শাম্মী কুদ্দুস: আমাদের গুগল নারী হতে পারেন আপনার প্রেরণা

0
8
শাম্মী কুদ্দুস: আমাদের গুগল নারী হতে পারেন আপনার প্রেরণা

প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ইং।। ১৪ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (গ্রীস্মকাল)

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : গুগলের পণ্য ব্যবস্থাপক শাম্মী কুদ্দুস শুনিয়েছেন তার বেড়ে ওঠার গল্প। বাংলাদেশে ফাইনটেক ইন্ডাস্ট্রির সম্ভাবনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও আরও বহু বিষয়ে তার ভাবনা করেছেন প্রকাশ।

শাম্মী কুদ্দুস নামে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বর সঙ্গে যদি আপনার পরিচয় হয়ে যায়, তাহলে আপনাকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। স্ট্যানফোর্ড জিএসবি ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে এমবিএ ও এমপেইড ডিগ্রিধারী, সানিভেলে অবস্থিত গুগল বেজডের পণ্য ব্যবস্থাপক, বিওয়াইএলসি’র (বাংলাদেশ উইথ লিডারশিপ সেন্টার) সহপ্রতিষ্ঠাতা শাম্মী একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং হাসিখুশিভাবে নিজের পরিবার আগলে রাখা এক বাংলাদেশি নারী।

শুধু তাই নয়, তিনি মার্শাল আর্টেও পারদর্শী; কারাতে ও তায়কোয়ান্দোতেতে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত একজন ব্যক্তি, যিনি সম্প্রতি মহামারি বিষয়ক পডকাস্ট তৈরির দিকে ঝুঁকেছেন।

সৌভাগ্যবশত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর পক্ষে তার একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ হয় এবং স্বভাবতই তার কাছে বেশকিছু প্রশ্ন ও ফলো-আপ প্রশ্ন ছিল আমাদের।

নিজ বাড়ি চট্টগ্রাম থেকে সানিভেল পর্যন্ত যাত্রাটা সম্পর্কে বলুন।

শৈশব: মা-বাবা দুজনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়ায় আমার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামেই। শিক্ষক মা-বাবা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই যেমনটা হয়, আমিও তেমনি পড়াশোনার দিকে মনোযোগী ছিলাম। তবে মা-বাবা আমাকে কখনোই বিশেষ ভালো গ্রেড আনতেই হবে, এমন কোনো চাপ দেননি। তারা বরং সবসময় সাহস জুগিয়েছেন। আমার মনে আছে, আঁকা শেখা শুরু করার কয়েকদিন পরই আমি তা ছেড়ে দেই, কিন্তু মা-বাবা এ নিয়ে কিছুই বলেননি। আমার মনে হয় সে কারণেই আমার মধ্যে কোনোকিছু মন থেকে শেখার জন্যেই শিখতে চাওয়ার ব্যাপারটা ঢুকে গিয়েছিল। গ্রেড অর্জনের চাপের জন্য নয়, বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।

মা ছিলেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক, তাই গণিত ও বিজ্ঞান শেখার হাতেখড়ি তার হাত ধরেই। খাওয়ার টেবিলে আলোচনা চলত নিউটনের পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব নিয়ে। ‘তুমি কি জানো তোমার ওজন থাকার পরেও চেয়ারটা কেন ভেঙে পড়ছে না?’- এ জাতীয় প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে মা বিজ্ঞানকে আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছিলেন। অন্যদিকে, বাবা ছিলেন বইপ্রেমী। দুই সপ্তাহ পর পর আমাকে ব্রিটিশ কাউন্সিলে নিয়ে যেতেন বই আনার জন্য। আমার মনে আছে, দুই সপ্তাহের জন্য আমি চারটা বই আনতে পারতাম।

চট্টগ্রামে বই কোলে নিয়ে বাবার সাথে রিকশায় ঘুরে বেড়ানো সেই বিকেলগুলো আমার কাছে এখনো সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি। মূলত মা আর বাবা আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রত্যয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, যেন নিজে যেভাবে চাই, বড় হতে পারি। আমিও ধরে নিয়েছিলাম- এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু আদতে মধ্যবিত্ত পরিবারের খুব কম মেয়ের পক্ষেই এমন স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব ছিল তখন।

যখন আশেপাশে তাকালাম, দেখলাম মোটামুটি রেজাল্ট নিয়েও ছেলেদের বিদেশে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, কিন্তু মেয়েদের কথা চিন্তাও করা হচ্ছে না। কারণ সবাই বিশ্বাস করত, একজন অভিভাবক ছাড়া মেয়েদের বিদেশে যাওয়া উচিত না। কিন্তু আমাকে পরিবারের কেউ এমন ধরাবাঁধা নিয়ম বেঁধে না দেওয়ায় আমি মার্শাল আর্ট শেখা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা, ভ্রমণ করা এবং গতানুগতিক পেশা বেছে না নেওয়ার মতো কাজগুলো করতে পেরেছি।
হাইস্কুলে থাকতে আমি স্যাট ওয়ান ও টু পরীক্ষা দেই এবং আমেরিকার ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম তখন স্কলারশিপের জন্য। কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম না, আমাকে কেউ স্কলারশিপ বা আর্থিক সহায়তা দিবে কি না সেদেশে পড়ার জন্য। কিন্তু আমি এদের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। এরপর এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

তখন ডায়াল-আপ ইন্টারনেটের সাহায্যে অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে অনেক সময় লাগত। এমআইটির একজন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট হওয়া আমার জীবনকে সব দিক থেকেই বদলে দিয়েছে।

সবাই  এমআইটির কড়া ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রমের কথা জানে, কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও অসাধারণ জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেয়েছি।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য আমার যে প্যাশন ছিল, তা পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় বার্ষিকে এসে একটা লিডারশিপ প্রোগ্রামের সহপ্রতিষ্ঠাতা হলাম, যা পরে বিওয়াইএলসি’তে (www.bylc.org) রূপান্তরিত হয়।

এটার জন্যও প্রথম অনুমোদন আসে এমআইটি থেকে।

শীতকালীন ছুটির সময় যখন সবাই চলে গিয়েছিল ছুটি কাটাতে, আমি তখন জনশূন্য স্টুডেন্ট সেন্টারে একা বসে আমার প্রপোজালের ড্রাফট বানাচ্ছিলাম। বিওয়াইএলসির যাত্রা শুরু করাটা আমাকে একদম গোড়া থেকে যেকোনো কাজ শুরুর অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

পেশাগত জীবন: আমি এমআইটি থেকে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিএসসি সম্পন্ন করি এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএম-এ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। তবে সেই কাজটা তেমন উপভোগ করিনি, কারণ আমার আকর্ষণ ছিল উন্নয়ন খাতে কাজ করার দিকে।

২০১১ সালের দিকে ওয়াটারহেলথ ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ টিমের অংশ হই। চট্টগ্রামে পানির সুবিধা নিয়ে কাজ করেছিল তারা তখন। তারপর ‘জিওন’-এ তাদের প্রথম টেলিমেডিসিন পণ্য আনতে সাহায্য করার মাধ্যমে বুঝতে পারি, কোনোকিছু শুরু করা খুব কঠিন না হলেও, নির্দিষ্ট অঞ্চল ঠিক করে যোগ্য নেতা হিসেবে কাজ করা পুরোপুরি আলাদা বিষয়। ফলে আমি আমেরিকায় গ্র্যাজুয়েট স্কুলে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিই।

গ্র্যাজুয়েশন ও গুগল: স্ট্যানফোর্ড জিএসবি ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে এমবিএ ও এমপেইড (মাস্টার ইন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ), এই দুটি ডিগ্রি নিই আমি।

ডিগ্রি নেওয়ার পর গুগলে যোগ দেই, যেখানে বর্তমানে তাদের পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম টিমের পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে আছি। আমাদের দলটি গুগলের সকল নগদীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে। আপনি গুগলকে অর্থ দিলে বা গুগল কাউকে দিলে, সেসব আমাদের হাত দিয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষ যে ইউটিউব, ম্যাপস, অ্যাডওয়ার্ডস, প্লে ইত্যাদি গুগল পণ্য ব্যবহার করে, সেসব নিয়েই আমাদের কাজ। স্টার্ট আপে কয়েকশো ব্যবহারকারীর জন্য কাজ করা থেকে ধরে গুগলের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর জন্য কাজ করাটা এক শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি।

এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সরে এসে এমপিএ বা আইডি-এমবিএ ডিগ্রি নেওয়ার কারণ কী?

ক্যারিয়ারের একদম শুরুতে যখন এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতাম, তখন ডেটা বিশ্লেষণ  বা পরিসংখ্যানগত মডেল নিয়ে কাজ করতাম, যা ছিল একেবারেই তাত্ত্বিক কাজকর্ম। কিন্তু আমি এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যা সরাসরি মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে। সে কারণেই ওয়াটারহেলথে যোগ দেওয়া। নতুন একটা প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাতে সাহায্য করার সময় আমাকে নানাবিধ ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। ক্রেতার সাথে কথা বলা, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানো, জমি মালিকদের সাথে দেন-দরবার, আরবিআই থেকে বিদ্যুৎ অনুমোদন আনা, নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি নানা কাজ আমি করেছি। এগুলো আমাকে শক্তি দিয়েছে এবং নিজেকে আরও দক্ষ করতে সাহায্য করেছে।

আমি বুঝতে পারছিলাম, আমাকে নেতৃত্বদান ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হবে, সে কারণেই এমবিএ করা। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করে বুঝেছি, নীতিনির্ধারণ কতটা প্রয়োজনীয়, তাই এমপিএ ডিগ্রিটা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

একসাথে দুটি ডিগ্রি নেওয়ার অভিজ্ঞতাকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?

এই প্রশ্ন আমি অসংখ্য মানুষের কাছ থেকেই পেয়েছি, যেহেতু দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হাজার মাইলের ব্যবধানে! কিন্তু তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এমনভাবেই তৈরি করা যাতে কেউ দুই জায়গায়ই এক বছর করে পড়তে পারে এবং তৃতীয় বর্ষে এসে অর্ধেক অর্ধেক সময় ধরে পড়তে পারে। এর ফলে অনেক এ মাথা থেকে ও মাথা দৌড়াতে হয়েছে বটে, কিন্তু আমি নিজের স্যুটকেস নিয়ে সেই দৌড়াদৌড়ির ব্যাপারে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছিলাম!

এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমার যা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, দুই জায়গার সংস্কৃতি বেশ আলাদা। স্ট্যানফোর্ডে প্রযুক্তিই ছিল সব, কিন্তু হার্ভার্ডের পরিসীমা আরো বিস্তৃত হওয়ায় সেখানে রাজনৈতিক ও নৈতিক নেতৃত্ব ছিল তাদের কেন্দ্রীয় তত্ত্ব। হার্ভার্ড আমাকে সামাজিক ন্যায়বিচার, রাজনীতির গুরুত্ব বুঝতে শিখিয়েছে।

কোন তিনটি বই আপনি মনে করেন সবার পড়া উচিত?

আমি শুধু একটি বইয়েরই নাম বলব, ‘থিংকিং ফাস্ট থিংকিং স্লো’। আমাদের চিন্তার প্রক্রিয়ায় কী কী ভুল আছে এবং কীভাবে তা শোধরানো যায়, বুঝতে হলে এই বই অতীব জরুরি। আমার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে  বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে এই বই আমাকে অসম্ভব সাহায্য করেছে।

গুগলে পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে আরেকটু বলুন। কর্মক্ষেত্রে কোন বিষয়টি নিয়ে আপনি সবচেয়ে মজা পান? আপনার ‘গুগলিনেস’-এর রেটিং কত দেবেন?

পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে আমার কাজ হলো একটা পণ্য ‘কী?’, তা সংজ্ঞায়িত করা। ব্যবহারকারীর চাহিদা, প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা, নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধ, রাজস্ব প্রভাব, গুগলের লক্ষ্য ইত্যাদি বুঝে কাজ করতে হয় আমাকে।

আমার পরামর্শ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং দল প্রযুক্তিগত বাস্তবায়নের নকশা করে থাকে। আমি আমার এই কাজটা উপভোগ করি, যেহেতু এখানে একেবারে সবকিছুর মধ্যে থেকে পরিচালনা করতে হয় এবং নিজের মতামত দেওয়ার স্বাধীনতা আছে।

এই মুহূর্তে বাসা থেকে কাজ করায় কর্মক্ষেত্রের অনেক মজা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছি, শেষবার আমরা মরক্কান খাবার বানাতে শিখেছিলাম। আমি আমার গুগলিনেসকে ৫/৫ রেটিং দেব। গুগলিনেসের মূল যোগ্যতা হলো অনিশ্চয়তার মধ্যেও সাফল্য আনার ক্ষমতা, যা আমার আছে বলে মনে করি।

গুগল এবং স্টার্ট-আপের কাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য কী? 

ভালো প্রশ্ন। স্টার্ট-আপে কাজ করার পর গুগলে কাজ করার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা নেওয়া। স্টার্ট-আপে আপনাকে সবকিছুই কম-বেশি করতে হয়, কিন্তু গুগলের মতো প্ল্যাটফর্মে প্রত্যেকে নিজের সেরা দক্ষতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ পায়। এখানে প্রত্যেকেই তার জায়গায় সেরা। এখানে কিছু কন্টেন্ট লেখক দুই লাইনের কপি লিখতেও কয়েক সপ্তাহ পার করে যাতে তা একদম সেরা ও সঠিক হয়। গুগলে আমি শুধুই আমার পণ্যের উপর দৃষ্টি নির্ধারণ করতে পারি।

প্রযুক্তি খাতের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত একজন নারী হিসেবে আপনার কি মনে হয় গ্লাস সিলিংয়ের অস্তিত্ব আছে? সি-স্যুটের নারীরা কি জেন্ডার সমতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে? কেন এবং কেন নয়?

আপনি বেশিরভাগ খাতেই দেখবেন নারীরা নেতৃত্বের দিক থেকে পিছিয়ে। নারী নেতৃত্ব মানেই নারী সমতা চলে আসা নয়, কারণ-

১. নারীরা একাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না তা আমাদের দেখতে হবে; বেশিরভাগ বড় সংস্থায়ই নারীরা তা পারে না।

২. পুরুষদের মতো নারীদের নিজেদের মধ্যেও কিছু পক্ষপাতী দিক রয়েছে; কারণ আমরা সেই একই পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশেই তো বড় হয়েছি, যারা নারীদের কম যোগ্য, কম স্মার্ট ভেবে আসছে। কিছু নারীও এখনো নিজেদের সেরকমই ভাবে।

যেকোনো সংস্থায় নারী সমতা আনতে হলে সমসংখ্যক নারী-পুরুষ নিয়োগ দিতে হবে, একইভাবে উচ্চপদ দিতে হবে।

পুরুষেরা সাহসী ও নেতৃত্ব দেওয়ায় পুরস্কৃত হলেও, একই কাজ নারী করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হতে পারে। সি-স্যুট বলে নয়, যেকোনো সংস্থার প্রতিটি খাতেই নারী-পুরুষকে সমানভাবে উপস্থাপন করতে হবে, তাহলে জেন্ডার সমতা আসবে।

নিজের বিশেষ কোনো শখ আছে কী? সে সম্পর্কে বলুন।

মহামারির শুরু থেকেই আমি পডকাস্ট নিয়ে আগ্রহী। আমার প্রিয় পডকাস্ট হলো বেন থম্পসনের স্ট্র্যাটেচারি, আর বিজ্ঞান ও নীতিকৌশল নিয়ে প্রিয় পডকাস্ট হলো রেডিওল্যাব।

আমরা জানি আপনি তায়েকোয়ান্দোতে পারদর্শী। আপনার কোনো বেল্ট রয়েছে?

আমার আত্মউন্নয়নের অংশ হিসেবে আমি মার্শাল আর্টের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। আমি চট্টগ্রামে ১৬ বছর বয়সেই কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছিলাম। বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।

আমাদের দেশে নারীরা খেলাধুলার সুযোগ পায় না; ফলে তারা নিজের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে। কারাতে শেখা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং জোর গলায় কথা বলার শক্তি দিয়েছে। এমআইটিতে গিয়ে আমি তায়েকোয়ান্দো নিই এবং চার বছরে ব্ল্যাক বেল্ট পাই।

আপনার সফল ক্যারিয়ার, শিক্ষা জীবন ও সুখী পরিবার- এই সবকিছুর পেছনের রহস্য কী? এর জন্যে কি কোনো কিছু ছাড়তে হয়েছে?

আমি আশা করব এই প্রশ্ন আপনি শুধু নারীদের নয়, নারী-পুরুষ সবাইকেই করবেন। আমার মনে হয় নারীদেরই শুধু পরিবার ও কাজের ভারসাম্য বজায় রাখা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, আর পুরুষদের শুধু কাজ নিয়ে।

সবারই জীবনে ভারসাম্য দরকার, আর পুরুষেরা যদি পরিবারে তাদের কর্তব্য না করে, তাহলে জীবনে কখনো ভারসাম্য আসবে না। আমি বিশ্বাস করি, সারা দিনে ২৪ ঘণ্টাই আমাদের ট্রেড-অফ বা কিছু না কিছু ছাড়তে হয়। আমি এই উপদেশ পেয়েছি ল্যারি ব্যাকাউয়ের কাছ থেকে, যিনি এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছিলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনো ফিফটি-ফিফটি থাকা যায় না। কখনো তোমাকে ৮০ ভাগ দিতে হবে, ২০ ভাগ পাবে। আবার কখনো ২০ ভাগ দিবে, ৮০ ভাগ পাবে। এটাই আমার জীবনে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করেছে বলে আমি মনে করি।

আপনার জীবনের বিশেষ কোন কোন দিক হাইলাইট করবেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত ছিল কোনগুলো?

হাইলাইটস-
*
 এমআইটিতে পুরোপুরি অর্থ বরাদ্দ পেয়ে পড়তে পারা। তাদের ইমেইল পাওয়ার মুহূর্ত থেকে আমার জীবন বদলে গেছে, যা ১৫ বছর বাদেও সত্য।
* হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডে পড়তে যাওয়া।
* বিওয়াইএলসির প্রতিষ্ঠাতা এজাজ আহমেদের সাথে আমার বিয়ে। সে সবসময় আমায় অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছে।
* আমাদের দুই সন্তান আমার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।

চ্যালেঞ্জ বলতে ছিল একইসাথে হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডের পড়া চালিয়ে নেওয়া, সেইসাথে লং ডিসট্যান্স বিয়ে ও সন্তানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা।

বাংলাদেশের টেক শিল্প নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা কী?

দেশের উন্নতি এবং এ সিরিজের বৃদ্ধি দেখে আমি বেশ অভিভূত। দেশে এখন অনেক স্টার্ট-আপ, বিনিয়োগকারী, প্রতিষ্ঠাতা আছে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে দেখে বেশ ভালো লাগে। বিকাশ ও পাঠাও’র মতো সেবা আমদের আছে, এগুলো খুব ইতিবাচক দিক। আমার মনে হয় আমাদের নীতিনির্ধারকরাও খুব চেষ্টা করছেন এই গতি ধরে রাখতে।

তবে নারী বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠাতার সংখ্যা কম, যা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। ভূমিকা ছোট হোক বা বড় হোক, নারীদের এই খাতে এগিয়ে আসতেই হবে আগে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমি পণ্য ব্যবস্থাপনা ও ফিনটেক স্পেস নিয়ে বেশ উদ্বুদ্ধ। ভবিষ্যতে এই খাতে পণ্য তৈরি করার স্বপ্ন দেখি।


নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন