প্রকাশিত : বুধবার,১৪ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ২৯শে আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)।। ২৭শে সফর,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করা হলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।
দেশের ষোড়শ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আমিন উদ্দিন রোববার সকাল ৯টার আগেই কার্যালয়ে আসেন। এরপর দপ্তরে বসেই সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চের একটি মামলার শুনানিতে অংশ নেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেলকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় তিনি দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং করোনাভাইরাস রোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অনুরোধ জানান।
দুপুরে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখী হন এ এম আমিন উদ্দিন। সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সরকার কিন্তু আগামীকালই বিষয়টা কেবিনেট মিটিংয়ে তুলবে। শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, যারা এ ধরনের অপরাধ করে, শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার পরে তারা সাবধান হবে।
“এ অপরাধ করতে তখন অনেকবার ভাববে। আমার মনে হয় সরকারের এই উদ্যোগটা যখন আইনে পরিণত হবে, তখন কিন্তু এটা অনেকখানি কমে যাবে।”
নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।
আন্দোলনকারী বিভিন্ন ছাত্র ও অধিকার সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
“সেখান থেকে কিছু মামলা হয়ত রিভিশনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। সেগুলো খুজে বের করে সচল করার চেষ্টা করব। আর যেগুলো আপিলে আছে, সেগুলো শুনানি করে নিষ্পত্তির চেষ্টা করব।”
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি কী মনে করছেন- এই প্রশ্নে আমিন উদ্দিন বলেন, “সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মামলা জট কমানো। আমাদের দেশে অনেক মামলা রয়ে গেছে, অনেক মামলা জট হয়ে আছে। এই জট কমানো হচ্ছে বিচার বিভাগে আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ।”
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল কোর্ট প্রায় চার হাজার মামলার নিস্পাত্তি করে দিয়েছে। পুরনো মামলাগুলো সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শোনা হচ্ছে।
“অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করব, হাই কোর্টেও যেসব পুরনো মামলা রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য বেঞ্চগুলোকে যেন বিশেষ নির্দেশনা দেন।
“তাছাড়া আমি চেষ্টা করব, বিভিন্ন জেলায় যারা পাবলিক প্রসিকিউটর আছেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে। বিচারাধীন যেসব মামলা স্থগিত হয়ে আছে, সেগুলোর দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিতে।”
২০০৯ সাল থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে আসা মাহবুবে আলম ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এরপর গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিনকে দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
আমিন উদ্দিন তিন দশক ধরে সর্বোচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করে আসছেন। এক সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি।
প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমেকে স্মরণ করে আমিন উদ্দিন বলেন, “দক্ষতা ও সততায় মাহবুবে আলম এই অফিসটাকে, এই পদটাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আমি চেষ্টা করব সেটা বজায় রাখার জন্য। আমি চেষ্টা করব তিনি যে উচ্চতা সৃষ্টি করে গেছেন, সেটা নিম্নগামী হতে না দিতে।”
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতাও চান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
“অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে দুর্নীতি বন্ধ করা অনেক সহজ হবে। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে যে কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব।”
আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যোগ দেওয়ার দিনই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এই অফিসে সবসময় আসা-যাওয়া থাকেই। উনারা হয়ত অনেক দিন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে উনারা হয়ত আর থাকছেন না। আমার সাথে উনাদের কথা হয়নি।
“এখন সরকার যদি তাদের পদত্যাপত্র গ্রহণ করেন, তাহলে সরকার অবশ্যই আরও দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল দিবেন।”
মৌলভীবাজারের সন্তান আমিন উদ্দিনের জন্ম ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে তিনি এলএলবি করেন।
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন আমিন উদ্দিন। ১৯৮৯ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে এবং ২০০৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আমিন উদ্দিন ২০১৯-২০২০ মেয়াদেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এবার পুনর্নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com