বিক্রমপুরের জনপ্রিয় গিটারিস্ট হিরোর না’গঞ্জে মৃত্যু, করোনা সন্দেহে মরদেহ বাড়ির কাছে সারারাত: আপনজন কেউ কাছে আসেনি! দাফনেও না!

0
409
বিক্রমপুরের জনপ্রিয় গিটারিস্ট হিরোর না’গঞ্জে মৃত্যু, করোনা সন্দেহে মরদেহ বাড়ির কাছে সারারাত: আপনজন কেউ কাছে আসেনি!দাফনেও না!

প্রকাশিত :বুধবার,  ৮ এপ্রিল ২০২০ ইং ।। ২৫ চৈত্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।

বিক্রমপুর খবর :অফিস ডেস্ক এবং স্টাফ রিপোর্টার লৌহজং থেকে : মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং-টেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া গ্রামের মোল্লা বাড়ীর মৃত ইসহাক মোল্লার ছেলে ‘হিরো লিসান (৩০)’নামে এক যুবক মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার পূর্ণ নাম খাইরুল আলম হিরো।

খাইরুল আলম হিরো ছিলেন নারায়ণগঞ্জে সংগীতজগতের আলোচিত মুখ গিটারিস্ট ‘হিরো লিসান’। মৃত্যুর পর করোনা সন্দেহে পরিবারের লোকজন লাশের পাশে আসছেন না বলে জানা গেছে।

সোমবার(৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টার দিকে দেওভোগ চেয়ারম্যান বাড়ি (কৃষ্ণচূড়া মোড়) এলাকার নিজ বাসায় হিরোর মৃত্যু হয়। পরে লাশ বাড়ির বাইরে এনে রেখে দেয়া হয়। মরদেহের কাছে ভয়ে কাউকে যেতে দেখা যায়নি। সারারাত মরদেহটি সেখানেই পড়েছিল। তিনি ফতুল্লার দেওভোগ কৃষ্ণচূড়া এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, খাইরুল আলম হিরো মূলত সংগীতজগতে ‘হিরো লিসান’ নামেই পরিচিত। তিনি মূলত গিটারস্টি; সেই সঙ্গে ঝুটের ব্যবসাও করতেন।

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভ জানান, হিরো গত দুই বছর ধরেই স্কিনজনিত রোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে তার জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। পরে শহরের একজন প্রাইভেট ডাক্তারকে দেখালে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। এতে তার ফুসফুসে পানি জমা ছিল বলে চিকিৎসকরা জানান। চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে ওষুধ খেতে বলেন, এতেই সেরে যাবে বলে জানান তারা। কিন্তু জ্বর-সর্দি আর শ্বাসকষ্ট না কমায় তার পরিবার এর মধ্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চিকৎসকরা তাকে ভর্তি না নিয়ে পুনরায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে ছেড়ে দেন।

মরদেহ বাড়ির বাইরে এনে রেখে দেয়া হয় এবং মরদেহের কাছে ভয়ে আর কেউ আসেননি,সারারাত মরদেহটি সেখানেই পড়েছিল!

 

সোমবার তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও প্রকট হয়। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বাড়িতেই মারা যান। পরে তার মরদেহ বাড়ির বাইরে এনে রেখে দেয়া হয় এবং মরদেহের কাছে ভয়ে আর কেউ আসেননি।

সারারাত মরদেহটি সেখানেই পড়েছিল। মঙ্গলবার সকালের দিকে খবর পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশ এবং আমার টিমসহ ঘটনাস্থলে যাই।

ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম বলেন, নিহতের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সে হিরুকে উঠানো হচ্ছিল।

এর মধ্যে চালক ও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অন্যরা বলছিলেন তিনি মারা গেছেন তাকে আর ঢাকা নিয়ে কী হবে। এর পরই মরদেহ বাড়ির কাছে সারারাত ফেলা ছিল। করোনা আতঙ্কে কেউ আর কাছে আসেনি।

সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।

 

ঘটনাস্থলে যান সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আফরোজা হাসান বিভা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তফা আলী শেখ ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তাদের উপস্থিতিতে মরদেহ স্বজনদের অনুমতিক্রমে নাসিকের তত্ত্বাবধায়নে কবর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পরিবার ও বাড়ির সবাইকে আপাতত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। হিরোর লাশ যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন স্বজনদের কেউ ছিল না পাশে। বিদায় বেলায় শেষবারের মতো তার মুখটাও দেখতে পারেনি তারা।

 

ওদিকে বেস গিটারিস্ট হিরো লিসানের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার সহকর্মীদের মাঝে। নিহত হিরোর স্ত্রী ও এক বছরের এক সন্তান রয়েছে।

 

এদিকে মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হিরোর গ্রামের বাড়ী মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং-টেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া গ্রামের মোল্লা বাড়ীর স্হানীয় মসজিদ মাইকেও তার মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়।

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন