানের উপর সড়কপথের কাজ জাজিরা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে মাঝ নদীতে চলে এসেছে। এই কর্মযজ্ঞ এখন মাওয়া প্রান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সেতুর অর্ধশত রোড স্লাব পদ্মার ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সড়ক পথের কাজ ব্যাহত হয়েছে। স্লাব নদীতে বিলীন হওয়ায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও কাজে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ২টি ডাঙায়। ডাঙায় থাকা দুইটি খুঁটি সংযোগ সড়কের সাথে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ৬টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে পদ্মাসেতুর মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট বা ঝুলন্ত পথ ও জাজিরা প্রান্তে থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্টাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটিং ঢালাইয়ের চাল লেনের মহাসড়ক আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..                       

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন