বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার প্রথম শিকার শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন

0
4
বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার প্রথম শিকার শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন

প্রকাশিত: মঙ্গলবার,১৪  ডিসেম্বর ২০২১ইং।।৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (হেমন্ত কাল)।।৯ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৩ হিজরী।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের১০ ডিসেম্বর ঘৃণ্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আল বদর ও রাজাকার বাহিনীর বর্বররা তাকে তার চামেলীবাগের ভাড়া বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়, এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশার প্রথম শিকার হন শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন।

 

১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ । রাত তিনটা। স্থান ৫ নং চামেলিবাগ, শান্তিনগর, ঢাকা। দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। কে? শাহীন দরজা খোলো। বাড়িওয়ালা ডাক্তার সাহেবের কন্ঠ। এতো রাতে হয়ত কোন বিপদে পড়েছেন। দরজা খুলে দিতেই কয়েকটি উদ্যেত রাইফেলের সামনে। হতবাক হয়ে যায় সিরাজুদ্দীন হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র শাহীন।

সিরাজুদ্দীন হোসেনকেই খুঁজতে এসেছে এরা। বাড়িওয়ালাকে বন্দুকের নলের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। সবার মুখে কাপড় বাঁধা। ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সিরাজ। প্রথমে তাঁরা নিশ্চিত হয়ে নেয় ঠিক লোকের কাছে তারা এসেছে কিনা। তারপর বলে, আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। পাঞ্জাবিটাও নিতে দেয় না। গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয় সিরাজুদ্দীন হোসেনকে।

পরদিন রায়ের বাজার-কাটাসুরের অসংখ্য গলিত লাশের মধ্যে তাঁর লাস পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তাদের দোসর আলবদর, আলসামস ও রাজাকারবাহিনীর সদস্যেরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

 

সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানিদের বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের গ্রামের বাড়ি মাগুরার শালিখার উপজেলার শরশুনা গ্রামে। তার বড় ছেলে জাহিদ রেজা নূর ও মেজো ছেলে শাহীন রেজা নূর দৈনিক ইত্তেফাক ও প্রথম আলোয় সাংবাদিকতা করেন।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তানেরা এক সময় বুঝতে পারেন তাঁদের বাবা আর কোনদিন ফিরে আসবে না। এক সময় সেটা তাঁরা মেনেও নিয়েছেন। ওদের প্রিয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি শহীদ সাংবাদিকের মা বেগম আশরাফুন্নেছা। এই বৃদ্ধা আমৃত্যু বিশ্বাস করতেন, তার ছেলে একদিন ফিরে আসবে। হয়তো পাকিস্তানের কোনো জেলখানায় বন্দি আছেন।

ছেলের বউ নূরজাহানের চোখে পানি দেখলেই তিনি বলে উঠতেন, ‘কাঁদো কেন বউ, সিরাজকে ওরা মারতে পারে না। সিরাজ তো কখনও কারো ক্ষতি করেনি। দেখো ঠিকই একদিন সিরাজ চলে আসবে।’

আট সন্তান নিয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে বিধবা হন নূরজাহান। এই শিশুদের লেখা পড়া কিভাবে চলবে, তাঁরা কি খাবে, কি পরবে-এই বিষয়গুলি ভাবিয়ে তুলতো তাকে। সিরাজ আবার ফিরে আসবে এমন বিশ্বাস থেকেই তিনি ফিরে পেতেন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। স্বাধীন দেশেও এই শহীদ পরিবারটিকে তাঁর ঢাকার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য চেষ্টা চালানো হয়েছে কয়েকবার। দোতলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে আসবাবপত্র।


সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক এর কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক। ১৯৭১ সালে তিনিও সাহসের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেন। সে সময় তাঁর ‘ ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়, ‘অধূনা রাজনীতির কয়েকটি অধ্যায়’ এবং ‘এতদিনে’ শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থানের সাক্ষ্য দেয়। ১৯৫২ সালে দৈনিক আজাদ এর বার্তা সম্পাদক থাকাকালে ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তিনি। যুদ্ধের সময় তিনি নিজ গ্রাম মাগুরার শালিখার শরশুনায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের গ্রামের বাড়ি মাগুরার শালিখার উপজেলার শরশুনা গ্রামে। এই গ্রামেই কেটেছে তাঁর শৈশব কৈশর। গ্রামের বাড়িতে তার স্মৃতি বিজড়িত টিনের একটি ঘর রয়েছে। এই ঘরেই তিনি জন্মেছিলেন। ছোট বেলা থেকে শহরে থাকার কারণে গ্রামের লোকজনের কাছে তিনি তেমন পরিচিত ছিলেন না।  তাঁর স্মৃতিকে বাচিয়ে রাখতে শহীদের গ্রামে একটি ম্মৃতি ফলক তৈরির দাবি জানিয়েছেন মাগুরার জনসাধারণ।

সিরাজের মা শহীদ জননী আশরাফুন্নেসা মারা গেছেন অনেক আগেই। স্ত্রী নূরজাহান স্বামীর মৃত্যু যন্ত্রণার পুরোটাই বুকে ধারণ করে মারা গেছেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন আর ফিরে আসেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..    

   (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1          

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন